মো সুমন মোল্লা
স্টাফ রিপোর্টার
ফরিদপুরে সোমবার দুপুরে জেলা পুলিশের প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়েছে ।
জেলার ভাঙ্গার হোগলাডাঙ্গী গ্রামে চাঞ্চল্যকর ধর্ষণসহ হত্যা মামলার মূল রহস্য উদঘাটন ও আসামী গ্রেপ্তার বিষয়ে প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার নিজ কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসব্রিফিং-এ সাংবাদিকদের বিভিন্ন তথ্য দেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।
প্রেসব্রিফিং এ অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শৈলেন চাকমা, ভাঙ্গা সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তালাত মাহমুদ শাহানশাহ উপস্থিত ছিলেন ।
প্রেস ব্রিফিং-এ পুলিশ সুপার জানান,
গত ২৮ জুন বিকেল ৫ টার দিকে ভাঙ্গা উপজেলা সদরের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের টুকু মাতুব্বর বাদিনীর বাড়িতে দৌড়ে এসে জানায় যে, বাদিনীর বাড়ির দক্ষিণ পাশের আলমগীর মোল্লার পাটক্ষেতে বাদিনীর মেয়ে রেখা এর লাশ পড়ে আছে। এ সংবাদে এলাকায় শোরগোল পড়ে যায়।
বাদিনী তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে গিয়ে তার মেয়ের লাশ শনাক্ত করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে এবং মৃত দেহের সুরতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে। পরে লাশের ময়না তদন্তদের জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় নিহত রেখা(১৫) এর মা মেরী আক্তার (৪২) অজ্ঞাতনামা আসামীর বিরুদ্ধে ভাঙ্গা থানায় একটি ধর্ষণসহ হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর পরই পুলিশ গুপ্তচর নিয়োগ ও তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত আসামী শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান শুরু করে।
তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ও স্থানীয় সূত্রের মাধ্যমে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে শাহজালাল ওরফে শাহাদাত কে শনাক্ত করে গত ২৯ জুন সন্ধ্যায় ভাঙ্গার হোগলাডাঙ্গী গ্রামের অভিযুক্তের বাড়ি থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
জিজ্ঞাসাবাদে সে ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে জানায় যে, ভিকটিম তার সম্পর্কে চাচাত বোন হয়। গত ২৮ জুন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে রেখা তাদের বাড়ির উত্তর পাশের পুকুরে গোসল করতে যায়। এ সময় রেখাকে মোবাইল ফোনে পর্ণো ছবি দেখানোর লোভ দেখিয়ে পুকুর পাড়ের পাশের আলমগীর মোল্লার পাটক্ষেতে নিয়ে অভিযুক্ত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত (১৬) ভিকটিমের সালোয়ার খুলে তাকে ধর্ষণ করে।
পরবর্তীতে ভিকটিম রেখা(১৫) ঘটনার কথা তার মা-বাবার কাছে বলে দেওয়ার কথা বলে। অভিযুক্ত তাকে ঘটনার বিষয়ে কাউকে না বলার জন্য অনুরোধ করে।
তবুও রেখা তার অনুরোধ না শুনে ঘটনা বলে দিবে বলে জানায়। তখন অভিযুক্ত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত (১৬) ক্ষুব্ধ হয়ে রেখার লাল রঙের সালোয়ার দিয়ে তার গলায় ফাঁস লাগিয়ে হত্যা করে পালিয়ে ঘটনাস্থলের পাশে রেললাইন এর দিকে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর সে নিজের বাড়িতে এসে ঘটনা তার বাবা টুকু মাতুব্বর (৫০) কে জানায়।
তখন তার বাবা তাকে গালমন্দ করে। এরপর অভিযুক্তের বাবা বিকেল ৫টার দিকে ধান ক্ষেত দেখতে যাওয়ার ভান করে ঘটনাস্থলে গিয়ে রেখার লাশ দেখে এসে নাটক সাজিয়ে নিহত রেখার মা মেরী আক্তারকে বলে যে, পাটক্ষেতে তোমার মেয়ে রেখার লাশ পড়ে আছে।
গ্রেপ্তার হওয়া অভিযুক্ত শাহজালাল ওরফে শাহাদাত (১৬) কে আদালতে সোপর্দ করা হয়। অভিযুক্ত স্বেচ্ছায় আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারা মোতাবেক দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে।