বিশেষ প্রতিনিধি: সুনামগঞ্জ জেলা বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা গত ০৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার উপর আওয়ামী লীগের হামলা,মারধর এমনকি বিশ্বম্ভরপুর হাসপাতালে ছাত্র-জনতা চিকিৎসা নেবার সময় ভেতরে ঢুকে মারপিটের ঘটনায় ৪০ জনের নামল্লেখ করে ২৫০ জনকে আসামী করে বৃহস্পতিবার বিশ্বম্ভরপুর থানায় মামলা হয়েছে।
শুক্রবার এই মামলার নথি আদালতে পাঠিয়েছে বিশ্বম্ভরপুর থানা পুলিশ। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের অব্যাহতিপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সম্পাদক রফিকুল ইসলাম তালুকদারকে মামলায় প্রধান আসামী করা হয়েছে।
অন্য আসামীরা- বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বেনজির আহমদ মানিক, সাধারণ সম্পাদক নুরুল আলম সিদ্দিকী, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাত মরিয়ম, সলুকাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আলম সিদ্দিকী (ত্বপন), ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিলন মিয়া ও পলাশ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুহেল মিয়া। এছাড়া দলীয় নেতা চিনাকান্দির খালেদ মাহমুদ তালুকদার, নতুনপাড়ার শাহ দিলুয়ার হোসেন দিলু, নতুনপাড়ার মামুনুর রশিদ, বোয়ালিয়ার হুমায়ুন কবির পাপন, ছাতারকোনা’র মোশারফ হোসেন ইমন, নতুনপাড়ার আলমগীর আলম, বাঘগাঁওয়ের কামরুজ্জামান কামরুল, পদ্মনগরের অলিমান তালুকদার, ইসলামপুরের নজরুল ইসলাম, পলাশের আবুল কালাম আজাদ, মল্লিকপুরের রুকন মিয়া ও ছইফুল আমিন, মুক্তিকলার আব্দুল কাহার, চান্দার গাঁওয়ের আবুল খায়ের, বাগাঁওয়ের হুমায়ুন কবির মৃদা, বোয়ালিয়া’র বাবুল মিয়া, মুক্তিখলার রাজু মিয়া, ফতেহপুর রঞ্জিত চৌধুরী রাজন, ডলুরা’র ফুল মিয়া, পুরান মুক্তিখলার এমদাদুল ইসলাম, পিরিছপুরের আব্দুল হেকিম, মাঝাইরের সাজ্জাদুর রহমান সাজু (মাস্টার), ছয়হাড়া’র মাসুম, জিনারপুরের সোহেল পাঠান, মিয়ারচরের লুৎফুর রহমান নাইম, গোবিন্দনগরের হেলিম শেখ, পুকুরপাড়ের আমান উল্লা, কাছিরগাতির আব্বাস মাস্টার, মুক্তিখলার সোলেমান তালুকদার, কৃষ্ণনগর সেলিম আহমদ (মিঠু), জিনারপুর মহরম আলী, ছাতারকোনা ছাদেক মেম্বার ও মুক্তিখলার ফয়জুল ইসলাম। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামী উল্লেখ করা হয়েছে ২০০ থেকে ২৫০ জন।
মামলার বাদী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক উপজেলা সদরের মল্লিকপুর গ্রামের এনামুল হকের ছেলে মো:মোস্তাকিম হাসান শিপু বললেন, ০৪ আগষ্ট শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা সদরের দিকে যেতে থাকি আমরা। বিশ্বম্ভরপুর থানার সামনে যেতে না যেতেই, বিল্ডিং’র গোড়া থেকে ইঁট,পাথর,রড, দা, রামদা,লাঠিসোঁটা, এমনকি বন্দুক নিয়ে আমাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গ সংগঠনের নেতা কর্মীরা। প্রায় শতাধিক ছাত্র-জনতা এখানে আহত হন। আহতরা বিশ্বম্ভরপুর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে গেলে ও তারা হামলা করে মেডিকেলের নার্স সহ আহত ছাত্র-জনতার উপর । হাসপাতালের এবং থানার সামনের সড়কের ভিডিও ফুটেজ দেখলে বুঝা যাবে কত অমানবিক আক্রমণ করেছেন আওয়ামী লীগ গত ৪ আগষ্ট ছাত্র-জনতার উপর। আমাদের অনেক ছাত্র কর্মী এখনো বিভিন্ন হাসপাতালে আছে। গত দিনের ভিডিও ফুটেজ দেখে আমরা এই মামলা করেছি।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ভিডিও দেখেই ব্যবস্থা নেবে বলে মনে করছি আমরা।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন চেয়ারম্যান- অ্যাড.ছবাব মিয়া বলেন, অব্যাহতি প্রাপ্ত উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে।
হাসপাতালে ডুকে চিকিৎসা নিতে যাওয়া আহত ছাত্রদেরও পিঠিয়েছে তারা। ভিডিও ফুটেজ দেখে দোষীদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আবার নির্দোষ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেটিও খেয়াল রাখতে হবে। তিনি আর ও বলেন, স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পরও কিছু ঘটনা বিশ্বম্ভরপুরে ঘটেছে যা অনাকাঙ্খিত। বিএনপি কিংবা আমাদের অঙ্গ-সংগঠন কেউ এসব ঘটনায় জড়িত নয়, কিংবা কোন ছাত্ররা এসব ঘটনার সঙ্গে জড়িত নয়। যারা এসব অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটিয়েছেন তারাও ভালো করেনি।
বিশ্বম্ভরপুর থানা অফিসার ইনচার্জ ওসি আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, বৃহস্পতিবার ছাত্র-জনতার পক্ষে মামলাটি দায়ের করা হয়েছে। শুক্রবার সকালেই এর নথি সুনামগঞ্জের আমল গ্রহণকারী আদালতের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এই ঘটনায় এখনো কেউ গ্রেপ্তার হয় নি।
প্রসঙ্গত. ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনে সুনামগঞ্জ জেলায় বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায়ই সংঘর্ষ এবং ছাত্র-জনতার উপর হামলার ঘটনা বেশি হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ও ওখানেই বেশি ভাংচুরের ঘটনা ও ঘটেছে।