নিজস্ব প্রতিনিধি; উন্নয়ন কে না চায়? এমন প্রশ্নের উত্তর সবার জানা। দেশের সর্বস্তরের মানুষ এক কথায় বলে দেয়, অবশ্যই 'চাই'। সেই উন্নয়নকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর কতিপয় অসাধুরা বনে যাচ্ছেন কালো টাকার কুমির। নদীরপাড়ের বালু লুট করছেন বালুখেকোরা। দেশের উন্নয়নের বিভিন্ন স্থাপনা তৈরি করতে সবার আগে প্রয়োজন জনবল। এরপর রড, সিমেন্টসহ বালু। প্রাকৃতিক সম্পদ এ বালু আসে বিভিন্ন নদ নদী থেকে। একটি স্থাপনা তৈরি করতে যে পরিমাণ বালুর প্রয়োজন তার পঞ্চাশ গুন উত্তোলন করে বিক্রি করা হয় বিভিন্ন মহলের কাছে। বালু উত্তোলনকারীরা কতৃপক্ষকে বোঝায়, আমাদের যে পরিমাণ বালু প্রয়োজন। তা এখনো উত্তোলন সম্ভব হয়নি। বাস্তবে কি তাই? আর এসব বালু আনা নেওয়ার অন্যতম মাধ্যম এ ড্রাম ট্রাক।
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার 'খানসামা- দারোয়ানী' আঞ্চলিক মহাসড়কে ১৭ বছর ধরে পাবলিক বাসের চাকা না ঘুরলেও, ঘোরে শুধু ১০ চাকার শত শত ড্রাম ট্রাক। এসব ট্রাক পার্শ্ববর্তী বীরগঞ্জ উপজেলার আত্রাই নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করে চলছে অবাধে।
বালু ভর্তি ট্রাক চলাচলের কারণে রাস্তাটি সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এ সড়কটি দিয়ে সারাদিন বালু ভর্তি ট্রাক চলার কারণে বালু উড়ে আশপাশের দোকানসহ পথচারীদের চোখে মুখে ঢুকে পড়ছে। সেই সাথে উড়ে আসা বালু রাস্তার কিনারে এসে জমা হচ্ছে। পরে সেই ছোট বালুর স্তূপের কারনে মোটরসাইকেল আরোহীরা হচ্ছেন দুর্ঘটনার শিকার। শুধু কি তাই? বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথিমধ্যে বেপরোয়া এ গাড়ির অতি দ্রুত চলাচলের কারনে ভয়ে আঁতকে উঠছে শিক্ষার্থীসহ অভিভাবকগণ।
বিরামহীন ড্রাম ট্রাকের আবাধ চলাচলে, রাস্তার বেশির ভাগ অংশ খানাখন্দ হয়ে জনসাধারণের ভোগান্তিতে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়! প্রতি নিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। এছাড়াও নীলফামারীর সদর ও দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার সংযোগস্থল নতুন ব্রিজের কাজ চলমান হওয়া সত্ত্বেও পাশে ঝুঁকিপূর্ণ সেতু দিয়েও অবাধে চলছে এ ড্রাম ট্রাক। এলাকাবাসী মনে করেন, যে কোন মুহূর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। সারাক্ষণ বালুভর্তি ট্রাকের চলাচলের কারণে ধুলোয় অতিষ্ঠ এ অঞ্চলের মানুষ। অসহ্য ধুলার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনেকে। এ সড়কে ধুলাবালি এতই বেশি যে একটা ড্রাম ট্রাক গেলে সামনে আর কিছুই দেখা যায় না। এ সড়কটির ধুলাবালি ঘন কুয়াশাকেও হার মানিয়েছে। ট্রাক চলাচলের কারণে ঘন ধুলাবালিতে দিনকে যেন রাত বলে মনে হয়। রাস্তার ধারে বসবাসরত সাধারণ মানুষ ও দোকানদারদের চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। ধুলোবালিতে রাস্তার পাশে গাছের পাতার রং সবুজ থেকে লাল হয়ে গেছে। এলাকাটি ধুলার রাজ্যে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের এ নিয়ে নেই কোনো ‘মাথাব্যাথা’।
এ ট্রাক বন্ধ করতে ইতিমধ্যে প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং, মাসিক মিটিং এ রেজুলেশন, ভ্রাম্যমাণ বসিয়ে জরিমানা করলেও তা এখনো বন্ধ হয়নি। এতেই বোঝা যায় যে, এখানে অদৃশ্য শক্তি কাজ করে। সাংবাদিকগণ একাধিক সংবাদ প্রকাশ করলেও দুই অথবা তিন দিন বন্ধ থাকে এরপর পুনরায় চালু হয়। বেপরোয়া এ ড্রাম ট্রাকের অত্যাচারে অতিষ্ট এলাকাবাসী। সাধারণ জনতা চায় এর স্থায়ী সমাধান। কিন্তু কে করবে এর স্থায়ী সমাধান?
নাম বলতে অনিচ্ছুক ড্রাম ট্রাকের এক চালক বলেন, 'আমরা মহাজনের গাড়ি চালাই। আমি কর্মচারী তাই মালিক যে পয়েন্ট থেকে বালু আনতে বলে আমি সেই পয়েন্ট থেকে বালু এনে যেখানে দিতে বলে সেখানে দেই।'
এ বিষয়ে জহুরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, 'আমিও অনেক আন্দোলন করেছি ড্রাম ট্রাক বন্ধের ব্যাপারে কিন্তু কেউ কোন আমলে নেয়নি। আমি এ ট্রাক বন্ধের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেই যাব।'
কলেজ ছাত্র সোহেল জানান, 'এদের বেপরোয়া ড্রাইভিং এর কারনে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পরিপক্ক ড্রাইভার ছাড়াই চলছে ড্রাম ট্রাক। অতি দ্রুত সমাধান করা উচিত।'
খানসামা সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক জামিউস সুফি সরকার জানান, 'রাতের বেলা পরিবার নিয়ে ঘুমাতে পারি না। দিনের বেলার কথা বাদই দিলাম। যেহেতু বীরগঞ্জ এলাকার বালুঘাট সেহেতু ড্রাম ট্রাকগুলো বীরগঞ্জ হয়ে দশমাইল হাইওয়ে যেতে পারে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নেক দৃষ্টি কামনা করছি।'
খানসামা প্রেসক্লাবের সভাপতি মোজাফ্ফর হোসেন বলেন, 'বালু বোঝাই দশ চাকার ড্রাম ট্রাক সমানতালে রাস্তা দিয়ে চলাচল করছে। ট্রাকে থাকা ভেজা বালুর পানি দিয়ে পুরো রাস্তা ভিজে যাচ্ছে। এতে দুর্ঘটনার আশংকা নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পথ চলতে হচ্ছে।'
ইউপি সদস্য এনামুল হক বলেন, 'আমি শুরু থেকে এটার প্রতিবাদ করে এসেছি। আমাদের রাস্তাগুলো এ ঘাতক ট্রাক নষ্ট করে দিচ্ছি পাশাপাশি দুর্ঘটনা হচ্ছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।'
ড্রাম ট্রাক অবৈধ আখ্যা দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তাজ উদ্দিন বলেন, 'আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রক্রিয়াধীন।'
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