দৈনিক বিকাল বার্তা ডেস্ক:
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৮তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে অদ্য ১৫ নভেম্বর (শুক্রবার) বিকেলে রাজধানীর শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। গণসংহতি আন্দোলনের আয়োজনে সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, তিন মাস হয়ে গেছে, মানুষ আর বেশি দিন সময় দিবে না আপনাদের। দেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তা, দ্রব্যমূল্য, আয়-ব্যয়ে অসংগতি এসব বিষয় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনা করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী।
তিনি বলেন দেশে জানমালের নিরাপত্তা বিধান হয়নি এখনো উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি আর-ও বলেন, ‘এভাবে চলতে পারে না। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক, হিন্দু-মুসলমান, বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান, বাঙালি-চাকমা-মারমা-আদিবাসী, নারী-পুরুষ অথবা যে রাজনৈতিক বিশ্বাস কিংবা জীবনচর্চার হোক না কেন, প্রত্যেক নাগরিকদের খুব দ্রুত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এই সরকারের তিন মাস হয়ে গেছে। অথচ এসব সমস্যার সমাধান হয়নি। বরং মানুষ আর বেশি দিন সরকারকে সময় দেবে না।
অবিলম্বে সব ক্ষেত্রে মানুষ অগ্রগতি দেখতে চায়। জানমালের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেন। দ্রব্যমূল্য কমান, অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেন। আর সমস্ত রাজনৈতিক দল, শিক্ষার্থী, শ্রেণী-পেশার অংশীজনকে নিয়ে একসঙ্গে বসে এ রাষ্ট্রের রূপান্তর-সংস্কার, নতুন বন্দোবস্ত আর আগামী দিনের নির্বাচন, তার রোডম্যাপ ঘোষণা করেন।’ এটাই এখন দেশের মানুষ চায় উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘মানুষের চাওয়া অনুযায়ী আপনাদের চলতে হবে। একটি বিষয় পরিষ্কার করে মনে রাখবেন। দেশের মানুষ আপনাদের সহায়তা করেছে, সমর্থন করেছে। কিন্তু নির্বাচন পর্যন্ত আপনাদের সমর্থন করবে। কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে হবে। কিন্তু না হলে জনগণ আপনাদের নিঃস্বার্থভাবে সমর্থন দেবে না।’
জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘যারা আমাদের সন্তানদের হত্যা করেছে, এবং দীর্ঘ ১৫ বছর গুম-খুন হত্যা, লুটপাট করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার করেছে বিভিন্ন দেশে, এদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। আর অর্থনৈতিক সংকট, দ্রব্যমূল্য, আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের সংগতি নেই, খেটে খাওয়া মানুষ বিপদে আছে এসব সমস্যা সমাধান করা আপনাদের দায়িত্ব।’
মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, দেশের মানুষ যখন বিপদে পড়েছে, জাতীয় সংকটে অথবা জাতীয় সম্ভাবনার দ্বারপ্রান্তে গিয়েছে, তখন দিশা খোঁজা হয়েছে অতীতের আকাশে। কেননা সামনের দিকে এগোতে চাইলে পেছনের দিকেই তাকাতে হয়। এই জনপদের ইতিহাসে মওলানা ভাসানী হচ্ছেন এমন একজন রাজনৈতিক ব্যক্তি, এমন এক নেতৃত্ব, যিনি প্রতিটি সন্ধিক্ষণে জাতিকে সামনের দিশা দেয়িছেন।
জোনায়েদ সাকি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সমালোচনা করার পাশাপাশি ভারতের প্রতি বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘ভারতকে বলি বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। এ দেশের মানুষ রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারের পত্তন করেছে। আপনারা আমাদের পাশে ছিলেন, ভারতের জনগণের কাছে আমরা এ কারণে কৃতজ্ঞতা রাখি। কিন্তু বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব আমাদের স্বাধীনতা এই দেশের মানুষকে গোলামকে ক্ষমতায় রেখে যদি নস্যাৎ করতে চান, দেশের মানুষ সেটা মানবে না। দেশের মানুষ এ দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রস্তুত আছে। মওলানা ভাসানী দিশা দিয়ে গিয়েছিলেন।’
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে গণসংহতি আন্দোলনের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান, রাজনৈতিক পরিষদের নেতা হাসান মারুফ, রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য দেওয়ান আব্দুর রশিদ নিলু, রাজনৈতিক পরিষদের নেতা মনির উদ্দিন পাপ্পু, সম্পাদকমণ্ডলীর নেতা বাচ্চু ভূঁইয়া প্রমূখ বক্তব্য দেন। সমাবেশ শেষে একটি শোভাযাত্রা বের হয়। শাহবাগ থেকে শুরু করে এটি কাঁটাবন, বাটা সিগন্যাল, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট হয়ে হাতিরপুলে গিয়ে শেষ হয়।