আব্দুস শহীদ শাকির
জকিগঞ্জ সিলেট থেকে।
সিলেটের জকিগঞ্জে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে ও টানা বৃষ্টিপাতে নদ-নদী এবং হাওড়ের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী বৃদ্ধি পেয়ে বন্যায় রূপ নিচ্ছে। ইতোমধ্যে উপজেলার অধিকাংশ ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হতে শুরু করেছে।পাহাড়ী ঢল ও মুশলধারে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি ক্রমসই অবনতির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
জকিগঞ্জের কুশিয়ারা ও সুরমা নদীর পানি হু-হু করে বেড়ে যাওয়ার লক্ষাদিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সম্প্রতি কুশিয়ারা নদীর ডাইকের একাধিক ভাঙন দিয়ে প্রবল স্ত্রোতে পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছে। টানা ভারি বর্ষন ও বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যে ১২ ঘন্টা অতিক্রম হয়ে বর্তমানে ভারি বৃষ্টিপাত অব্যহত আছে। এর প্রভাবে আগামী ৩৬ ঘন্টা এ অঞ্চলে পানি বৃদ্ধিপেয়ে বন্যায়র রুপ নিয়েছে ও উপজেলার হাজারও বাড়ি-ঘর পানিতে প্লাবিত হয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যেহেতু ভারি বৃষ্টিপাত ও বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেহেতু সকলকে সতর্ক থাকার জন্য। এর সাথে গুরুত্বপূর্ণ মালামাল নিরাপদ স্থানে সংরক্ষণ, পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও খাবার সেলাইন সংরক্ষণ রাখতে বলা হচ্ছে।জকিগঞ্জে সম্প্রতি ১ম দফার বন্যায় উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রত্যান্ত এলাকার গ্রামীন রাস্তা-ঘাট, সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি অব্যাহত ভাবে বেড়ে যাওয়ার কারনে তলিয়ে গেছে। শত শত বাড়ি-ঘর বন্যার পানি ঢুকে পড়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা তাসলিম গত দু’দিন থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করে বন্যা পরিস্তিতি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে তুলে ধরছেন।নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, টানা বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে পাহাড়ি ঢলের কারনে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিবন্দী লোকজন যাতে করে নিরাপদ স্থানে যেতে পারেন এবং আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিতে পারেন এজন্য প্রতিটি ইউনিয়নে সরকারি ট্যাগ অফিসার নিয়োজিত করা হয়েছে।
জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষণিক ভাবে পানিবন্দী লোকজনদের খোঁজ-খবর নেয়া সহ তাদেরকে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বন্যায় বরাদ্দ পাওয়া ত্রাণ সামগ্রী প্রতিটি আশ্রয় কেন্দ্র ও পানিবন্দী এলাকায় বিতরণ করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত সুরমা কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। পানি কমার সাথে সাথে ডাইক মেরামতের কাজ শুরু হবে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক ও রাস্তা-ঘাটের ক্ষয়ক্ষতি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে জানানো হয়েছে, সেই আলোকে মেরামত করা হবে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা জানান।
এছাড়াও পবিত্র হজ্জে সৌদিআরবে অবস্থানরত সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) আসনের সাংসদ মাওলানা হুছামুদ্দীন চৌধুরী সার্বক্ষণিক ভাবে জকিগঞ্জের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কুশিয়ারা ডাইক ও রাস্তা-ঘাট দ্রুত সংস্কার মেরামতের জন্য সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে অবহিত করছেন তিনি।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব লোকমান উদ্দিন চৌধুরী সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির খোঁজ-খবর নিচ্ছেন এবং আজ সরেজমিনে বন্যা দুর্গত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন তিনি। এছাড়াও জকিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাবেদ মাসুদ বন্যা কবলিত বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করছেন এবং পুলিশের পক্ষ থেকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আলাদা টিম গঠন করা হয়েছে যাতে করে পানিবন্দী লোকজনদের নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা যায়।