1. jhramjan88385@gmail.com : bbarta :
  2. muhammadalomgir350@gmail.com : Muhammad Aaomgir : Muhammad Aaomgir
  3. abrahim111099@gmail.com : Bikal Barta :
ছাত্রদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ... - Bikal barta
১০ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ| ২৭শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ| শীতকাল| সোমবার| রাত ৮:০৮|

ছাত্রদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে …

রিপোর্টারের নাম
  • প্রকাশিত সময় রবিবার, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫,
  • 14 জন দেখেছেন
মো. মনিরুজ্জামান মনির: দেশের ক্রান্তিকালে সব চেয়ে বড় ভূমিকা পালন করে থাকেন ছাত্ররা। তাদের সংগঠিত করেন দেশপ্রেমিক রাজনীতিক আর শিক্ষকরা। এ কারণে প্রতিটি আন্দোলন-সংগ্রামে রাজনীতিকদের পাশাপাশি ছাত্র-শিক্ষকদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৯৪৮ থেকে ২০২৪- সব আন্দোলন-সংগ্রামে সবার আগে অকাতরে বুকের তাজা রক্ত ঢেলে দিয়েছেন ছাত্ররা। নিজের হাতে প্রাণটা নিয়েই তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। তাদের রক্তের বন্যায় ভেসে গেছে শাসক গোষ্ঠীর অন্যায়। আর এ কারণেই শাসক গোষ্ঠী সব সময় ছাত্রদের প্রতিপক্ষ মনে করে।

উদাহরণ হিসেবে ভাষা আন্দোলনের কথাই বলা যাক। ভারতবর্ষ ভেঙে পাকিস্তানর জন্মের সাত মাস পরে ১৯৪৮ সালের মার্চে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ পূর্ব পাকিস্তানে (বাংলাদেশ) এসেছিলেন। তিনি তখন পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল, গণপরিষদ সভাপতি এবং মুসলিম লীগেরও সভাপতি। তিনি পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতাও। ৯ দিন তিনি পূর্ব পাকিস্তান সফর করেন। ১৯৪৮ সালের ২১ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দি উদ্যান) তিনি জনসভায় ভাষণ দেন। তিনি স্পষ্ট করেই বলেছিলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে উর্দু এবং অন্য কোন ভাষা নয়। কেউ যদি আপনাদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে; তাহলে সে আসলে পাকিস্তানের শত্রু। তিনি কয়েক দিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলে ছাত্রদের সামনে আরেকটি ভাষণ দেন। সেখানে তিনি বলেন, পাকিস্তানের প্রদেশগুলো নিজেদের সরকারি কাজে যে কোন ভাষা ব্যবহার করতে পারে। তবে রাষ্ট্রীয় ভাষা হবে একটিই এবং তা হবে উর্দু। কয়েকজন ছাত্র তখন ‘না’ ‘না’ বলে চিৎকার করে প্রতিবাদ করেছিলেন। উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার কথাবার্তা শুরু হবার সাথে সাথেই পূর্ব বঙ্গের ছাত্র, শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজ, বুদ্ধিজীবী আর রাজনীতিবিদরা বুঝেছিলেন যে এটা বাঙালিদের জন্য চরম বিপর্যয় ডেকে আনবে। পূর্ব পাকিস্তানে মাতৃভাষা বাংলার সম-মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে মিছিল, সমাবেশ বেআইনি ও নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি এ আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী এবং শ্রমিক কর্মচারীরা মিলে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিকেল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ গুলি চালায়। এতে নিহত হন বাদামতলী কমার্শিয়াল প্রেসের মালিকের ছেলে রফিক, সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এম.এ. ক্লাসের ছাত্র বরকত ও আব্দুল জব্বারসহ অনেকে। ১৭ জন ছাত্র-যুবক আহত হন। রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠে। প্রতিবাদে ২২ ও ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র, শ্রমিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক ও সাধারণ জনতা পূর্ণ হরতাল পালন করেন এবং সভা-শোভাযাত্রাসহ ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে। ২২ ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে শহীদ হন শফিউর রহমান শফিক, রিকশাচালক আউয়াল ও অলিউল্লাহ নামের এক কিশোর। পরে রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি পায় বাংলা।

