শাহারিয়ার পার্থ: গৌরনদী প্রতিনিধি:
বরিশালের গৌরনদীতে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে এক নারী ডাক্তারকে ধর্ষণ করে ভূয়া ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন ওরফে আরিফুল ইসলাম আরিফ উধাও হয়ে গেছে।
ইগউঈ জবম. হড়-অ৮০০০০ এর আসল (প্রকৃত) ডাঃ মো. জাকির হোসেনের নাম ও রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ব্যবহার করে ভূয়া এমবিবিএস ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন ওরফে আফিফুল ইসলাম আরিফ
গত আড়াই বছর ধরে গৌরনদী ও আগৈলঝাড়া উপজেলার ৬টি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করে চিকিৎসাসেবার নামে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ কাজে কয়েকটি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও স্থানীয় ২/১ জন সাংবাদিকের সহযোগীতায় গত আড়াই বছর ধরে চেম্বার করার অভিযোগ উঠেছে ভূয়া ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে।
গত ১০ মার্চ দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় অনলাইন সংস্করণে ’’প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে গিয়ে হাতেনাতে ধারা খেলেন ডাক্তার, অতপর..ও প্রিন্ট সংস্করণে ’’গৌরনদীতে প্রবাসীর সঙ্গে পরকীয়া চিকিৎসক আটক’’-
শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হলে এলাকায় হৈচৈ পড়ে যায়। গৌরনদী প্রতিনিধ অনুসন্ধান শুরু করলে ভূয়া ডা. জাকির হোসেন টের পেয়ে উধাও হয়ে যায়।
এক নারী ডাক্তার লিখিত অভিযোগে জানান, গৌরনদীতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে আসা যাওয়ার সময় ডা. জাকির হোসেন তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্তসহ প্রেম নিবেদন করে আসছিল।
এক পর্যায়ে ডা. জাকিরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। গত ১৫ ডিসেম্বর থেকে ৮ মার্চ সকাল পর্যান্ত বিভিন্ন সময়ে ২টি বাসাবাড়িসহ ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে (ওই নারী ডাক্তার) অসংখ্যবার ধর্ষণ করে ডা. জাকির হোসেন।
বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করলে জাকির তাকে বিয়ে করতে টালবাহানা করে আসছিল। গত ২মাসে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তার কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা ধার নেয় ডা. জাকির।
লিখিত অভিযোগে নারী ডাক্তার আরো জানান, গত ৮ মার্চ দিবাগত রাত ১১টার দিকে এক প্রবাসীর স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক কাজের সময় স্থানীয়রা হাতেনাতে ডা. জাকিরকে আটক ও মারপিট করে।
মোবাবাল ফোনে প্রভাবশালী ২/৩ ব্যক্তিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময় সেখান থেকে পার পেয়ে আসে। আটকের বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদা করলে তখন
ডা. জাকির তাকে বলেন, যুগান্তরের প্রকাশিত সংবাদিটি মিথ্যা ও শায়েস্তা করার জন্য যুগান্তরের গৌরনদী প্রতিনিধি ও তার ছেলেকে মাদক দিয়ে ধরিয়ে দিব।
এরপর থেকে জাকির তাকে এড়িয়ে চলতে থাকেন। কোন উপায় না পেয়ে সে (নারী ডাক্তার) গত ২০ মার্চ রাত ১০টার দিকে টরকী বন্দর একটি রেঁস্তোরায় গিয়ে প্রকাশ্যে ডা. জাকিরকে বিয়ের জন্য চাপ সৃষ্টি করেন।
এ সময় জাকিরের ২/৩ বন্ধুর সহযোগীতায় সেখান থেকে ডা. জাকির সটকে পড়ে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইগউঈ জবম. হড়-অ৮০০০০ এর আসল (প্রকৃত) ডাঃ মো. জাকির হোসেন ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার বিজয়নগর থানার বুধন্তি ইউনিয়নের কেনা গ্রামের মো. ফরিদউদ্দিন ও মোসাৎ আঙ্গুরা বেগমের ছেলে।
