সিলেট বিভাগীয় ব্যুরো>> সিলেটের জৈন্তাপুর সীমান্তে চোরাচালানি চক্র বেপরোয়াভাবে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। ইদানীং এলাকার কোনো কোনো ব্যবসায়ী, জনপ্রতিনিধি দ্রুত ‘বড়লোক’ হওয়ার স্বপ্নে বিনিয়োগ করছেন চোরাচালানসহ মাদকের কারবারে। তাদের বিনিয়োগে সীমান্তের ওপার থেকে চিনি, গরু, মহিষ, চা-পাতা, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদক আসছে দেদারছে। ব্র্যান্ডের মোবাইল ফোনের সঙ্গে পুরোনো মোবাইলও আসছে। সব কিছু প্রকাশ্যে চললেও প্রশাসন নির্বিকার। এ অবস্থায় বলা চলে জৈন্তাপুর পশু ও চিনি চোরাচালানের অভয়ারণ্য। সম্প্রতি সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলা ঘুরে সেখানে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাস্তবে জৈন্তাপুর সীমান্তের অর্ধশতাধিক পয়েন্ট দিয়ে ভারত থেকে অবৈধপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে চোরাই পণ্য।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর চার-পাঁচ দিন বন্ধ থাকলেও ফের নতুন করে শুরু হয়েছে চোরাচালান। বিজিবি সোর্স পরিচয়ে জনৈক সমাদ ও আরমান জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ করছে। তাছাড়া পুলিশে ল্যাইন থেকে টাকা তুলেন পুলিশের দুই সদস্য এবং ডিবি’র ল্যাইনম্যান হরিপুরের মাসুক আহমদ ও যশপুরের মানিক মনা।
সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলা ঘুরে প্রায় অর্ধশত চোরাচালান পয়েন্টের সন্ধান পাওয়া গেছে। এরমধ্যে উপজেলার নলজুরী খাসিনদী, খাসি হাওর, মোকামবাড়ী, আলুবাগান, মোকামপুঞ্জি, শ্রীপুর, আদর্শগ্রাম, মিনাটিলা, কেন্দ্রী মন্দির, কাঁঠালবাড়ী, কেন্দ্রী হাওর, ডিবির হাওর, ডিবির হাওর (আসামপাড়া), মরিছমারা, ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, গৌরীশংকর, টিপরাখলা, করিমটিলা, কমলাবাড়ী, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী, বাইরাখেল, হর্নি, ময়না, নয়াগ্রাম, জালিয়াখলা, কালিঞ্জি, লালমিয়া ও অভিনাশের টিলা, জঙ্গিবিল, আফিফানগর, তুমইর, বাঘছড়া, বলিদাঁড়া, রাবারবাগান, ইয়াংরাজা এলাকা অন্যতম। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চোরাচালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে ৪৮ বিজিবির ডিবির হাওর, ১৯ বিজিবির ঘিলাতৈল, ফুলবাড়ী, গৌরীশংকর, টিপরাখলা, কমরাবাড়ী, করিমটিলা, ভিতরগোল, গোয়াবাড়ী ও বাইরাখেল সীমান্ত দিয়ে।
তাছাড়া গরু, মহিষ, আর চিনি চোরাচালানের বিষয়টি বেশি আলোচিত হলেও জৈন্তাপুর সীমান্তের উল্লিখিত পয়েন্টগুলো দিয়ে ভারতীয় বিভিন্ন চোরাই পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এর মধ্যে রয়েছে, চা-পাতা, কসমেট্রিকস, শাড়ি, লেহেঙ্গা, ভারতীয় মোটরসাইকেল, আমদানি নিষিদ্ধ শেখ নাছির উদ্দিন বিড়ি, সার্জিক্যালসামগ্রী (আপারেশনসামগ্রী), চেতনানাশক ওষুধসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধ, হরলিক্স, শিশুখাদ্য, বিস্কুট, চকোলেট, ভারতীয় টাটা গাড়ির টায়ার, টিউবসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। মাদকের মধ্যে রয়েছে ভারতীয় ব্র্যান্ডের সিগনেচার, ওল্ডমং, ম্যাজিক মোমেন্ট, নাম্বার ওয়ান, ব্লেন্ডার প্রাইড অফিসার্স চয়েস, রামানভ মাদক। এ ছাড়া ফেনসিডিল, কসিড্রিল, ইয়াবা, গাজা, আফিম, হেরোইন ইত্যাদি।
