মোঃ মামুন আলী ঝিনাইদহ জেলা প্রতিনিধি : কাকতাড়ুয়া -কাকতাড়ুয়া হচ্ছে কাক কিংবা অন্যান্য পশুপাখিকে ভয় দেখানোর জন্য জমিতে রক্ষিত মানুষের প্রতিকৃতিবিশেষ। আবহমান কাল থেকে গ্রাম বাংলায় কৃষকরা খেতের ফসল পশু-পাখি, ইঁদুর ও মানুষের কু-নজর হতে রক্ষার কৌশল হিসেবে অদ্ভুত ও অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। যার নাম কাকতাড়ুয়া। আদিকাল হতে এ রকম এক প্রহরীকে ফসলের খেতে দেখতে পাওয়া যায়। গ্রামীণ জনপদে আধুনিক যুগেও এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের অভাব নেই! ৩১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মিসর সভ্যতায় প্রথম কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার শুরু হয়। নীল নদের অববাহিকার উর্বর পলিমাটিতে মিসরীয়রা চাষাবাদ করত তেমনই বিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা খেতের ফসল রক্ষার্থে কাকতাড়ুয়া (মানুষের প্রতীক) ব্যবহার করছেন। লম্বা দন্ডায়মান একটি খুঁটি এবং দুই বা তিন ফুট ওপরে আড়াআড়ি আরেকটি খুঁটি বেঁধে তাতে ছন বা খড় প্যাঁচিয়ে মোটাসোটা করা হয়। তারপর আড়াআড়ি বাঁধানো অংশের সামান্য ওপরে ছন বা খড়কুটো দিয়ে ডিম্বাকৃতি বা মাথার মতো বস্তু বানানো হয়। এরপর ছেঁড়া জামা বা পাঞ্জাবি পরিয়ে দেওয়া হয় এটিকে। ডিম্বাকৃতির অংশটিকে ঢেকে দেওয়া হয় মাটির হাঁড়ি দিয়ে। সেই হাঁড়িতে চোখ-নাক-মুখ এঁকে দেওয়া হয় চুন বা চক দিয়ে। যা দেখে ভয় পাওয়ার মতো একটা ব্যাপার ঘটে। এই কাকতাড়ুয়াকে ফসলি জমির মাঝখানে দন্ডায়মান রাখা হয়। অনেকের বিশ্বাস বাড়ন্ত ফসলের দিকে পথচারীর কুদৃষ্টি থেকে কাকতাড়ুয়া রক্ষা করে। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেলেও এখনো বিভিন্ন স্থানে খেতের ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন। দূর থেকে দেখলে যেন মনে হয় মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। এই কাকতাড়ুয়া দেখে খেতের পশু-পাখির উপদ্রব ঘটে না। ফলে ফসলও নষ্ট হয় না। বিশেষ করে খাদ্যশস্য জমিতে এই কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার বেশি হয়। ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশে জমিতে এটা রাখা হয়। এটি এক প্রকার ফাঁদ, যা ভয় দেখানোর উদ্দেশে তৈরি করা হয়। সনাতন ধারায় এটি মানুষের দেহের গঠনের সঙ্গে মিল রেখে পরিত্যক্ত কাপড় দিয়ে সঙের ন্যায় সাজানো হয় । এটি বাতাসে দুলতে থাকায় পাখির উৎপাত ও তাদের খাদ্য সংগ্রহ করা থেকে বিরত রাখার প্রয়াস চালানো হয়। মধ্যযুগে ব্রিটেন ও ইউরোপে বাচ্চাদের কাকতাড়ুয়া হিসেবে ব্যবহার করা হতো কিন্তু এভাবে পশুদের আটকানো যাচ্ছিল না। তখনই পাথর দিয়ে ভয়ালদর্শন কিছু কাঠামো সাজিয়ে ক্ষেতে দাঁড় করিয়ে রাখা শুরু হয়।তাদের কাজ ছিল লাঠি দিয়ে টিনের বাক্স বাজিয়ে ফসলের মাঠে ছুটে বেড়ানো যাতে এই শব্দ শুনে পাখিরা পাকা ফসলের ক্ষেতে আসতে না পারে। কিন্তু কিছুকাল পর সারা ইউরোপে প্লেগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এর ফলে ইউরোপে বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা যায়। ফসলের মাঠে পাখি তাড়ানোর জন্য যথেষ্ট বাচ্চা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন কৃষকরা পুরনো কাপড় ও খড় দিয়ে বাচ্চা ছেলের আদলে কাকতাড়ুয়া তৈরি করতে শুরু করে এভাবে শুরু হয় সভ্যতার প্রথম কাকতাড়ুয়ার প্রচলন।