এম হোছাইন আলী (কুতুবদিয়া প্রতিনিধি)
কয়েক মাস পর মালয়েশিয়া থেকে বাড়ি ফেরার কথা ছিল আরাফাত হোসেনের। প্রত্যাশা-দেশে ফিরে একটি বাড়ি তৈরি করবেন। কিন্তু সেই আশা নিমিষেই ভেস্তে গেল। ফিরেছেন ঠিকই- তবে লাশ হয়ে।
গত শনিবার (২৯-মার্চ) সকাল ১১টায় কুতুবদিয়ার নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায় তাঁর নিথর দেহ। এর আগে শুক্রবার রাতে মালয়েশিয়া বিমানবন্দর থেকে দেশে আনা হয় তাকে।
প্রবাসী নিহত আরাফাত উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের ঘাটকুল পাড়ার সালেহ আহমেদ ছেলে।
তথ্য বলছে, গত (৭-মার্চ) বিকেলে মালয়েশিয়ায় গোয়া মাচা ক্যাংথেংস্থ একটি বাজারে যাওয়ার পথে নিখোঁজ হন আরাফাত। বিভিন্ন স্থানে তল্লাশির প্রায় চারদিন পর সেখানকার একটি জঙ্গল থেকে প্রবাসী কিছু বাঙালির সহযোগিতায় তার মরদেহ উদ্ধার করেন মালয়েশিয়ান পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকে একটি চাকুও উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় পরিবার সূত্র।
এই ঘটনায় নিহত আরাফাতের প্রতিবেশী প্রবাসী ইবনে আমিন ও ইয়া আমিনকে আটক করেছিল পুলিশ। তবে কোনো এক রহস্যজনক কারণে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
নিহতের পরিবার সূত্র জানায়, ওই ইউনিয়নের ঘাটকুল পাড়ার নুরুল সুলতানের ছেলে নুরুল আবছার, নুরুল আমিন, ইবনে আমিন, ইয়া আমিন ও রুহুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছে। সে সুবাদে আবছার প্রায় সময় বিভিন্ন কৌশলে কুতুবদিয়া থেকে লোকজন নিয়ে যায় মালয়েশিয়ায়।
তদ্রূপ বিগত দেড় বছর পূর্বে নিহত আরাফাতের ভাই বেলালকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দেয়। পরে যাবতীয় খরচ বাবদ ধার্যকৃত ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে নগদে দেড় লক্ষ ও ব্যাংকের মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণ করে নুরুল আবছার।
সূত্র আরো জানায়, এর কিছুদিন পর ৪ লক্ষ টাকা দাবি করলে নিহতের ভাই বেলাল ও নুরুল আবছারের মধ্যে বাকবিতণ্ডা সৃষ্টি হয়। এছাড়া জমিজমা ক্রয় সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে দু’পক্ষের মধ্যে নানা বিরোধ চলে আসছিল ।
এই আক্রোশে গত ফেব্রুয়ারিতে কুতুবদিয়া ফিরে তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে আবছার। এমন কি মালয়েশিয়াতে গিয়ে আরাফাতকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেয় তার পরিবারকে।
নিহতের পরিবারের দাবি, ১২-ফেব্রুয়ারি মালয়েশিয়ায় রওয়ানা দেয় আবছার। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই (৭-মার্চ)-২৫ নিখোঁজ হন প্রবাসী আরাফাত হোসেন। নিখোঁজের চার দিন পর আরাফাতের মরদেহের খোঁজ মেলে। দেশে প্রদত্ত হুমকি অনুযায়ী প্রবাসে গিয়ে নুরুল আবছারের নেতৃত্বে খুন করা হয় আরাফাতকে।
সঠিক তদন্তপূর্বক আরাফাতের হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন আত্মীয় স্বজন ও স্থানীয়রা।
কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আরমান হোসেন জানায়, ঘটনাস্থল মালয়েশিয়া। সেখানকার পুলিশ মরদেহ উদ্ধারের পর সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি শেষে ময়না তদন্ত করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সেখানে হত্যাকাণ্ডের কোনো রকম তথ্য উঠে আসেনি বলে জানান তিনি।
ছবি, নিহত আরাফাত হোসেন।