নরসিংদী প্রতিনিধিঃ
শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড, একটা জাতিকে শিক্ষিত হতে হলে ভালো শিক্ষক থাকা অতিব জরুরি। শিক্ষক যদি নিজেই দূর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে সেই জাতি সেই শিক্ষকের কাছ থেকে ভালো কোন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে না।
নরসিংদীর মাধবদী কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামাল আহাম্মেদ নিজেই দূর্নীতি গ্রস্ত, ব্যক্তিগত সুযোগ সুবিধার জন্য কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের যেমন করেছেন বঞ্চিত তেমনি করেছেন শিক্ষক পদোন্নতি বানিজ্য। তার অপকর্মের কিছু ফিরিস্তি তুলে ধরা হলো-
১। বিধি বহির্ভূত নিয়োগঃ ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত অনার্স কোর্সের জন্য ৮ জন এবং ২০১৪ সালে ০১ জন শিক্ষকের সবার নিয়োগ সরকারী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিধি বহির্ভূত কারণ নিয়োগ নির্বাচনী পরীক্ষায় কারো কোরাম পূরণ হয় নাই, নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের প্রার্থীদের নম্বরপত্রে জাতীয় বিশ্বাবদ্যালয় প্রতিনিধি ও ডিজি প্রতিনিধিদের কারো সুপারিশ নাই, স্বাক্ষর আছে সিল নাই, অধ্যক্ষের সিল নাই। মোহাম্মদ কামরুল হক (প্রভাষক হিসাববিজ্ঞান) নিয়োগ নির্বাচনী বোর্ডের লিখিত পরীক্ষায় ফেল,আব্দুল মজিদ চৌধুরী (প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান) ভাইভা পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিলেন এবং নিয়োগ কালীন সময়ে শিক্ষক নিবন্ধন ছিলনা, মাছুমা আক্তার (প্রভাষক রাষ্ট্রবিজ্ঞান) নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন অথচ পত্রিকার বিজ্ঞপ্তিতে ০১ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকশ করে, শিরীন আক্তার (প্রভাষক সমাজবিজ্ঞান) তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জিএম তালেব এর ভাতিজি পরিচয়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছাড়াই যোগদান করে অথচ শিক্ষকতা করতে হলে সনদ বাধ্যতামূলক (বাংলাদেশ গেজেট, অতিরিক্ত, জুলাই ৩০, ২০০৬, পৃষ্ঠা-৭৩৪৪ ধারা ১১ ও পৃষ্ঠা-৭৩৪৫, দ্বিতীয় তফসিল, ক্রমিক নং ০১) মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম (প্রভাষক সমাজবিজ্ঞান) নিয়োগ কালীন সময়ে শিক্ষক নিবন্ধন সনদ ছিলনা। পত্রিকায় ৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল কিন্তু তিনি ৬ষ্ট স্থান অধিকার করেন। ৫ জন যোগদান করার পর কোন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও প্রক্রিয়া ছাড়াই নিযোগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের ১৩ মাস পরে মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম যোগদান করেন।
২। বিধি বহির্ভূত পদোন্নতিঃ নতুন সভাপতি খায়রুল কবির খোকন এর কাছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন / পদোন্নতি সংক্রান্ত বিধি গোপন করে অনার্সের এই ০৯ জন শিক্ষক, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের যোগসাজশে ০১/০১/২০২৩ তারিখ থেকে ভূতাপেক্ষভাবে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক সাথে দুটি ইনক্রিমেন্ট (বকেয়া সহ) ১২/১০/২০২৪ তারিখে পরিচালনা পর্ষদের ৬৪ নং সভার ০৩ নং আলোচ্য সূচীতে অনুমোদন করিয়ে নেয়। অথচ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবশেষ রেগুলেশন যা ১২/১০/২০২৩ তারিখে সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত এবং ১৪/১০/২০২৪ তারিখে সিনেট সভায় অনুসমর্থিত এর ধারা ৪ এর উপধারা (ছ) তে বলা হয়েছে “প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদে নিয়োগ/ পদোন্নতির জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর কর্তৃক মনোনীত বিষয়ভিত্তিক প্রতিনিধির মাধ্যমে গঠিত নির্বাচনী বোর্ডের সুপারিশ থাকিতে হইবে। বিধি অনুযায়ী প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক-এর ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকিবে।” এবং ধারা ৪ এর উপধারা (ট) তে বলা হয়েছে “শিক্ষকগণ প্রথম