নিজস্ব প্রতিবেদক:
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ লোনাজল ভূমিতে প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠেছে গোল গাছের বাগান। গুড়ের তৈরি পায়েস কিংবা মুখরোচক খাবার পছন্দ করেন না এমন মানুষ কমই আছে।
কিন্তু মিষ্টিতে সুগার থাকায় সুস্বাদু বাহারি রকম খাবার খেতে পারেন না অনেকেই। তবে প্রকৃতির সৃষ্ট গোল গাছের বাগান থেকে আহরিত রস কিংবা গুড়ে সুগার কম থাকায় দিনে দিনে ক্রেতাদের কাছে এর কদর বেড়েছে কয়েকগুন।
পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলায় বিস্তৃর্ন এলাকায় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল থাকায় প্রাকৃতিকভাবে জন্ম৷ নিচ্ছে গোলগাছ। কিন্তু চাহিদা বাড়লেও ক্রমশই ধ্বংস করা হচ্ছে বাগান।ফলে বাগানের পাশাপাশি কমছে গাছিদের সংখ্যাও। গোল বাগান বিনষ্টের ফলে গুড় উৎপাদন কমে যাওয়ায় এখন অনেক গাছিরও পেশার পরিবর্তন হয়েছে।
ফলে রাষ্ট্রীয় ভাবে বাগান রক্ষা ও নদীর তীর কিংবা লোনা জলাশায়ে গোল বনায়নের দাবী গোলচাষী এবং গাছিদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, এই বাগান থেকেই বছরের প্রায় ৪ মাস সময় ধরে দুই দশক যাবৎ রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরীর মাধ্যমে জীবন জীবিকা চলছে প্রায় ৮ শতাধিক পরিবারের।
শীতের শুরুতেই বিকালে গাছের ডগা কেটে হাড়ি পাতেন গাছিরা। রাতভর হাড়িতে জমা রস কাকডাকা ভোরে সংগ্রহ করেন তারা। পরে চাতালে জাল দিয়ে কঠোর পরিশ্রমের মধ্যে দিয়ে তৈরী করা হয় গুড়।
আর এসব গুড় গাছিরা বিক্রি করছেন ১৭০ থেকে দুই’শ টাকা কেজি দরে। বিশেষ করে রোগাক্রান্ত মানুষের কাছে লবনাক্ত এই গুড়ের চাহিদা অনেক। পৌর শহরের ৫ নং ওয়ার্ডের বাসীন্দা জসিম মৃধা জানান, আমার ডায়াবেটিসের জন্য সব ধরনের মিষ্টি খাওয়া নিষিদ্ধ করেছেন চিকিৎসক। তবে লবনাক্ত গোল গুড়ে সুগার কম থাকায় অমি মাঝে মধ্যেই গোলের গুড় সীমিত খেতে পারি। আমার তাতে সমস্যা হয়না। এদিকে এই গুড়ের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও বাগান কমে যাওয়ায় কাঙ্খিত রস সংগ্রহ করতে পারছেন না গাছিরা।
এছাড়া বাগান ধ্বংসের ফলে রোজগার কমে যাওয়ায় পেশার পরিবর্তন করছেন অনেকে। গুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় গোলগাছ সংরক্ষনের দাবি কৃষি বিভাগেরও। কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউপির নবীপুর গ্রামের গাছি জীবন হাওলাদার ও বিমল হাওলাদার জানান, উপজেলার নীলগঞ্জ, তেগাছিয়া, নবীপুর গ্রামের ২৫ জন কৃষক এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীরা বাড়িতে গিয়ে অগ্রিম টাকা দিয়ে আসেন গুড়ের জন্য। কিন্তু ক্রমাগত বাগান ধংসের ফলে এখন ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে পারছেন না। তার দাবি বেড়িবাঁধের বাহিরে সরকারি খাস জমিতে গোল গাছ লাগিয়ে আমাদের দ্বায়িত্ব দিলে রক্ষনাবেক্ষন সহ এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারতাম।
একই গ্রামের রিতা রানী জানান,৬০ বছর ধরে এই কাজ করছি শুরুতে প্রতি ১৫ থেকে ২০ কলস রস পেতাম। এখন ৫ থেকে ৬ কলস রস পাই।
নবীপুর গ্রামের গাছি হরি নারায়ন মিত্র (৮৫) জানান, তার পূর্ব পুরুষ থেকে প্রায় ১৫০ বছর ধরে এই পেশায় নির্ভরশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে আসছেন।
তিনি বলেন, এর আগে আমার ছেলে মেয়ে ও পুত্রবধুও এই কাজে সংশ্লিষ্ট ছিলো। তারা এখন পেশার পরিবর্তন করে ভিন্ন পেশায় যোগ দিয়েছেন।
শুধু তাই নয়, গাছিরা বলছেন,প্রকৃতি রক্ষা এবং ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে বনায়নের পাশাপাশি গোলগাছ সংরক্ষনের কোন বিকল্প নেই। খুব দ্রুতই সরকারের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ। কলাপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এমআর সাইফুল্লাহ বলেন, গোলগাছ মানুষের ঘর নির্মাণসহ প্রকৃতি রক্ষায় একটি বড় ভূমিকা পালন করে।
এছাড়া গুড় থেকে বিশাল একটা অর্থ আয়ের পাশাপাশি হাজারো মানুষ এর উপর নিভর্রশীল হয়ে জীবীকা নির্বাহ করে।এমনকি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মানুষ সহনশীল পরিমানে গোলগুড় খেতে পারে বলে আমরা জানতে পেরেছি।গোলবাগান রক্ষায় আমরা উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। যাতে বাগান রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়।
পটুয়াখালী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা, আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেম,গোলবন সংরক্ষনসহ বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় আন্ধারমানিক নদী তীরসহ লোনাজল ভূমিতে গোলচারা রোপন করা হবে।এই গোল গাছ রক্ষা করাসহ সব ধরনের ব্যাবস্হা গ্রহন করা হবে।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