আবির হোসেন
কয়রা (খুলনা) থেকে :
খুলনা জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের সুন্দরবনের কোল ঘেষে লবণাক্ত নদীর পাড়ে শেষ প্রান্তে অবস্থিত এই কয়রা উপজেলা।
কয়রার ঐ পাশে দক্ষিণ বেদকাশি এর পরে আর কোন গ্রাম নেই আছে শুধু সুন্দরবন, আছে বঙ্গোপসাগর। এই অফসলী এলাকা ছিল জোয়ার ভাটার এলাকা চব্বিশ ঘণ্টায় দুইবার জোয়ার দুই বার ভাটা এভাবেই পালাক্রমে অনাবরত চলতে থাকে জোয়ার ভাটার খেলা। ঠিক সেই লোকালয়ে গড়ে উঠেছে জনপদ কিন্তু আজও হয়নি টেঁকসই ভেড়িবাঁধ, লবণ পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে সেই আশির দশকের আগ পর্যন্ত থেকে আজও যুদ্ধ করে যাচ্ছে কয়রার অসহায় প্রান্তিক মানুষ।
একটুখানি ঝড়ে একটুখানি জলোচ্ছ্বাসে ভেসে যায় কত মানুষের কষ্টে গড়া শেষ আশ্রয়তল ও সাধের বাড়ি টুকু, সেই সাথে ফুটন্ত তাজা প্রাণ। যাদের আর কখনো দেখা না মেলে, এভাবেই পানির তলে হারিয়ে যায় অসহায় কত হাজারও পরিবার।
যখন বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ শুরু হয়, সংকেতের পারত যখন একটার পর একটা উঠতে থাকে তখন এই এলাকার মানুষ সমুদ্রের আঁচড়ে পড়া ঢেউয়ের মাঝে এক নিমিষেই দেখতে পায় তাদের মৃত্যুর দোয়ার। তখন মহিলারা কোলের বাচ্চা টাকে সম্বল করে আঁকড়ে ধরে বাঁচতে চায়।তখন তাদের বিধাতার নাম নিয়ে ডাকা ছাড়া তাদের আর কোন উপায় থাকে না।
এই সব নিদারুন কষ্টের কথা প্রথম অধিবেশনে সংসদে তুলে ধরেন আর বলেন এই তৃণমূল পর্যায়ের নেতা ও খুলনা- (০৬) আসনের কয়রা পাইকগাছার এমপি রশিদুজ্জামান। তিনি বলেন লবণ পানির হাত থেকে বাঁচতে চাই।
সতীনের সাথে সংসার করা যায় কিন্তু লবণ পানির সাথে থাকা যায় না। তিনি এই প্রান্তিক অসহায় জনগোষ্ঠীর হয়ে দাবি জানান টেকসই বেড়িবাঁধ ও সুপেয় পানি।
তিনি আরও বলেন বসতি এলাকা এবং ফসলী এলাকায় পানি না থাক। সমুদ্রের পানি সমুদ্রে থাক,নদীর পানি নদীতে। তিনি সে সময় কাঁদো কাঁদো কন্ঠে একবুক কষ্ট নিয়ে এই অসহায় কয়রাবাসীর দুঃখ আর কষ্টের কথা তুলে ধরে এবং শ্যাওলা পাতার ন্যায় ভেঁসে থাকা সেই সব মানুষদের কথা বুকে ধারণ করে বললেন আমার প্রিয় নেত্রী আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছেন এ দায়িত্ব আমি সঠিকভাবে পালন করতে চাই তাতে আমার জীবন থাক আর যাক, সেটা আমার দেখার বিষয় নয়। এটি ছিল তার সংসদ অধিবেশনের প্রথম অধিবেশন। এই হৃদয় কাঁড়ানো মনোমুগ্ধকর কথা দাগ কেটেছে সেই সব প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর হৃদয়ে যারা নদীর বানে হারিয়েছে তাদের স্বজন, হারিয়েছে তাদের শেষ সম্বল। হরিহরপুর, বীনাপানি, জোড়শিং,আংটিহারা,ছোট-আংটিহারা,চরামূখা, খোলখালী,পাতাখালী জেগেছে আন্দের জোয়ার তারা এই কষ্টের কথা তাদের প্রিয় অবিভাবক এমপির মাধ্যমে তুলে ধরতে পেরে খুবই আনন্দ প্রকাশ করেন।
বীণাপানি এলাকার ষাট বছরের বৃদ্ধা নারী অর্চনা মন্ডল ও নিরাপদ মুন্ডা বলেন আমাদের আর চিন্তার কারণ নেই এবার আমাগো জনগনের জননেত্রী মা শেখ হাসিনা নিশ্চিয় একটা উপায় করে দেবেন।
মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের নয়ানী, হড্ডা গ্রামের কৃষক শহীদ গাজী ও পীরআলী সানা বলেন আমাদের প্রতি প্রত্যেকের হয়তো কিছু কিছু জমি আছে হাল চাষ করার মতো,সেটি আমরা হারি দিয়ে দশ হাজার বা বিশ হাজার টাকা পায়।কিন্তু এই জমিতে যদি আমরা লবণ পানি মুক্ত ধান চাষ, সবজি চাষ, মাছ চাষ করতে পারি তাহলে অধিক মুনাফা পাবো।
আমাদের এই মনের কথাটা বুঝতে পেরে মাননীয় সংসদ সদস্য তুলে ধরেছেন এবং আশির দশকে যে লবণ পানি বিরোধী আন্দোলন তিনি করেছিলেন এবং প্রথম অধিবেশনে আজ যে আমাদের কথা ব্যাক্ত করে আমাদের কষ্টের কথা তুলে ধরেছেন আমরা আজ খুব খুঁশি নিশ্চয় এবার ভালো কিছু হবে। আমরা এবার ইনশাআল্লাহ টেকসই বেড়িবাঁধ পাবো এবং তৃষ্ণা মিটানোর জন্য সুপেয় পানি পাবো। আমাদের আর কষ্ট করে এই ভাঙ্গা রাস্তা অতিক্রম করে আর পানি আনা লাগবে না। এভাবে বলতে বলতে কেঁদে দিলেন সত্তর দশকের বৃদ্ধ শহীদ গাজী আর আল্লাহর কাছে দুহাত তুলে দুআ করে বললেন আল্লাহ এভাবেই যেন আমাদের কথা আমাদের মাননীয় এমপি মহোদয় ভাবেন এবং আমাদের পাশে থাকেন। আমরা আল্লাহর কাছে উনার জন্য দীর্ঘ হায়াত কামনা করি আল্লাহ যেন উনাকে অনেক বছর বাঁচিয়ে রাখেন।
এইসব তৃণমূল পর্যায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মুখে মুখে এখন শুধু এমপি রশিদুজ্জামান।