* প্রতিষ্ঠান প্রধানের স্বজনপ্রীতি ও নারীপ্রীতির আগ্রাসন
* বরাবরের দাপ্তরিক সন্ত্রাসীবাহিনী নয়া তকমায় বেশামাল
কামরুজ্জামান মিল্টন:
গেল দমকা বাতাসে তেল,তাল আর মিথ্যা সাফাইয়ের দেয়াল ধ্বসে দেশের প্রায় সব সরকারি লুটেরা,দুর্নীতিবাজদের বেকায়দায় ফেলেছে। যাতে বরাবরের সব শক্তপোক্ত ও প্রতাপী পাহারাদারহীনতায় কাক,চিলের খোরাকের ন্যায় তার দুর্গন্ধরুপে ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। এরই একটি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন,বিআরটিসি নামের সরকারি প্রতিষ্ঠান। আর তার হোতারুপী চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলাম। তা যেন একটা বড় মেয়াদে ধুরন্ধর চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের একচ্ছত্র আধিপত্যের রাহুগ্রাসের রসাতলে হাবুডুবুতে তাগতহীন। তারপরও মেলেনি রেহাই । তবে এরই মধ্যে ওই দমকা বাতাসের সুযোগে এ যাবতের দমনের লাগামে বোবা সব সুবিধা বঞ্চিতদের ক্ষোভময় আৎচিৎকার বেড়ে উঠেছে। তবুও ওই প্রতিষ্ঠান হোতা তার বলয় ঘেরা আধিপত্য রক্ষায় বেপরোয়াভাবে সক্রিয়। আর তাতেই ভাগের দন্দে দ্বিধাবিভক্ত অধঃস্তনদের অন্তর্দন্দে বিআরটিসিতে যেমন-একধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে,তেমনি-চেয়ারম্যান মোঃ তাজুল ইসলামের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নামের অপকর্মের দুর্গন্ধ বিআরটিসি’র দেয়ালের বাইরেও ছড়িয়ে পড়ছে। চেয়ারম্যানের শক্ত আধিপত্যের চাদরে মোড়া নিয়োগবাণিজ্য থেকে শুরু করে স্বজনপ্রীতি ও নারীপ্রীতির দুর্গন্ধটা সংশ্লিষ্টদের নাক সিটকানোর রসদ যোগাচ্ছে। আর সম্প্রতি এসব নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) একাধিক অভিযোগও হয়েছে। সেই সূত্রেই জানা গেছে, চেয়ারম্যান বিআরটিসিতে বিগত আড়াই বছরে অবৈধভাবে প্রায় ১২’শ লোককে নিয়োগ দিয়েছেন। যার বিনিময়ে নিয়োগপ্রাপ্তদের কাছ থেকে আট কোটি টাকারও বেশী ঘুষ নিয়েছেন। বিগত ২০২১ সাল থেকে বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিআরটিসি থেকে তার বিরুদ্ধে অর্ধশত কোটি টাকা আত্মসাতের তুমুল গুঞ্জন থাকলেও তিনি তা তোয়াক্কা না করে নিরব থেকেছেন। এযাবৎ বিষয়ে কেউ মুখ না খুললেও সদ্য তা নিয়ে রীতিমত এক ধরনের সোরগোল শুরু হয়েছে। এদিকে ঘুষের বিনিময়ে চাকরি দেয়ার ক্ষেত্রে নুসরাত জাহান ও ইসরাত নামে দু’জনের নিয়োগ নিয়ে রয়েছে- চাপা ক্ষোভ সমেত বিতর্ক। কারণ তাদের দুজনকেই এ পর্যন্ত একাধিক পদে একাধিকবার নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। তাদের দুজনই প্রথম নিয়োগ পান কন্ট্রাক্টর ডি হিসেবে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ফের তাদের নিয়োগ দেয়া হয় জব সহকারী হিসেবে। আর সর্বশেষ আবারো তাদের একজনকে সহকারী নেজারত কর্মকর্তা ও আরেকজনকে কল্যাণ কর্মকর্তা পদে তৃতীয় দফায় নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। বিআরটিসি সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নুসরাত জাহান ও ইসরাতের সাথে পৃথকভাবে চেয়ারম্যানের নিজের লোক বলে পরিচিত। এ ছাড়াও গত মে মাসে অফিস সহকারী-কাম কম্পিউটার পদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করেও পঞ্চম স্থান প্রাপ্ত হয়েছেন চাকরিপ্রার্থী মো. রাশেদ খান। পরবর্তীতে মৌখিক পরীক্ষার সময় জালিয়াতির জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে অটকও হন তিনি। এর এ পর্যায়ে বিষয়টি ধামাচাপা পড়ে যায়। কারণ হলো-উক্ত রাসেদ চেয়ারম্যানের ভাগ্নি জামাই। গত আগস্টে বিআরটিসির নিরাপত্তা সহকারী পদে ফের তার নামে লিখিত পরীক্ষার কার্ড ইস্যুও করা হয়। বিগত ২০২১ সাল থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বিআরটিসির প্রধান কার্যালয়সহ সমস্ত ডিপোতে টেন্ডারবিহীন ও টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। চেয়ারম্যান তার নিজস্ব লোকবল দিয়েই ডিপোর প্রায় প্রত্যেকটি কাজ করান। উৎকোচের মাধ্যমে মেসার্স আল মালিক ট্রেডার্স, এম এইচ এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স অনন্যা ট্রেডার্সকে দিয়েও কাজ করান তিনি। এসব কাজের মাধ্যমে তিনি ১২ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার ছেলে অমির ফাস্ট সিকিউরিটি ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে মো. নজরুল ও জামান নামের জনৈক দুই ঠিকাদার ঘুষের অর্থ লেনদেন করেন। বিআরটিসির বাসে ইন্টারনেট স্থাপনের কাজটিও করেন চেয়ারম্যানের ছেলে অমি ও তার বন্ধু। তাদের প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্টারনেট স্থাপনের কাজটি করা হলেও এর কোনো সুবিধাই পাচ্ছেন না যাত্রীরা। অথচ প্রতি মাসেই দেশের সমস্ত ডিপো থেকে ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে অমি ও তার বন্ধু মাসিক প্রায় ১৮ লাখ টাকা বিল গ্রহণ করছেন নির্বিঘ্নে। আর এভাবে গত দুই বছরে তিন কোটি টাকা হাতিয়েছেনও তারা। তাজুল ইসলামের চেয়ারম্যান’র চলে যাওয়ার সময় বিআরটিসির ফান্ডে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা বুঝে পান। তাও এখন নেমে এসেছে ১৪ কোটি টাকায়। শুধু তাই নয়, গাড়ির লিজ গ্রহীতাদের কাছ থেকেও গত দুই বছরে প্রায় চার কোটি টাকার উপঢৌকন গ্রহণ করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে বিরুদ্ধে। সমস্ত ডিপো ইনচার্জদের কাছ থেকে গাড়ি মেরামত, গাড়ির পার্টস ও যন্ত্রাংশ ক্রয় বাবদ ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমেও প্রায় আট কোটি টাকা আত্মসাতও করেছেন তিনি। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তাজুল ইসলামের তিনি পরিচালক প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে বলেন।