কে এম আবুল কাশেম (বাহাদুর)চট্টগ্রাম বিভাগীয় ব্যুরোচীফ:প্রধান উপদেষ্টার সাথে যমুনায় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ১ ঘণ্টা আলোচনা উঠে এলো নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বন্দর থেকে ১ শতাংশ মাশুল আদায় প্রসঙ্গ চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম প্রধান সমস্যা জলাবদ্ধতা দূরীকরণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে জোর দিচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন সাক্ষাৎ করতে গেলে জলাবদ্ধতা ও নগর উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলেন ড. ইউনূস। তিনি জলাবদ্ধতা নিরসনে গৃহীত যাবতীয় পদক্ষেপেও সহযোগিতারও আশ্বাস দেন মেয়রকে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ১ শতাংশ মাশুল আদায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রস্তাবনা ‘লজিক্যালি’ (যৌক্তিক) হলে তা বাস্তবায়নেরও আশ্বাস দেন মেয়রকে। এছাড়া বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরসহ চসিকের গৃহীত বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নেও সহযোগিতার আশ্বাস দেন প্রধান উপদেষ্টা।
সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জাতীয় দৈনিক বিকাল বার্তা টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান সাক্ষাৎ শেষে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে। পুরো আলোচনায় হয়েছে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায়। ড. ইউনূস মেয়রের মাধমে চট্টগ্রামবাসীকে শুভেচ্ছাও জানান। এসময় নগরে চলমান অমর একুশে বইমেলায় ড. ইউনূসকে আমন্ত্রণ জানান মেয়র। তখন প্রধান উপদেষ্টা এরি মধ্যে চট্টগ্রামে এলে বইমেলার অনুষ্ঠানে যাবেন বলে আশ্বস্ত করেন মেয়রকে।
বৈঠকে কী আলাপ হয়েছে জানতে চাইলে ডা. শাহাদাত হোসেন দৈনিক বিকাল বার্তা কে বলেন, জলাবদ্ধতা নিয়ে উনি (প্রধান উপদেষ্টা) কনসার্ন। আমাকে বলেছেন, জলাবদ্ধতার প্রকল্প তো চলছে, তোমার হাত ধরেই যেন চট্টগ্রামের মানুষ এসব প্রকল্পের সুফল পায়’। মেয়র বলেন, উনার এ কথায় আমি গর্বিত। আশা করছি সবাইকে সাথে নিয়ে সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করব। নগরের জলাবদ্ধতার সমস্যা সমাধানে পদক্ষেপ নিতে যে চারজন উপদেষ্টাকে দায়িত্ব দিয়েছেন সে বিষয়ে আমরা সন্তুষ্টি কীনা জানতে চেয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। আমি বলেছি, অবশ্যই সন্তুষ্ট। তারা (চার উপদেষ্টা) যে মনিটরিং করছেন তাতে কাজের গতি বাড়ছে।
মেয়র বলেন, যেহেতু তিন–চার মাস পর বর্ষা আসছে, তাই উনি (প্রধান উপদেষ্টা) মেইনলি জলাবদ্ধতার দিকে মনোনিবেশ করছেন। এটার জন্য মন্ত্রণালয়ে আমাদের কোনো প্রকল্প আছে কীনা জানতে চান। আমি বলেছি, ২১টি খাল ও টারশিয়ারি নালা ও ড্রেন পরিষ্কার ১০০ কোটি টাকা এবং যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ২৯৮ কোটি টাকার থোক বরাদ্দ চেয়েছি মন্ত্রণালয়ে। মন্ত্রণালয় হয়তো ৫ কোটি টাকা দিচ্ছে। আমি প্রধান উপদেষ্টাকে বলেছি, আগামী তিন–চার মাসে অন্তত ২০/৩০ কোটি টাকা দেয়া হলেও খাল পরিষ্কারের কাজগুলো দ্রুত করতে পারব।
নগরের সুনির্দিষ্ট আর কোনো বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা কথা বলেছেন কীনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, চট্টগ্রামের অবকাঠামোগত উন্নয়ন, রাস্তা–ঘাটের ডেভেলাপ করার কথা বলেছেন। রাস্তাঘাটের কাজ তো চলছে, সেটা আমি বলেছি। পার্ক এবং খেলার মাঠ করছি, সেগুলো আমি তুলে ধরেছি। এতে তিনি সন্তুষ্ট হয়েছেন। জলাবদ্ধতা বাইরে কোন প্রসঙ্গে কথা হয়েছে জানতে চাইলে শাহাদাত বলেন, বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তরের একটি প্রকল্পের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করেছি। তিনি এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।
মেয়র দৈনিক বিকাল বার্তা কে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কাছ থেকে ১ শতাংশ মাশুল দেয়ার বিষয়টি বলেছি। তখন উনি (প্রধান উপদেষ্টা) বলেছেন, লাজিক্যালি যেটা হয় সেটা করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। এবং সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মেয়র বলেন, আমি প্রধান উপেদেষ্টা চট্টগ্রামের বইমেলায় আমন্ত্রণ জানিয়োছি। তিনি বলেছেন, যদি চট্টগ্রামে আসলে কর্পোরেশনের অনুষ্ঠানে যোগ দিবেন। মেয়র বলেন, চট্টগ্রামকে ‘গ্রীন, ক্লিন ও হেলদি সিটি’তে রূপান্তরে আমার পরিকল্পনার কথা তুলে ধরলে প্রধান উপদেষ্টা খুব খুশি হন। আমাকে বলেন, জলাবদ্ধতা দূর করা গেলে চট্টগ্রামকে আরো সুন্দর করে সাজানো সহজ হবে।