স্থানীয় বাসিন্দা ও চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা জানান, জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ও জৈন্তাপুর ইউনিয়নের সীমান্তের পয়েন্টগুলোর যোগাযোগব্যবস্থা বেশ সুবিধাজনক। ফলে সীমান্ত থেকে সহজে পণ্য পরিবহন করা যায়। আবার নৌপথে পণ্য পরিবহনও সহজ। এ ছাড়া এ পাশটায় ভারত সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া না থাকায় চোরাকারবারিদের কাছে বেশ পছন্দের। গরু-মহিষ এই দুই ইউনিয়নের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করাতে বেগ পেতে হয় না। ফলে এই পথ ব্যবহার করে পশু দ্রুত স্থানীয় বাজারগুলোয় নিয়ে যাওয়া যায়। পরে ইজারার ফি দিয়ে গরু-মহিষ বিক্রির রশিদ নিয়ে ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন হাট-বাজারে পাঠিয়ে দেওয়া যায়। অবশ্য এর জন্য সোর্স ও লাইনম্যানদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়।
চোরাকারবারি, চোরাই পণ্য পরিবহন শ্রমিক এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগস্টে সরকার পতনের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা, সীমান্ত বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মোটা অঙ্কের চাঁদার বিনিময়ে চোরাচালান হয়ে আসছিল। তবে আগস্ট অভ্যুত্থানের পর এই চিত্র পাল্টে যায়। বর্তমানে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) নাম ব্যবহার করে জৈন্তাপুর সীমান্তের চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করছে বিজিবি ও পুলিশের সোর্স হিসেবে পরিচিত ঢাকার বাসিন্দা সামাদ ও আরমান।
সামাদ ও আরমান তাদের বিশ্বস্ত দুই ব্যক্তির মাধ্যমে পুরো জৈন্তাপুর উপজেলা সীমান্তে চোরচালান বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করেন। এই দুই হলেন জৈন্তাপুর উপজেলার ঘিলাতৈল গ্রামের শীর্ষ চোরকারবারী আব্দুল করিম উরফে বেন্ডিজ করিম এবং উপজেলার বাইরাখেল গ্রামের আবদুল মালিক ওরফে আবদুল।
এছাড়া এই দুই জনের অধীনে বিজিবি ও পুলিশের সোর্স বা লাইনম্যান হিসেবে পরিচিত টেন্ডল রুবেল ও আব্দুল জব্বার, মির্জান আহমদ রুবেল, শামীম আহমদ, আব্দুল করিম (চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য), মিজান আহমদ রুবেল, সুজন আহমদ, কন্টাই মিয়া, রহিম উদ্দিন, তাজ উদ্দিন ও মো. শাহজাহান। এসব লাইনম্যানের মাধ্যমে ভারতীয় চোরাইপণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করানো হয়। স্থানীয় একাধিক সূত্র এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে।
এসব বিষয়ে কথা বলতে সামাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জানার পর রং নাম্বার বলে ফোন কেটে দেন। আর আরমান ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
সীমান্তের চোরাচালান বিষয়ে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাশার মোহাম্মদ বদরুজ্জামান বলেন, চোরাচালান আমাদের এখানে আছে আর আমি চোরাচালান প্রতিরোধে ব্যস্ত আছি। এদিকে চোরকারবারীদের কাছ থেকে পুলিশের দুই সদস্যের টাকা উত্তলোনের বিষয়ে ওসি বলেন, এই বিষয়টি আমার জানা নেই, আমি যাচাই করছি।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