বিশেষ প্রতিবেদক।
সিলেটের চোরাই রাজ্য হরিপুর এখন ধ্বংসস্তূপ। এক ঘটনায় আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে আনা হলো হরিপুরবাসীর দম্ভ। সেনা নজরদারিতে গোটা এলাকা। চিহ্নিত চোরাকারবারিরা ঘটনার পর থেকে এলাকায় নেই। প্রশ্ন উঠেছে, চিহ্নিতরা কোথায়। এখনো একজনকেও ধরা গেল না। সবাই লাপাত্তা হয়ে গেছেন। খবর-মানবজমিনের।
হরিপুরের একাধিক সূত্র বলছে, চিহ্নিত চোরাকারবারিরা এখন দেশে নেই। পাশে ভারতের মেঘালয় রাজ্য। সেখানেই পালিয়েছে তারা। সীমান্তের ওপারে থাকা চোরাকারবারিদের আশ্রয়ে রয়েছে তারা। সেনা ভয়ে তারা দেশেই থাকেননি। গোয়াইনঘাটের পেঠুয়া দুর্গম সীমান্ত দিয়ে তারা ২৮শে ফেব্রুয়ারি ভারত পালায়।
চোরাই রাজ্য হরিপুরে সেনা সদস্যদের ওপর হামলাকারী হিসেবে শীর্ষ ৬ চোরাকারবারিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হচ্ছে- ফতেহপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা আব্দুর রশিদ, বাজার সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন, সাবেক সভাপতি মো. আব্দুল্লাহ, যুবলীগ নেতা আজিজুর রহমান আজিজ, ব্যবসায়ী ফারুক আহমদ ও আলমগীর হোসেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রফিক আহমদসহ জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে তাদের থানায় আত্মসমর্পণের সুযোগ দেয়া হলেও সেটি না করে তারা দেশ ছেড়ে পালায়।
জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন- ঘটনার দিন রাতে যখন সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা বসেছিলেন তখন চিহ্নিতদের ডাকা হয়েছিল। বৈঠক থেকে জনপ্রতিনিধিসহ সেনা সদস্যরা ফোনে কথা বললেও তারা আসেনি। এরপর থেকে তারা এলাকা ছেড়ে পালায়। তবে কোথায় গেছে সেটি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা জানিয়েছেন, ২৬শে মার্চ রাত ঘটনার পর থেকেই তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। কেউ এলাকায় নেই।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, হরিপুর চোরাই রাজ্যে প্রতিদিন কয়েক কোটির ব্যবসা হতো। মালামাল আসতো জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাটের সীমান্ত রুট দিয়ে। এর মধ্যে গরু মহিষের চালান আসতো জৈন্তাপুর সীমান্ত আর গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে আসতো চিনি সহ কসমেটিক্সের চালান। সীমান্ত গলিয়ে আসা চোরাই চালান হরিপুর বাজারে উঠে গেলেই সেগুলো বৈধ হয়ে যেতো। মেঘালয়ের ডাউকি এলাকার চোরাকারবারিদের সঙ্গে সর্ম্পক রয়েছে হরিপুরের চোরাকারবারিদের। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার চোরাই চালান হরিপুর এসে বিক্রি হতো। পরে হুন্ডির মাধ্যমে ওই টাকা সীমান্ত দিয়ে ভারতে পাচার করা হতো। আর টাকা পাচারে হরিপুর সিন্ডিকেটরা মুখ্য ভূমিকা পালন করতো। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ ক’বছরে হরিপুর চোরাকারবারিদের তীর্থস্থানে পরিণত হয়। ওই সময় প্রতিদিন চোরাই চিনির শত কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
স্থানীয়রা জানান, হরিপুরের চোরাচালানের মূল নিয়ন্ত্রক আব্দুর রশিদ চেয়ারম্যান। সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রভাবশালী হওয়ার কারণে তাকেই ধরা হয় এ বাজারের মূল নিয়ন্ত্রক। তিনি উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি। হরিপুরে চোরাই ব্যবসা করে রশিদ চেয়ারম্যান এখন প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক। হরিপুরে প্রসাদসম বাড়ি নির্মাণ করেছেন। সিলেট নগরেও রয়েছে তার একাধিক বাসা। হরিপুরে চোরাচালান ব্যবসা যারাই করেছে তারা সবাই রশিদ চেয়ারম্যানের অনুগত।
চোরাকারবারি করে রশিদ চেয়ারম্যান একাধিক বিতর্কিত হয়েছে। এমনকি নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে হত্যাসহ একাধিক মামলায় আসামি হয়ে কারাবরণ করেছেন। রশিদ চেয়ারম্যানকে হরিপুরের চোরাই সিন্ডিকেটের ‘অক্সিজেন’ বলা হয়।
বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখেন বর্তমান বাজার সভাপতি হাজী হেলাল উদ্দিন। তিনি হরিপুরের চোরাই সিন্ডিকেটের সেকেন্ড ইন কমান্ড। বাজারে যাই ঘটুক হাজী হেলাল সমঝোতার মাধ্যমে সব ঘটনা নিস্পত্তি করে দেন। চিনি চোরাচালান করে হাজী হেলাল কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। সেনাবাহিনীর গাড়িতে হামলার ঘটনাকালে তিনি নেতৃত্বে ছিলেন বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
মো. আব্দুল্লাহ হচ্ছে বাজারের সাবেক সভাপতি। তিনি হরিপুরের চোরাই রাজ্যের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। পশু, চিনি ও কসমেটিক্স চোরাচালানের বড় একটি আব্দুল্লাহ নিয়ন্ত্রণ করেন। তিনিও কয়েক কোটি টাকার মালিক। ২৬শে মার্চ হরিপুরে মহিষবাহী যে ট্রাক সেনাবাহিনীর পিকআপকে চাপা দিয়েছিল সেই পশুর চালানের মালিক ফারুক আহমদ ও তার স্বজন আলমগীর হোসেন। ঘটনার দিন সেনা সদস্যরা গিয়ে পশুর চালানের মালিকের খোঁজ করছিলেন। তখনই তাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে।
বাজার নিয়ন্ত্রক ফারুক আহমদের পশু হওয়ায় চোরাকারবারিরা সংঘবদ্ধ হয়ে হামলা করে সেনা সদস্যদের ওপর। ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি আজিজুর রহমান আজিজ। তিনিও বাজারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক। তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আজিজ সিলেটের নেতাদের শেল্টার নিয়ে প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে হরিপুরকে চোরাই রাজ্যে পরিণত করেন।
হরিপুরের চোরাকারবারিদের মধ্যে সবচেয়ে প্রবীণ ব্যক্তি আব্দুর রফিক ওরফে লুদাই হাজী। কয়েক যুগ ধরে তিনি হরিপুরে চোরাই ব্যবসা করে আসছেন। হরিপুর বাজারের অন্যতম নিয়ন্ত্রক বলা হয় তাকে।
স্থানীয় ফতেহপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রফিক আহমদ জানিয়েছেন, অবৈধ ব্যবসা করবেন আবার দেশের সর্বোচ্চ বাহিনীর সঙ্গে বেয়াদবি করবেন সেটি কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না। এটা কোনো সভ্য আচরণ হতে পারে না। ঘটনার পর আমি অনেককেই ফোন দিয়েছিলাম। আসার জন্য ডেকেছিলাম। কিন্তু কেউ আমার কথা শোনেননি। উল্টো তারা পালিয়ে যায়। এতে করে রহস্য দানা বেঁধেছে বলে জানান তিনি।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