মুহাম্মদ হোসাইন মাসুম
স্টাফ রিপোর্টার:চট্টগ্রাম।

ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে কেয়ার টেকার সরকার ব্যবস্থার আন্দোলন অব্যাহত থাকবে
-অধ্যাপক মুজিবুর রহমান

জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেছেন, একসময় শিক্ষা ব্যবস্থায় "ইকরা বিসমি রাব্বিকাল্লাজি খালাক" আয়াতটি ছিল।এ সরকার তা সরিয়ে ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে বাদ দিয়েছিল। আজকে শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করে সর্বনাশা সমকামীতার দিকে ধাবিত করা হচ্ছে। অন্যদিকে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে 'ডামি' নির্বাচনের মাধ্যমে ভিনদেশী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে চলেছে সরকার। জনগণ এখন এসব অপকৌশল বুঝে গেছে। যেকারণে তাবেদার সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্দোলনের মাধ্যমে কেয়ার টেকার (তত্ত্বাবধায়ক) সরকার ব্যবস্থা সংবিধানে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গিয়ে নিজেদের চিরদিন ক্ষমতায় থাকার অভিলাষে কেয়ার টেকার সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে। অবৈধ সরকার ডামি নির্বাচন দিয়ে জনগণের সাথে তামাশা দেখায়। জনগণের ভালোবাসা ও সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে জুলুমের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দূর্নীতি ও দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে হবে।

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতের উদ্যোগে ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে সহযোগী সদস্য সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি উপরোক্ত কথা বলেন।
জেলা আমীর ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য আনোয়ারুল আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সহযোগী সদস্য সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি জননেতা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক জননেতা উপাধ্যক্ষ আবদুর রব, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল ও চট্টগ্রাম মহানগরীর আমীর মাওলানা মুহাম্মদ শাহজাহান, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও মহানগরীর নায়েবে আমীর সাবেক এমপি জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী, কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও চট্টগ্রাম অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক জাফর সাদেক প্রমুখ।

জেলা সেক্রেটারীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাবেক এমপি জননেতা আ.ন.ম শামসুল ইসলাম বলেন, মানুষের তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে ইসলামের দাওয়াত দেয়াই নবীদের কাজ। নবীদের অনুসরণ করতে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে দ্বীনকে বিজয়ী করতে হবে। আর এ কাজটি সম্পন্ন করাই ঈমানের দাবী। কুরআনের উদ্ধৃতি দিয়ে স্মরণ করাতে চায়, ঈমানদারগণ আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রাম করে, আর কাফেররা শয়তানের পথে লড়ে থাকে। আল্লাহর দ্বীন কায়েম করার জন্য আমরা জামায়াতে ইসলামীতে শামিল হয়েছি। আর আল্লাহর সাথে চুক্তির আলোকে সহযোগীদের দ্বীনের পরিপূর্ণ দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যে জানমাল উৎসর্গ করতে হবে। ইসলামী আন্দোলনকে বুঝার জন্য কুরআন-হাদীস সহ রাজনৈতিক ইতিহাসের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে হবে।

উপাধ্যক্ষ আবদুর রব বলেন, আল্লাহ মানুষকে দুটো দায়িত্ব দিয়েছেন। এক- খেলাফতের দায়িত্ব, দুই- আল্লাহর ইবাদাত বন্দেগী করা। যতদিন পর্যন্ত কুরআনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে না। ততদিন আমাদেরকে জুলুম নির্যাতন সহ্য করতে হবে। আমাদের কুরআন হাদীসের ইলম অর্জনের পাশাপাশি বেশি বেশি আমল করার মাধ্যমে জনগণকে জাগিয়ে তুলতে পারলেই এদেশে ইসলামের বিজয় নিশ্চিত হবে, ইনশাআল্লাহ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল ও নগর আমীর জনাব মুহাম্মদ শাহজাহান বলেন, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার মানুষ জামায়াতে ইসলামীকে হৃদয় দিয়ে ভালোবাসে। সারা দুনিয়ায় এ অঞ্চলের তৎপরতার দিকে তাকিয়ে থাকে। ইসলাম এ দুনিয়ায় শুধুমাত্র সমর্থনের জন্য আসে নি। ইসলামী আন্দোলন মুমিন জীবনের ঐচ্ছিক বিষয় নয়। মূলত: আল জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ অন্যান্য নামায রোযার মতো ফরয করা হয়েছে। তাই ফরযের মতো একে জানমাল দিয়ে পালন করতে হবে।
জননেতা আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী বলেন, জামায়াতে ইসলামীর ইতিহাস ও অর্জনসমূহ সকল সহযোগীকে কন্ঠস্থ করতে হবে। আজ থেকে শতবছর পূর্বে মানুষ ইসলামকে শুধুমাত্র ধর্ম হিসেবে জানতো, একে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে জানতো না। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে পরিচয় করার জন্য জামায়াতে ইসলামীর আভির্ভাব। জামায়াতের আভির্ভাব না হলে তা বুঝতে পারতো না, যেমনিভাবে আজকে ভারতের মুসলমানগণ বুঝার জন্য সুযোগ পাচ্ছে না। এদেশে জামায়াতের সাথে সাথে দেশব্যাপী ওয়াজ এবং খুতবার মাধ্যমে সর্বস্তরের মানুষকে ইসলামের প্রতি পরিপূর্ণ শামিল হওয়ার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আজ দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষার একটি মাত্র নাম জামায়াতে ইসলামী।
সাবেক জেলা আমীর জাফর সাদেক বলেন, ইসলাম ছাড়া অন্যন্য মতবাদ গ্রহণ করে তারা আখিরাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ইসলামকে পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করাই আমাদের দায়িত্ব। তাই ইসলামকে পুরোপুরি মানার চেষ্টা করতে হবে।
জেলা আমীর সভাপতির বক্তব্যে বলেন, এ সরকার ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে দেশকে ভারতের অংগরাজ্যে পরিণত করতে চাই। তাই বাংলাদেশের জনগণ এ অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ সরকারকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। গণহারে ভোট বর্জনের পরও সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হচ্ছে না। দেশের চলমান আন্দোলনে নিরংকুশ সহযোগিতার পাশাপাশি সকল সহযোগীকে কুরআন ও হাদীসের জ্ঞানার্জন করে ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে। তিনি ব্যক্তিগত জীবন, পারিবারিক জীবন এবং সাংগঠনিক জীবন পদ্ধতিকে কুরআন ও সুন্নাহর আলোকে ঢেলে সাজানোর জন্য সহযোগীদের প্রতি আহবান জানান।

এতে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অধ্যাপক মুহাম্মদ নুরুল্লাহ, এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুহাম্মদ জাকারিয়া, সাংগঠনিক সেক্রেটারি এডভোকেট আবু নাছের, কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল ফয়েজ, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের জেলা সভাপতি মাওলানা নুরুল হোসাইন, ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার সভাপতি মুহাম্মদ আলী হোছাইন ও চট্টগ্রাম পশ্চিম জেলার সভাপতি মুহাম্মদ আইয়ুবুল ইসলাম সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।