নিউজ ডেস্ক>
আজ ১৭ এপ্রিল। ১৩ বছর আগে ২০১২ সালের ঠিক এই দিনে বিএনপির তৎকালীন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য এম. ইলিয়াস আলী ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম হন। এদিনে রাতে রাজধানীর বনানীর বাসা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে তিনি আর বাসায় ফিরে যাননি। ছেলে গুম হওয়ার ১৩ বছর পরও সন্তানের পথ চেয়ে আছেন মা সূর্যবান বিবি।
ইলিয়াস আলীর মা, স্ত্রী, ভাই-বোন ও সন্তানরা আজও জানের না তােেদ প্রিয়জন বেঁচে আছে না মরে গেছে। তার সন্তানরা বাবার ছবি বারবার নেড়েচেড়ে দেখে, ইলিয়াস আলীর মা ছেলের ছবি দেখে দেখে চোখের পানি ফেলছেন। গত বছরের ৫ আগষ্ট দীর্ঘ টানা গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্যদিয়ে ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর গুম হওয়া অনেক ব্যাক্তি পরিবারের কাছে ফিরলেও আজও ফিরেননি ইলিয়াস আলী। এমনকি গুম-খুনের সাথে সম্পৃক্ত সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর তৎক্ষালিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের ইলিয়াস আলী ইস্যু নিয়ে দেয়া বক্তব্যে রীতিমতো ধুম্রুজাল সৃষ্টি হয়েছে। এতে করে দলীয় নেতাকর্মী ও পরিবারের হতাশা দিন দিন বাড়ছে।
কাঁদতে কাঁদতে বয়োবৃদ্ধ মা সূর্যবান বিবির চোখের জল শুকিয়ে গেছে। বুকে চাপা কষ্টকে পাথর চাপা দিয়ে স্ত্রী তাহসিনা রুশদীর লুনা দলকে শক্তিশালী করতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বড় ছেলে আবরার ইলিয়াস ব্যরিষ্টারী পাশ করেছেন, ছোট ছেলে লাবিবও বৃটেনে লেখাপড়া করছেন, আর একমাত্র ছোট্ট মেয়েটি আ জবড় হয়ে গেছে। তবুও এক শূণ্যতা যেন তাদেরকে তাড়া করে। ইলিয়াস আলীর সঙ্গে তার গাড়িচালক আনসার আলীরও গুম হন। পুত্র শোকে কাতর আনসার আলীর মা ছেলের মুখ না দেখেই মারা গেছেন। নিখোঁজ ইলিয়াস আলীকে অক্ষত অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে দেশব্যাপী চলা আন্দোলনর। প্রাণ হারান বিশ্বনাথ উপজেলার ৩ জন। স্বামীকে ফিরে পেতে তৎক্ষালিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ছুটে গিয়েছিলেন ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদীর লুনা। ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে গণভবনে নাটক মঞ্চস্থ করেন শেখ হাসিনা।
দীর্ঘ একযগেও গুম হওয়া এম. ইলিয়াস আলীর বিষয়ে কোন কার্যকর প্রদক্ষেপ নেয়নি হাসিনা সরকার। আর ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানের ৮ মাস পরও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ইলিয়াস আলীর কোনো সন্ধান দিতে পারেনি। আজও রহস্যই থেকে গেছে ইলিয়াস আলীর নিখোঁজ ঘটনা।
এদিকে, সিলেট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম. ইলিয়াস আলীর ১৩তম নিখোঁজ দিবস উপলক্ষে সিলেট জেলা বিএনপি কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কর্মসূচির মধ্য রয়েছে আজ বৃহষ্পতিবার সকাল ১১টায় কোর্ট পয়েন্টে মানববন্ধন ও দুপুর ১২টার স্মারকলিপি প্রদান।
সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটবাসীর প্রিয় নেতা এম. ইলিয়াস আলীকে আমরা প্রতিটি মূহুর্তে স্মরন করি। দলকে তিনি যেভাবে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন সেটি অতুলনীয়, এম. ইলিয়াস আলীকে সিলেটবাসীর খুবই প্রয়োজন। আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ^াস করি আমাদের নেতাকে ফিরে পাব। ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানের পর দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়া অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রতি আমরা জোর দাবি জানাই, অবিলম্বে আমাদের নেতাকে আমাদের মাঝে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করুন।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ্ সিদ্দিকী বলেন, টিপাইমুখে বাংলাদেশের স্বার্থের পরিপন্থী বাঁধ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে আধিপত্যবাদী শক্তির কাছে নতজানু ফ্যাসিস্ট রেজিমের প্রধান শেখ হাসিনার রোষানালে পরে সিলেটবাসীর প্রিয় নেতা এম. ইলিয়াস আলী গুম হয়েছিলেন। আমরা বিগত ১৩টি বছর থেকে তাকে ফিরে পাওয়ার আন্দোলনে রত রয়েছি। আমাদের বিশ্বাস ছিল, ২০২৪ এর ৫ই আগষ্ঠ ছাত্রজনতার গণঅভ্যূত্থানে হাসিনার রেজিমের পতনের পরে আমরা আমাদের প্রিয় নেতার সন্ধান পাব। ইতিমধ্যে অনেকেই গুমনামক আয়নাঘর থেকে বেরিয়ে আসলেও আমরা ইলিয়াস আলী বর্তমান অবস্থান কি তার সুষ্পষ্ট সুদুত্তর সরকারের কাছে আজও পাইনি। আমরা বর্তমান অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের কাছে অবিলম্বে আমাদের প্রিয় নেতা এম. ইলিয়াস আলী কোথায়, কি অবস্থায় রয়েছেন, তার সুষ্পষ্ট সদুত্তর চাই।