মোঃ রিপন শেখ ভাঙ্গা (ফরিদপুর )প্রতিনিধি: ইতালি নেওয়ার কথা বলে লিবিয়ায় আটকে রেখে মুক্তি পণ দাবি ও মৃত্যুর ঘটনার মামলায় ভাঙ্গার মানব পাচার চক্রের সদস্য আনোয়ার মাতু্ব্বর কে গ্রেফতার করেছে রেপিড একশন ব্যাটেলিয়ান। মঙ্গলবার (১২ ই ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে নয়টার দিকে ঢাকা জেলার দোহার এলাকায় অভিযান চালিয়ে ভাঙ্গা থানার মানব পাচার মামলার এজাহার নামীয় প্রধান আসামি আনোয়ার মাতুব্বর কে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে তার অপরাধ স্বীকার করেছে।
রেপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান এর প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের কুমারখালী গ্রামের মিন্টু হাওলাদারের ছেলে হৃদয় হাওলাদার ও মানব পাচার চক্রের সদস্য আনোয়ার মাতুব্বর একই এলাকার বাসিন্দা। হৃদয়কে বেকার অবস্থায় ঘুরতে দেখে আনোয়ার তাকে উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকার বিনিময়ে দুই মাসের মধ্যে ইতালিতে পাঠানোর প্রস্তাব দিলে হৃদয় মাতুব্বর রাজী হয়ে যায়। পরবর্তীতে হৃদয়ের বাবা পহেলা নভেম্বর ২০২৪ সালে আনোয়ারকে এক লক্ষ ৫০ হাজার টাকা প্রদান করে এবং হৃদয়ের পাসপোর্ট তার হাতে দেয়। পরবর্তীতে ২০২৪ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখ আনোয়ার এবং হৃদয় হাওলাদার ইতালি যাওয়ার জন্য ঢাকায় আসে। একই দিন লিবিয়া গমন করে। কিন্তু হৃদয় লিবিয়া যাওয়ার পর মোবাইলের মাধ্যমে পরিবারকে জানায় যে, তাকে সেখানে নির্যাতন করা হচ্ছে। অবশিষ্ট ১৫ লক্ষ টাকা না দিলে তার ক্ষতি হবে। উপায়ান্তর না পেয়ে হৃদয়ের পরিবার ঐদিন আনোয়ারের নিকট বাকি ১৫ লক্ষ টাকা প্রদান করে। টাকা প্রদানের কয়েকদিন পর হৃদয় পরিবারকে জানায়, লিবিয়ায় থাকা মানব পাচার চক্রের অন্যান্য সদস্যরা তাকে আটকে রেখে নির্যাতন করছে। হৃদয়ের বাবা বিষয়টি তার প্রতিবেশী মানব পাচার চক্রের দালাল আনোয়ারকে জানায়। তখন আনোয়ার তাদের নিকট আরও ১০ লক্ষ টাকা দাবি করে এবং টাকা না দিলে হৃদয়কে ইটালি পাঠানো হবে না বলে জানায়। হৃদয়ের পরিবার ছেলের কথা চিন্তা করে পুনরায় আনোয়ারকে পাঁচ লক্ষ টাকা প্রদান করে। পরবর্তীতে ২০২৫ সালের ২২শে জানুয়ারি রাত আটটা ১০ মিনিটে হৃদয় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পরিবারকে জানায়, দালাল চক্র তাদের সাগর পাড়ে নিয়ে যাচ্ছে। তার কোন ক্ষতি হলে আনোয়ারকে যেন তারা ধরে। এরপর পরিবারের সদস্যরা আর তার কোন খবর পায়নি। ছেলের খবর না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা সংশ্লিষ্ট আদম ব্যবসায়ীর বাড়িতে গিয়ে জানতে চাইলে আদম ব্যবসায়ীরা তাদের বিভ্রান্তি মূলক তথ্য প্রদান করে এবং আত্মগোপনে চলে যায়। পরবর্তীতে ৩১ শে জানুয়ারি বিকেলে দালাল চক্র তাদের পরিবারের কাছে হৃদয় ও একই গ্রামের মজিবর হাওলাদারের ছেলে রাসেল হাওলাদারের লাশের ছবি পাঠায়।ছবি দেখে পরিবারের সদস্যগণসহ এলাকাবাসী শোকে কাতর হয়ে পড়ে। ঐদিন বিকেলে এলাকাবাসী দালাল চক্রের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। এ ঘটনায় হৃদয়ের বাবা মিন্টু হাওলাদার মানব পাচার চক্রের সদস্য আনোয়ার মাতুব্বর কে প্রধান আসামি করে গত ২রা ফেব্রুয়ারি ভাঙ্গা থানায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন ২০১২ এ একটি মামলা করেন।
এ ব্যাপারে ভাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোকছেদুর রহমান বলেন, মানব পাচার মামলার প্রধান আসামী আনোয়ার মাতুব্বরকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেফতার করেছে। তাকে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) আদালতের মাধ্যমে ফরিদপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।