গৌরনদী প্রতিনিধি: মো: শাহারিয়ার পার্থ,
দাবিকৃত একলাখ টাকা চাঁদা না পেয়ে বরিশালের গৌরনদীতে ছাত্র ও যুবদলের কতিপয় নেতাকর্মীরা হামলা চালিয়ে রাশেদ শিকদার (২২) নামে ব্যবসায়ী ও ছাত্রলীগের সমর্থককে পিটিয়ে হত্যা করেছে। শুক্রবার দিবাগত রাত ৮টার দিকে উপজেলার বার্থী বাসস্ট্যান্ডে এ হামলার ঘটনা ঘটে। ময়না তদন্তের জন্য রাশেদের লাশ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত রাশেদ উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের বড়দুলালী গ্রামের আবুল কালাম শিকদারের ছেলে। রাশেদ হত্যার সাথে জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শান্তির দাবি জানান নিহতের পরিবার ও তার আত্মীয়-স্বজনরা ।
নিহতের মা হাসনু বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলে রাশেদ শিকদার তাবলীগ জামাতে এক চিল্লা দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) ঢাকার বাসায় আসে। এরপর রাশেদ তার ছেলে রাফসান শিকদারকে (২) দেখার জন্য ঢাকা থেকে শুক্রবার দুপুরে গ্রামের বাড়ি এসে জুম্মার নামাজ আদায় করে ।
নিহতের স্ত্রী সুমী বেগম বলেন, মোবাইল ফোন করে ছাত্রদল কর্মী সাইমুন তালুকদার আমার স্বামী রাশেদকে সন্ধ্যার পর বার্থী বাজারে যেতে বলেন। এদিকে আমার ছেলে রাফসান (২) তার বাবা রাশেদের কাছে মিষ্টি খাওয়ার বায়না ধরে। ফোন পেয়ে আমার স্বামী তার বন্ধুদের সাথে দেখা করতে ও ছেলের জন্য মিষ্টি আনতে শুক্রবার সন্ধ্যায় বার্থী বাজারে যায় ।
নিহতের বড় ভাই রাসেল শিকদার অভিযোগ করে বলেন, আমার ভাই রাশেদ শিকদার ঢাকা মহানগরীর ইসলামবাগ এলাকায় আমার ব্যবসা দেখাশুনা করে আসছিল। বার্থী ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি আলামিন তালুকদার ও তার ভাই হামিম তালুকদার সম্প্রতি আমার ভাই রাশেদ শিকদারের কাছে একলাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিল। দাবিকৃত চাঁদা দিতে আমার ভাই অস্বীকার করে। দাবিকৃত চাঁদা না দেয়ায় শুক্রবার রাত ৮টার দিকে আমার ভাই রাশেদকে বার্থী বাজারে পেয়ে ছাত্রদল নেতা আলামিন তালুকদার, ছাত্রদল কর্মী সাইমুন তালুকদার, হামিম তালুকদারসহ ১০/১৫ জনে তার (রাশেদ) ওপর হামলা চালায়। আত্মরক্ষার জন্য রাশেদ দৌড়ে বার্থী বাজারের কামরুল খানের দোকানে আশ্রয় নেয়। সেখান থেকে ধরে জোরপূর্বক বার্থী বাসস্ট্যান্ডে নিয়ে হামলাকারীরা রাশেদকে বেধড়ক পিটিয়ে মাথা ফাটানোসহ রক্তাক্ত জখম করে। গুরুতর আহত অবস্থায় রাশেদকে গৌরনদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে বরিশাল বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। শেবাচিম হাসপাতালে রাশেদকে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি ঘটে। উন্নত চিকিৎসার জন্য কর্তব্যরত চিকিৎসকরা মূমুর্ষু অবস্থায় রাশেদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। ঢাকা হাসপাতালে নেওয়ার পথিমধ্যে রাশেদ মারা যায়।
বার্থী বাজারের দোকান্দার কামরুল খান অভিযোগ করেন, রাশেদ তার দোকানে আশ্রয় নেয়ায় তার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ও মোটর সাইকেল ভাঙচুর করে।
গৌরনদী থানার ওসি আনোয়ার হোসেন জানান,খবর পেয়ে রাশেদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে রাশেদকে পিটিয়ে হত্যা করার অভিযোগ এনে নিহতের ভাই রাসেল শিকদার বাদি হয়ে ৫ জনের নাম ইল্লেখসহ আরো অজ্ঞতনামা ৫ থেকে ৬ জনকে আসামি করে গৌরনদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে। আসামিদেও গ্রেপ্তরের জোর প্রচেষ্টা চলছে।
উপজেলা বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান মিন্টু ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, হত্যাকারী যেই হউক না কেন, তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার সহ শান্তির দাবি করি।
বড়দুলালী গ্রামের বাসিন্দা ও বার্থী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারন সম্পাদক বিপুল সরকার বলেন, রাশেদ শিকদার মাঠে নেমে রাজনীতি করত না। সে (রাশেদ) তার ফেসবুক আইডিতে ছাত্রলীগের সমর্থনে বিভিন্ন সময় পোস্ট দিয়ে আসছিলো । এ হত্যাকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা গ্রামবাসী রাশেদ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি ।