সিলেট থেকে বিকাল বার্তা প্রতিবেদক >> স্বৈরাচার আওয়ামী সরকারের দোসর ভূমি খেকো মাফিয়া ডন কয়েক বছরে জিরো থেকে কোটিপতি রতন মনির বিরুদ্ধে ৪৫টি দলিলের জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে প্রায় কয়েক কোটি টাকা সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে রয়েছে অনিয়ম দুর্নীতির বিস্তর অভিযোগ। নামে-বেনামে গড়ে তোলেছেন বিলাসবহুল গাড়ি-বাড়ী, মার্কেট সহ অঢেল সম্পত্তি। একসময় ভাত আনতে পান্তা পুরায় তার কথিত জীবনে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শুরু হয় তার উত্থান। বিগত ১৫ বছর মাফিয়া ডন হয়ে রাজত্ব কায়েম করে এখন তিনি জিরো থেকে শত কোটি টাকার মালিক।
সরেজমিন অনুসন্ধানে স্থানীয়দের কথা বলে জানা গেছে, শাহপরান (র.) থানা এলাকার ইসলামপুর দেবপুর (নাথপাড়া) ২৩৩/ই, উত্তরা আ/এ, রজনী নিবাসের বাসিন্দা মৃত রসময় মোহন্তের ছেলে শ্রী রতন মনি মোহন্ত জাল-জালিয়াতি কাগজাদি তৈরী করে কয়েক বছরে হয়ে উঠেন কোটি কোটি টাকার মালিক। জাল-জালিয়াতি কাগজাদি তৈরী করতে তাকে সহযোগীতা করতেন সিসিক’র ৩২ নং- ওয়ার্ডের আঠালু আবাসিক এলাকার বাসিন্দা সিলেট বিভাগীয় স্যাটেলমেন্ট অফিসের সার্ভেয়ার পরিচয়ধানকারী কথিত প্রতারক জীবন মজুমদার। এই সব অপরাধীরা একত্রে মিলে তারা নাথপাড়া এলাকার অনেক সহজ সরল লোকদের পাশাপাশি আত্মীয় স্বজনকেও রেহাই দেননি। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকার সহায় সম্পত্তি। তাদের হাত থেকে রেহাই পায়নি দেবোত্তর সম্পত্তি। আওয়ামী লীগ সরকারের কতিপয় অসাধু নেতাকর্মীদের হাত করে তদবির বাণিজ্য চালিয়ে অল্প দিনে বনে যান আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। শুরু করেন ভূমি ক্রয়-বিক্রয় সহ ত্রাসের রাজত্ব। হামলা-মামলা ও নির্যাতনের ভয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে নারাজ। যে বা যারা মুখ খুলতে যায় তাদের কপালে জুঠে হামলা-মামলা, নির্যাতন নিপীড়নের ষ্টিম রোলার। সম্প্রতি স্থানীয় এক সংবাদকর্মীকে অপহরণ করে নির্যাতন শেষে গুম করার অপচেষ্টা চালানোর পর অনূসন্ধ্যানে বেরিয়ে আসে এসব ভয়াবহ চাঞ্চল্যকর তথ্য।
স্থানীয় নাথপাড়া এলাকার সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র এই প্রতিবেদক’কে নিশ্চিত করেছেন, রতন মনি মোহন্তের যাতাকলে পড়ে একাধিক পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে। স্থানীয় এলাকায় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের নিয়ে গড়ে তুলেছে সিন্ডিকেট লাঠিয়াল বাহিনী। এদের ব্যবহার করে টিপসই দস্তগত নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন টেবিলে অভিযোগ দাঁড় করিয়ে রাখে। ভূমি সংক্রান্ত বিষয়াদি নিয়ে ইতিমধ্যে তার রোষানলে পড়ে সমাজচ্যুত এক ঘরে করে রেখেছে বেশ কয়েকটি পরিবারকে। যা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সামীল। দীর্ঘদিন থেকে তারা এক ঘরে অবস্থায় বসবাস করছেন। তারা হলেন- বিষু দেবনাথ, রনজিত দেবনাথ, ভুবেন্দ্র দেব নাথ, অশোক দেব নাথ এর তিন ভাই, বাবুল দেব নাথ ও অরুন নাথ এর পরিবার।
২০০৭ সাল থেকেই শুরু হয় তার এই অসামাজিক কুসংস্কার কৃত্বিকলাপ। প্রাণভয়ে এসকল পরিবার মুখ খুলতে রাজি নয়। তার এই কর্মকান্ডে উৎসাহ জোগান একই এলাকার আরও দুই তিনজন প্রভাবশালী জনৈক ব্যক্তি। স্থানীয়রা বলছেন আইনত সুষ্ট তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল।
