বিকাল বার্তা ডেস্ক>>
আব্দুস শহীদ। তবে পরিচিত উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ নামে। শিক্ষকতা পেশা থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানের পর ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের হুইপ, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ ও ২০০৯-১৪ সাল পর্যন্ত জাতীয় সংসদের চিফ হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে টানা সাতবার এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ হাসিনা সরকারে কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন।
৫ আগস্ট ৩৩ বছরের সাম্রাজ্যের পতনের পর মৌলভীবাজার শ্রীমঙ্গলের মিশন রোডের তার বাড়িটিতে কবরের নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। অথচ কিছুদিন আগেও এই বাড়ি ছিল জেলার রাজনৈতিক প্রভাব-প্রতিপত্তি আর ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।
জানা যায়, কলেজশিক্ষক থেকে এমপি হওয়ার পর আব্দুস শহীদ দুই উপজেলাজুড়ে একচ্ছত্র প্রভাব ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমির সভাপতি ও যুবলীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। ১৬ বছরে সিদ্ধহস্তে দমন করেছেন বিরোধী মত। প্রবল ক্ষমতাধর হওয়ার কারণে তিনি এ অঞ্চলের ‘মহাদেব’ নামেও পরিচিতি লাভ করেন। ক্ষমতার প্রভাবে গত ৩৩ বছরে গড়ে তুলেছেন অঢেল সম্পদের পাহাড়। জমি দখল, দুর্নীতি আর লুটপাটের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কিনেছেন বীমা কোম্পানি, বনভূমি দখল করে প্রতিষ্ঠা করেছেন চা বাগান। গত ২৯ অক্টোবর গভীর রাতে স্যুটকেস ভর্তি তিন কোটি ১০ লাখ টাকা, বৈদেশিক মুদ্রা ও ৭৫ ভরি স্বর্ণালংকারসহ ঢাকার উত্তরার নিজ বাসা থেকে তিনি গ্রেফতার হন। তার বিরুদ্ধে উত্তরা পশ্চিম ও শ্রীমঙ্গল থানায় হত্যা চেষ্টার ৫টি মামলা রয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের ওই বাড়ি ছাড়াও কমলগঞ্জের মুন্সিবাজারে তার জৌলুসপূর্ণ বাড়ি, ঢাকার উত্তরায় সুবিশাল ফ্ল্যাট এবং যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বেগমপাড়ায় একাধিক বাড়ি রয়েছে। এলাকায় এলে শ্রীমঙ্গলের বাড়িতেই বেশির ভাগ সময় কাটাতেন। শ্রীমঙ্গল থানা থেকে ২শ মিটারের কম দূরত্বে বাড়ির নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক পুলিশি প্রহরা থাকত। ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতা এই বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে আগুন ধরিয়ে দেয়। এরপর থেকে বাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বাসাটিতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। বাড়িজুড়ে সুনসান নীরবতা।
এলকার যুবক রুহুল আমিন জানান, বাসায় কেউ থাকে না। হামলার পর প্রশাসনের উদ্যোগে সুপারি গাছ ও বাঁশের বেড়া দিয়ে মূল ফটকে বেড়া দেওয়া হয়েছে। সন্ধ্যার পর বাড়িটি অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে। ভয়ে কেউ ভেতরে যায় না।
জানা গেছে, ঠিকাদারি, প্রকল্প, সিলিকন বালু, স্থানীয় নির্বাচনে মনোনয়ন, নিয়োগ-বদলি, ভূমি লিজ বন্দোবস্ত, তদ্বিরসহ বিভিন্ন খাত থেকে তিনি কোটি কোটি টাকা আয় করেন। ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কমলগঞ্জের বাড়িতে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ বেআইনি গ্যাস পাইপলাইন নেওয়ার ঘটনা জেলাজুড়ে আলোচিত হয়। ২০১৯ সালে নন্দরানী চা বাগান দখলে নিতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে জোড়া খুনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ও শক্তিশালী করতে প্রভাব খাটিয়ে ছোট ভাই ইমতিয়াজ আহমদ বুলবুলকে কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ইফতেখার আহমদ বদরুলকে রহিমপুর ইউপি চেয়ারম্যান, আরেক ভাই মোসাদ্দেক আহমদ মানিককে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বানান। আগামীতে সংসদ নির্বাচনের জন্য বড় মেয়ে উম্মে ফারজানা ডায়নাকে পদ দেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদকের। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ দুই উপজেলার ত্যাগী নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে চা শ্রমিকনেতা ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা বলেন, ১৬ বছর আওয়ামী লীগের নামে তারা যা কিছু করেছে এই বাড়িটিতে এখন তার ছবি ফুটে ওঠেছে। উপজেলা বিএনপির (একাংশ) সাবেক সভাপতি নূর আলম সিদ্দিকী বলেন, সরকার পতনের পর সাবেক এমপির বাসায় এই হামলা অনভিপ্রেত। এর পেছনে বিএনপির কেউ ছিল না।