শ্রীনগর (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি:
নিখোঁজের ২৩ দিন পর বন্ধুর বাড়ির পুকুরে পাওয়া গেছে স্কুলছাত্রের বস্তাবন্দি লাশ। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার ছয়গাঁও গ্রামের একটি পুকুরে কচুরিপানা পরিষ্কার করার সময় বস্তাবন্দি লাশটি ভেসে ওঠে। পরে বিক্ষুব্ধ জনতার হামলার আশঙ্কায় যৌথ বাহিনীর সহায়তায় লাশটি উদ্ধার করা হয়। এর আগে গত বুধবার স্কুলছাত্র রোমানের (১৬) সন্ধান দাবিতে বিক্ষুব্ধ ছাত্র ও জনতা সিরাজদিখান থানা ও সার্কেল অফিসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।
জানা গেছে, সিরাজদিখান উপজেলার থৈরগাও গ্রামের স্কুল ছাত্র রোমান গত ২১শে জানুয়ারি তার বাবার অটোরিকশা নিয়ে বের হয়ে নিখোঁজ হয়। এ ঘটনায় রোমানের বাবা মিরাজ শেখ বাদী হয়ে সিরাজদিখান থানায় জিডি করেন। পুলিশ জিডির সূত্র ধরে গ্রেপ্তার করে শ্রীনগর উপজেলার ছয়গাও গ্রামের রফিকের ছেলে সিয়াম (১৯) ও মনির ওরফে মানিককে (২৩)। তাদের কাছ থেকে রোমানের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে গ্রেপ্তার করা হয় সাতগাঁও গ্রামের এপ্রিল (২৪)কে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে গত ৩১শে জানুয়ারি সাতগাঁও গ্রামের সায়েদ ফকিরের বাড়ি থেকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা অটোরিকশা উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে এর আগে ছয়গাঁও গ্রামের আরেকটি পুকুর সেচে ফেলা হয়, খোঁজা হয় এই পুকুরটিতেও কিন্তু রোমানের সন্ধান হয়নি। আসামি গ্রেপ্তার, মোবাইল ফোন ও অটোরিকশা উদ্ধার হলেও রোমানের সন্ধান না পাওয়ায় গত বুধবার সিরাজদিখান থানা ও সার্কেল অফিসে ভাংচুর চালায়।
বৃহস্পতিবার বীরতারা ও কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তারা উদ্যোগ নিয়ে সিয়ামদের ঘরের নিচের পুকুরটিতে লোকজন দিয়ে কচুরিপানা পরিষ্কার শুরু করলে রোমানের লাশটি ভেসে উঠে। রোমানের লাশ ভেসে ওঠার খবরে প্রায় সহস্রাধিক জনতা সেখানে উপস্থিত হয়ে সিয়ামদের বাড়িঘর ভাঙচুর করে এবং তাদের ব্যবহৃত জিনিসপত্রে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে দুপুর একটার দিকে সেখানে শ্রীনগর ও সিরাজদিখান উপজেলার দুই নির্বাহী অফিসার, সেনাবাহিনী, র্যাব, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস এসে রোমানের লাশটি উদ্ধার করে। এ সময় দেখা যায়, রোমানের লাশটি কম্বল ও পলিথিন দিয়ে পেঁচিয়ে বস্তায় ভরে তার সঙ্গে সিমেন্টের খুঁটি ও ইট বেঁধে রাখা হয়েছিল।
স্থানীয়রা জানায়, সিয়াম ও মনিরের বাবা রফিক প্রায় ছয় মাস আগে এই এলাকায় এসে বাড়ি করে। তার আগে এই পরিবারটি শ্রীনগর উপজেলার কোলাপাড়া এলাকায় বসবাস করতো। সেখানে নানা রকম অপকর্মে লিপ্ত থাকায় তাদেরকে গ্রামছাড়া করা হয়।
পুলিশ জানায়, সিয়ামের বয়স কম হলেও সে নানা রকম অপরাধের সাথে জড়িত। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, ছিনতাইসহ একাধিক মামলা রয়েছে। নিজেকে আড়ল করতে সে এককে সময় এককে নাম ধরান করে। রোমানের অটোরিকশা নেয়ার জন্যই সিয়াম কৌশলে তার সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলে।
সিরাজদিখান সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার আ ন ম ইমরান খান জানান, গত ২১ জানুয়ারি বেলতলী জিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্র রোমান শেখ নিখোঁজ হন। পুলিশ এ ঘটনায় সিয়ামসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। পাশাপাশি উদ্ধার করা হয় অটোরিকশাটি। তবে আসামিরা পুলিশকে রোমানের বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়নি। ছয়গাঁও এলাকায় বস্তাবন্দি রোমানের লাশের সংবাদ পেয়ে লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পা
ঠানো হয়েছে।