বিশেষ প্রতিনিধি:
নীলফামারীর জলঢাকায় শৌলমারী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের গোপালঝাড় তিস্তা পাড়ের সরকারী ১নং খাস খতিয়ান জমির জলধারার মাঝপথে অবৈধভাবে পুকুর খনন করায় হুমকির মুখে প্রায় ৩০০ একর জমি। এ পুকুর খননের ফলে বর্ষাকালে ফসলী ধান পানিতে ডুবে যাওয়ার আশংকা করে কৃষকেরা। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীরা গণস্বাক্ষর সহ জেলা প্রশাসক ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর দুইটি আলাদা আলাদা অভিযোগ দায়ের করেছেন। অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,শৌলমারী ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের গোলাপঝাড় (চরভরট) মৌজার ১ নং খাস খতিয়ানের ৫২৩২ দাগের তিস্তা চর এলাকার জলধারার পানি রোধ করে পুকুর খনন করে ওই এলাকার প্রভাবশালী তছির উদ্দিনের ছেলে আব্দুল বাতেন (শাহিন) ও তার ভাইয়েরা। তারা প্রভাব খাটিয়ে সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে পুকুর খনন করে। এই পুকুরের আশেপাশের প্রায় ৩০০ থেকে ৪০০ একর জমির ফসল পানি ডুবে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পুকুরটির ফলে প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে স্থানীয়রা জানায়।পুকুরটি ভেঙ্গে দিয়ে পূর্বের মতো পানি যাওয়ার ব্যবস্থা করার দাবি স্থানীয়দের। অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়,ওই অভিযুক্ত প্রভাবশালীরা সরকারি খাস খতিয়ানের অন্যের দখলীয় জমি জোরপূর্বক দখলে নিয়ে অনেককে সর্বস্বান্ত করে আসছে। এ পর্যন্ত প্রায় ১২০ শতাংশ জমি দখলে নিতে সক্ষম হয়েছে। তারা কবুলিয়ত ছাড়া সরকারি খাস খতিয়ানের প্রায় ১০ বিঘা জমি দখলে রেখেছে। এমনকি জমি দখলে নিয়ে জমি অন্যের কাছে জমি বিক্রিও করতেছে। সরেজমিনে দেখা যায়,শৌলমারী ইউনিয়নের তিস্তা নদীর চর এলাকার একটি জলধারার মাঝপথে প্রায় ৩ বিঘা জমির উপর পুকুর খনন করা হয়েছে। পুকুরের আশেপাশের জমির পানি হাবুডাবু খাচ্ছে। এমতাবস্থায় অল্প কিছু বৃষ্টি নামলেই তলিয়ে যেতে পারে পুকুরের আশেপাশের ফসলি জমি। কারন,পানি নিষ্কাসনের প্রধান রাস্তার মধ্যপথে ভ্যাকু গাড়ি দিয়ে পুকুরের বাধ তৈরি করেছে। এতে ঝুঁকি তৈরী হয় আবাদি জমিগুলোর উপর। পরে স্থানীয় প্রশাসনের চাপে পানি নিষ্কাসনের জন্য হাল্কা পাইপ বসিয়েছে। যা পানির জলধারা বজায় রাখা সম্ভব না। সরেজমিনে ভুক্তভোগীরা অভিযোগে জানায়,আব্দুল বাতেন শিক্ষানবিশ উকিল ও তার এক ভাই নীলফামারী কোর্টের মুহুরি হওয়ায় আইনকে তোয়াক্কা না করে সরকারি খাস জমির পাশাপাশি দলিলকৃত জমি দখলে নেওয়ার পায়তারা করে আসছে। এরা সকলে মিলে প্রতিবেশী পশর উদ্দিনের ৩০ শতক,কল্পনা বেগমের ৫০ শতক,জয়নুদ্দিনের ১০ শতক,আবুল কাসেম ও আনিচুর রহমানের জমি ৩০ শতক জমি প্রভাবশালীরা দখলে নিয়েছে। এ বিষয়ে স্থানীয়রা বলেন,সরকারি জমিতে কি ভাবে তারা পুকুর খনন করেন? এদেশে কি আইন আদালত নাই? তারা হিংসাত্মক ভাবে পুকুর খনন করেছে। যাতে জমিতে আবাদ সুবাদ না হয়। জমির বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন,ওই খাস খতিয়ানে প্রায় ৬৮ একর জমি আছে৷ কবুলিয়ত বিষয়ে আমার জানা নাই। তবে ওই এলাকার আব্দুল বাতেন নামে একজন উকিল আছে,তার সাথে যোগাযোগ করেন একটা ব্যবস্থা হবে।শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নুরুজ্জামান বলেন,উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে আমি,তহশিলদার ও চৌকিদার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেছি পানি যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে পুকুর খনন করেছে। আমরা পানির রাস্তা বের করে দিতে বলেছি। আজ-কাল করে,পরে একটা ছোট পাইপ বসাই দিয়েছে৷ ওই পাইপ দিয়ে পানি কি ভাবে কাটবে? পুকুরটি খনন করায় প্রায় ৩০০-৪৪০ একর জমি এখন হুমকির মুখে। এবার হয়তো বৃষ্টি তেমন হয় নাই,তাই ফসল হয়েছে। গতবারের মতো বৃষ্টি হলে প্রায় ৭০০ কৃষক এক সাটাক ধানও পাইতো না। সব পানিতে তলিয়ে যেতো? পুকুর খননকারী বাতেন বলেন,পুকুরের আশাপাশে প্রায় সব জমি আমাদের দখলে। সরকারের কাছে লিজ নিয়ে পুকুর খনন করেছি। পানি বের হওয়ার জন্য পাইপ বসে দিয়েছি। এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) এ. বি. এম. সারোয়ার রাব্বী বলেন,এ রকম একটা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।