এদিকে চসিকের জনসংযোগ শাখা থেকে ড. ইউনূসের সঙ্গে মেয়রের সাক্ষাৎ এর বিষয়ে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে তারা চট্টগ্রামের উন্নয়ন সংক্রান্ত বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা করেন। সাক্ষাতে মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন জানান, নগরের জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ বর্তমানে ৩৬টি খালে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, তবে এ প্রকল্পের আওতার বাইরে আরও ২১টি খাল রয়েছে, যা জলাবদ্ধতা সমস্যার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেয়র এসব খালেরও উন্নয়ন ও সংস্কারের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে নদী, খাল, ও নালাগুলোকে সচল রাখতে হবে এবং দখল ও দূষণ রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সমস্যার দীর্ঘস্থায়ী সমাধানে কেন্দ্রীয় সরকারের অর্থায়ন ও কারিগরি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
বৈঠকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আদায়ের জন্য ১ শতাংশ মাসুল নিয়েও আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, এই মাসুলের একটি অংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। চট্টগ্রাম দেশের প্রধান বন্দরনগরী হওয়ায় এখানকার রাস্তাঘাট, অবকাঠামো ও পরিষেবার ওপর অতিরিক্ত চাপ থাকে। তাই বন্দরের রাজস্ব থেকে নগর উন্নয়নে বরাদ্দ দেওয়া হলে পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ও সড়ক উন্নয়ন আরও সহজ হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেয়র মনে করেন, শুধু অবকাঠামো উন্নয়ন করলেই জলাবদ্ধতার সমাধান হবে না। নগরবাসীর মধ্যেও যথাযথ সচেতনতা তৈরি করতে হবে যাতে তারা খাল ও ড্রেনে ময়লা না ফেলে, প্লাস্টিকের ব্যবহার কমায় এবং পরিবেশবান্ধব জীবনযাপন চর্চা করে। এ জন্য সিটি করপোরেশন নিয়মিত সচেতনতামূলক প্রচারাভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে।
বৈঠকে নগরের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মেয়র বলেন, প্রতিদিন চট্টগ্রাম শহরে প্রতিদিন যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য উৎপন্ন হয়, এর সঠিক ব্যবস্থাপনা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি উল্লেখ করেন যে, উন্নত দেশগুলোর মতো বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার উদ্যোগ নেওয়া হলে এটি পরিবেশের জন্য যেমন ভালো হবে, তেমনি নগরীর অর্থনীতিতেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
মেয়র আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দেন এবং বলেন, চট্টগ্রামে ওয়েস্ট প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্ট প্লান্ট প্রকল্প গ্রহণ করা হলে নগরবাসীর সুবিধা হবে। এ ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ ও সরকারি সহায়তা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মেয়র তার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বলেন, তিনি চট্টগ্রামকে ‘গ্রীন, ক্লিন, হেলদি সিটি’ হিসেবে গড়ে তুলতে চান। এ জন্য তিনি পরিবেশবান্ধব অবকাঠামো, বনায়ন, ও পরিচ্ছন্ন নগর ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি জানান, নগরীতে নতুন পার্ক ও উন্মুক্ত স্থান তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। এছাড়া, নিয়মিত রাস্তা পরিষ্কার রাখা ও স্বাস্থ্যসম্মত ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা তার পরিকল্পনার অংশ।
বৈঠকের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থ ছাড়। মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রমে গতি বাড়বে অর্থ ছাড় দ্রুত হলে। তিনি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুসের সহযোগিতা কামনা করেন, যাতে দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নের অর্থ অনুমোদন হয় এবং নগর উন্নয়ন কার্যক্রম ত্বরান্বিত হয়। বৈঠকে চট্টগ্রামের উন্নয়নের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের ওপর আলোচনা হয়। প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনুস মেয়রের পরিকল্পনাকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন এবং প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নগরবাসীর স্বার্থে সিটি কর্পোরেশন প্রতিটি উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ এবং তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের সহায়তা নিয়ে চট্টগ্রামকে একটি আধুনিক, পরিবেশবান্ধব ও বাসযোগ্য নগরীতে পরিণত করতে চান।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