তিনি (প্রকৃত ডা.) দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেস্থেশিয়া’র কোর্সে অধ্যায়নরত রয়েছে। এদিকে ওই প্রকৃত ডাক্তারের বিএমডিসি’র রেজিস্ট্রেশন নাম্বার ও নাম ব্যবহার করে ভূয়া
এমবিবিএস ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন ওরফে আরিফুল ইসলাম আরিফ টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার সহবতপুর ইউনিয়নের সহবতপুর গ্রামের মোশারফ হোসেন ও মোসাৎ জাহানারা বেগমের ছেলে। তার এনআইডি নং- ১৯৭৭৯৩১৭৬৮৭১৮৯০৯৯
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, কথিত ডা. মো. জাকির হোসেন গত আড়াই বছর ধরে গৌরনদী উপজেলার একটি হাসপাতাল, টরকী বন্দর একটি, বাকাই একটি,
আগৈলঝাড়ার বাগদা একটি, মুলাদী উপজেলার রামচর একটি
চেম্বার করে রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে প্রতারনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এমনকি ভূয়া ডা. জাকির হোসেন আশোকাঠি একটি ক্লিনিকসহ ওইসব ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রোগীদের আল্ট্রাসোনোগ্রাম করে আসছিলেন।
প্রকৃত (আসল) ডা, মো. জাকির হোসেন বলেন, আমার বিএমডিসির রেজিষ্ট্রেশন নাম্বার ও নাম-ঠিকানা ব্যবহার করায় ওই ভূয়া ডাক্তারের বিরুদ্ধে দিনাজপুর কোতোয়ালী থানায় একটি জিডি দায়ের করেছি। আমি দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যানেস্থেশিয়া কোর্সে অধ্যায়নরত আছি।
উল্লেখিত অভিযোগ গুলোর ব্যাপারে ভূয়া ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেনের বক্তব্যের জন্য তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাাধিকবার ফোন করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
টাঙ্গাইল জেলার নাগরপুর থানার সহবতপুর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. ইব্রাহিম মিয়া মুঠোফোনে বলেন, ইম্যুতে পাঠানো ছবিটি আমার এলাকার বাসিন্দা মৃত মোশারফ হোসেন ওরফে মো. আব্দুলের ছেলে মোহাম্মদ জাকির হোসেন ওরফে আরিফুল ইসলাম আরিফের।
আরিফের ৪/৫টি নারী কেলেঙ্কারী ও অনেক প্রতারনার ঘটনা গ্রামবাসীরা শুনেছেন। বর্তমানে কোটিপতির এক মেয়েকে বিয়ে করে আরিফ মাঝে মধ্যে বাড়িতে আসে।
সহবতপুর ইউপির চেয়ারম্যান তোফায়েল মোল্লা মুঠোফোনে জানান, তার ইউনিয়নের হেরতা গ্রামের মোহাম্মদ জাকির হোসেন এলাকায় টাউট ও প্রতারক আরিফ নামে পরিচিত।
এক মরিচ ব্যবসায়ীর যুবতী কন্নার সঙ্গে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে আরিফ ওই যুবত মেয়েকে বিয়ে করতে না চাইলে গ্রাম্য এক সালিশ বৈঠকের মাধ্যমে আরিফের সঙ্গে ওই যুবতীকে বিয়ে দেওয়া হয়।
এর কয়েক মাস পর ওই বিয়ে বিচ্ছেদ হয়ে যায়। গত ৮/৯ বছর পূর্বে আরিফের বাবা মারা গেলে সে ঢাকার উত্তরায় গিয়ে একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে টেকনোলজিস্ট ও এক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কমপাউন্ডার হিসেবে কাজ করার কথা আমরা শুনেছি।
গৌরনদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মাজহারুল ইসলাম জানান, এ ব্যাপারে আমরা কিছুই জানি না।
লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গৌরনদীর ইউএনও মো. আবু আব্দুল্লাহ্ খান বলেন, আপনার কাছে এই প্রথম শোনলাম গৌরনদীতে এক ভূয়া এমবিবিএস ডাক্তার চেম্বার করে রোগীদের সাথে প্রতারনা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গৌরনদী ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যাসোশিয়েশনের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব শিকদার বলেন,
ভূয়া ডা. জাকির হোসেনের চেম্বার করার বিষয়টি আমি গত সপ্তাহে শোনার পর থেকেই কথিত ডা, জাকির উধাও হয়ে গেছে।
যে সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে চেম্বার করতেন তাদের পক্ষে একজনকে বাদি হয়ে থানায় মামলা করতে বলা হয়েছে।