নিয়োগকালীন যোগ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি/চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য যোগ্য বিবেচিত হইবে।” জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়োগ/ পদোন্নাতি সংক্রান্ত কোন বিধিকে তোয়াক্কা না করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এই ০৯ জন শিক্ষককে ফ্যাসিস্ট সরকারের রাতের ভোটেরমত শুধু কলেজের এডহক কমিটির সিদ্ধান্তে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়কে না জানিয়ে রাতারাতি সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি করিয়ে দেন।
৩। বিধি বহির্ভূত শিক্ষক প্রতিনিধি সিলেকশনঃ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যক্ষ নির্বাচন ছাড়া মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম কে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শুধু নিজের সুবিধার্থে কণ্ঠভোটে শিক্ষক প্রতিনিধি হিসেবে সিলেক্ট করেন। মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম অন্যায় ভাবে সুযোগ সুবিধা নেওয়ার জন্য ভারপ্রাপ্ত অধ্যাক্ষকে খুশি করতে প্রাপ্তির অতিরিক্ত মাসিক ২২,০০০ টাকা এবং একটি এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোন ক্রয়ের জন্য মিটিংয়ে পাশ করিয়ে দেয়।
৪। এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদের পদোন্নতি স্থগিত: সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম হিরু এর হোটেল ম্যানেজার কৃষ্ণ দাস এর স্ত্রী সীমা দাসকে বিধি বহির্ভূত ভাবে পদোন্নোতি করার জন্য সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য নির্বাচিত দু’জন শিক্ষকের পদোন্নতি স্থগিত করে দেন। যেখানে কলেজ কমিটির ‘বেসরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবলকাঠামো নীতিমালা-২০২১০ এর ১১.৬ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ০৯ টি ক্যাটাগরিতে ১০০ নম্বরের ভিত্তিতে মূল্যায়ণ করে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য ০২ বার নম্বরপত্র তৈরি করেন। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও শিক্ষক প্রতিনিধি মিলে সীমা দাসকে নম্বরের ভিত্তিতে নয় বরং জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে পদোন্নতি করার জনা পূর্বের সকল প্রক্রিয়া বাতিল করে দেন।
উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় তৃতীয় বিভাগ ও অনার্সে তৃতীয় শেনি প্রাপ্ত শিক্ষক কামাল আহাম্মেদ এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি এখন যেই পদে দায়িত্বপালন করছেন সেই পদে দায়িত্বপালনের জন্য অর্থাৎ অধ্যক্ষ হতে হলে সরকারী ও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী শিক্ষাজীবনে একটি মাত্র তৃতীয় বিভাগ গ্রহণযোগ্য। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এখানেও অযোগ্য। তার অযোগ্যতার আরো বহু দৃষ্টান্ত রয়েছে।
শিক্ষাজীবনে দুইটি তৃতীয় বিভাগ/শ্রেনি অর্জিত শিক্ষক এখন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ কামাল আহাম্মেদ এখানেই তার অপকর্মের শেষ না তিনি কলেজের এফডিআর ভেঙে টাকা লোপাটের চিন্তাও করেছেন। তিনি সুকৌশলে সাদা কাগজে সকল শিক্ষকদের স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন। যেখানে প্রতিমাসে বেতন-ভাতা ও অন্যান্য ব্যষ মিলে আট লাখ টাকা খরচ হয় সেখানে তিনি ০৯ (নয়) মাসের জন্য ১,৫০,০০,০০০/- (দেড়কোটি) টাকা বরাদ্দ করে উত্তোলনের পায়তারা করেছিলেন। ফ্যাসিষ্ট আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে আওয়ামী নেতা কর্মীদের সাথে সখ্যতা রেখে সুযোগ-সুবিধা নেওয়া বিধি বহির্ভূত নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে নতুন সভাপতিকে ফুল দিয়ে বিএনপি সাজিয়ে আবারও তার ষোলকলা পূরণ করার চেষ্টা করছেন। অথচ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নতুন সভাপতিকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য এমপিও ভুক্ত শিক্ষকদেরকে প্রয়োজন আছে বলেই মনে করেননি। এভাবেই তিনি এখন কলেজের শিক্ষকদের দুটি ভাগে বিভক্ত করে রেখেছে।