অনূসন্ধ্যানে জানা যায়, রতন মনি মোহন্তের ডান হাত হলো সুনামগঞ্জ জেলার জনতা বাজার এলাকার দিরেন্দ্র দেব নাথ নয়ন। কৌশলে রতন মনি মোহন্ত অনেক সহায় সম্পত্তি নয়নের নামে পাওয়ার অফ অ্যাটর্নি দিয়ে ক্রয়-বিক্রয় করিয়েছেন। পাহাড় (টিলা) রকম ভূমিও বিক্রয় করেছে ওই মাফিয়া চক্র। নির্বিচারে পাহাড় (টিলা) কেটে ধ্বংসজজ্ঞ চালিয়েছে। বিনষ্ট করেছে পরিবেশ। অথচ ৩-৪ বছর পূর্বে ওই নয়ন টিলাগড় এলাকায় দর্জি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। বর্তমানে সেও এখন অঢেল সম্পত্তির মালিক। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সুষ্ট তদন্ত করলে এই রাঘব বোয়ালদের সকল আলামত বেরিয়ে আসবে। যদিও পৃথক তদন্তে ৮টি ও ৩৭টি দলিলের জমির শ্রেণী পরিবর্তনের হদিস দুদক তদন্তে বেরিয়ে আসলেও এখনো সুচতুর শিয়ালের বুদ্ধির কাছে বাঘ-সিংহ ধরাশায়ি।
এদিকে বিগত ২২/০২/২০২২ইং- তারিখের একটি এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), সমন্বিত জেলা কার্যালয় সিলেট এর সহকারী পরিচালক মোঃ আশরাফ উদ্দিন তদন্ত কার্যের প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করেন শ্রী রতন মনি মোহন্ত ৮টি দলিলে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে ৩১,৪৩,১০২/৪০ (একত্রিশ লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার একশতদুই টাকা চল্লিশ পয়সা) সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ধারা-৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৭১।
অপর আরেকটি তদন্তে ৩/১০/২০২৩ ইং তারিখে তদন্তকারী কর্মকর্তা উপসহকারী পরিচালক মোঃ আল-আমিন তিনি তার তদন্ত কার্যের প্রাথমিক তথ্যে উল্লেখ করেছেন প্রতারণামূলক ভাবে শ্রী রতন মনি মোহন্ত অসৎ উদ্দেশ্যে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ৩৭টি দলিলে জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে সরকারের সর্বমোট ৮০,২৭,৩৬৩/- (আশি লক্ষ সাতাশ হাজার তিনশত তেষট্টি) টাকা সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। ধারা- ৪০৬/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/ ৪৭১ দন্ডবিধি অপরাধে অভিযুক্ত। কিন্তু রহস্যজনক হলেও সত্য যে, রতন মনি মোহন্তের সর্বসাকুল্যে কয়েক বছরে গড়ে তোলা পাহাড়সম অঢেল ধন-সম্পদের হিসেব দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এড়িয়ে গেছে। অদৃশ্য কারনে বিলাসবহুল বাড়ী-গাড়ি, মার্কেটসহ কোটি কোটি টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স আজো ধামাচাপা পড়ে রয়েছে। আওয়ামী স্বৈরাচারী সরকার পতনের পর সে দেশত্যাগ না করলেও বীর দর্পে প্রকাশ্যে ঘুরাফেরা করছে। আরেকটি সূত্র নিশ্চিত করেছে রতন মনি মোহন্ত বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের সময় সেই আন্দোলনকে প্রতিহত করতে গোপনে কোটি কোটি টাকা বাজেট ব্যয় করেছেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী ও প্রশাসনের বিভিন্ন মহলে। এতকিছু পরেও প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গলী দেখিয়ে বিশাল তবিয়তে থেকে যাচ্ছে সেই আওয়ামী স্বৈরাচার দোসর ভূমি খেকো চক্রের গডফাদার রতন মনি মোহন্ত।