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান হলো পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত সর্বাধিক গুরত্বপূর্ণ আন্দোলন। নিপীড়নমূলক সামরিক শাসন, রাজনৈতিক নিপীড়ন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কারারুদ্ধ করার প্রতিবাদে পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন সংঘটিত হয়। সব গণতান্ত্রিক দল, পেশাজীবী সংগঠন ও মানুষ যার যার অবস্থান থেকে এই আন্দোলনে যুক্ত হয়। এই আন্দোলনেও শতাধিক মানুষ প্রাণ হারান। ২৬ ফেব্রুয়ারি বিরোধী নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য আইয়ুব খান গোলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। পরবর্তীতে গোলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হলে আইয়ুব খান পদত্যাগ করেন। এই আন্দোলনেও ছাত্রদের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধেও ছাত্রদের অবিস্মরণীয় ভূমিকা ছিল। তারা কেবল অস্ত্র হাতে যুদ্ধই করেননি; মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জনমত গঠন এবং মানুষকে সংগঠিত করেছিলেন। ওই যুদ্ধে যে ত্রিশ লাখ মানুষ প্রাণ দিয়েছেন; তাদের মধ্যে একটা বড় অংশ শিক্ষার্থী। ১৯৯০ সালের ৪ ডিসেম্বর যে গণঅভ্যুত্থানে সামরিক শাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের পতন হয়; সেটা শুরু হয়েছিল ১০ অক্টোবর। এই আন্দোলনে প্রায় সব রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। এর বাইরে বড় অংশ ছিল শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং সকল কলেজ; এমনকি হাইস্কুলের শিক্ষার্থীরাও ওই আন্দোলনে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন। ফলে ১৯৮২ সালে সামরিক আইন জারি করে রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা এরশাদের পতন হয়। ফলে ১৯৯১ সালে একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের পথ প্রশস্ত হয়। এরশাদের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান সংঘটিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের নেতৃত্বাধীন ৭-দলীয় জোট; আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ৮-দলীয় জোট এবং বামপন্থী ৫-দলীয় জোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ওই আন্দোলনে দেড় শতাধিক মানুষের প্রাণ যায়। ওই বছরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকার। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত ফখরুদ্দিন নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাধায়ক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সেনা সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে ওই বিক্ষোভ হয়েছিল। পরে ২০০৮ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। দলটি টানা সাড়ে ১৫ বছর দেশ শাসন করে। এই সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে যত বিক্ষোভ হয়েছিল; সেখানেও ছাত্রদের অবদান ছিল লক্ষণীয়। অবশেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এই ছাত্র-জনতা এবং আওয়ামী বিরোধী সকল রাজনৈতিক দলের নির্যাতিত নিপীড়িত কর্মীসহ সাধারণ জনগণের আন্দোলনেই শেখ হাসিনার পতন হয়। এই আন্দোলনে নিহত হয়েছেন শিশুসহ বিভিন্ন পেশাজীবি মানুষ তবে নিহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিক্ষার্থী। তাদের এই অর্জনকে ভালভাবে নিচ্ছে না একটা শ্রেণী। আর তারাই সরকারের প্রতিটি মন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কমিটিতে ছাত্রদের প্রবেশ করাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য কিন্তু একটাই- তারা অনিয়ম, দুর্নীতি আর লুটপাট করবেন। এর দায় পড়বে শিক্ষার্থীদের ওপর। গুঞ্জন রয়েছে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের অধিদপ্তর এবং পরিদপ্তরের কমিটিতে থাকা ছাত্র প্রতিনিধি সদস্যরা বিদেশ ভ্রমণে যাচ্ছে। যদিও যে কাজের বিষয়ে যাচ্ছেন তারা সেই বিষয়ে কিছু জানেন না। তাহলে তারা সেখানে কী করবেন? জনগণের ট্যাক্সের টাকা তাদের পেছনে খরচ হয়েছে, হচ্ছে। এটা অপচয় কি না, তা ভাবতে হবে। এরই মধ্যে কিছু কিছু টকশোতে বিভিন্ন কমিটিতে শিক্ষার্থীদের থাকার বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির এক নেতা।

ভয়ের ব্যাপার হলো-ছাত্রদের ওপর ভর করে অনেক আমলা দুর্নীতি করে যাচ্ছেন। তারা বলছেন- ছাত্ররা এটা বলেছে, ওটা বলেছে। আদতে ছাত্ররা সেই কথা বলেছেন কি না, তা কিন্তু যাচাই করার সুযোগ নেই। নিজেরা ফায়দা লুটছেন ছাত্রদের নাম করে। আরেকটা বিষয় বলতে হচ্ছে ছাত্রদের স্বার্থেই। তাদের যে বিভিন্ন কমিটিতে রাখা হয়েছে; সেটা কিন্তু আইন না মেনে। বাংলাদেশে প্রচলিত কোন আইনে সরকারি কোন কমিটিতে ছাত্রদের রাখার বিধান নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়ে কেউ প্রশ্ন তুলতেই পারে; তখন ছাত্ররা কী জবাব দেবেন? ছাত্ররা দেশের সম্পদ; আমাদের ভাই; আমাদের সন্তান। তারা যেন কোনওভাবেই বিতর্কের মুখে না পড়েন; সেটা সবাইকে মাথায় রাখতে হবে। অতীতে গণঅভ্যুত্থানের পর ছাত্রদের কিন্তু কোনও কমিটিতে রাখা হয়নি। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও মুক্তিযোদ্ধাদের সরকারি কমিটিতে রাখা হয়নি।

এবার একটু বিদেশ ঘুরে আসতে চাই। কয়েক বছর আগে যে আরব বসন্ত শুরু হয়েছিল; সেখানেও মূল নিয়ামক ছিলেন ছাত্ররা। তিউনিশিয়া, লিবিয়া ও মিশরে সরকার পতন আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন শিক্ষার্থীরা। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সিনাওয়াত্রার বিদায়ও হয়েছিল ছাত্র আন্দোলনের ফলে। যুগে যুগে বিভিন্ন দেশে স্বৈরশাসক হটাতে শিক্ষার্থীরাই সবার আগে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু কোন দেশেই রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বিভিন্ন কমিটিতে ছাত্ররা থাকেননি। তার মানে বাংলাদেশে ছাত্ররা আছেন- আমি এর বিরোধিতা করছি না। আমার বক্তব্য ছাত্ররা তরুণ। তাদের পড়াশোনায় মনোনিবেশ করা জরুরি। তাদের নাম ভাঙিয়ে এক শ্রেণীর আমলা যে অপকর্ম করছেন; তাতে ছাত্রদের ইমেজ কিছুটা হলেও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। আমি আশাকরি ছাত্ররা বিষয়টি অনুধাবন করবেন এবং তাদের ঘাড়ে বন্দুক রেখে যেন দুর্নীতিবাজরা শিকার করতে না পারে-সেটি তারা খেয়াল করবেন। পরিশেষে আমাদের ছাত্রদের জন্য থাকল শুভ কামনা।

লেখক:
সভাপতি, বাংলাদেশ রেলওয়ে পোষ্য সোসাইটি

আপনার সামাজিক মিডিয়ায় সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এই ক্যাটাগরির আরও সংবাদ পড়ুন
© All rights reserved © 2024 bikal barta
error: Content is protected !!