স্টাফ রিপোর্টার, মোঃ সাইফুজ্জামান সুমন:
খুলনার সর্বদক্ষিণে সুন্দরবনঘেরা সমুদ্রউপকূলবর্তী উপজেলা কয়রা। অবস্থানগত কারণেই এখানে প্রায় প্রতি বছরই দুর্যোগে সড়ক নষ্ট হয়।
কয়রা উপজেলার ২১টি সড়কের সংস্কারকাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় ধুলাবালুর কারুণে এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। এসব সড়ক সংস্কারকাজের তদারকির দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দপ্তর (এলজিইডি)। চলমান এই ২৩টি সড়কে প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পিচঢালাই করা হবে বলে এলজিইডি কয়রা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর সংস্কারকাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি এবং এলজিইডির তদারকির অভাবকে দায়ী করছেন। ভুক্তভোগীরা। উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা যায় গ্রাম সড়ক পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় চলছে দুটি সড়কের কাজ। এর মধ্যে একটি কাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২২ সালের আগস্টে, অপরটি শেষ হয়েছে ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে। এছাড়া বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পল্লী সড়ক, অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প, গ্রামীণ সড়ক মেরামত ও সংরক্ষণ প্রকল্প এবং পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে বিভিন্ন সময়ে উপজেলার ৩৭টি সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ঠিকাদারদের কাছে এগুলোর কার্যাদেশও দেওয়া হয়। এর মধ্যে কাজ শেষ হয়েছে ১৬টি সড়কের। বাকি ২১টি সড়কের কাজের মেয়াদ শেষ হলেও সংস্কারকাজ মাঝপথে এসে বন্ধ হয়ে গেছে।এর মধ্যে ৪ টি কাজ বালিত করা হয়েছে ।নতুন করে টেন্ডারের আহবানের মাধ্যমে কাজ করা হবে । সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সড়ক নির্মাণে, ধীরগতি ও মানুষের দুর্ভোগের চিত্র দেখা গেছে। বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে সড়ক খুঁড়ে ফেলে রাখায় বৃষ্টি হলে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়। কোথাও সড়কে ইটের টুকরা ফেলে রাখায় উঁচু-নিচু সড়ক ও ধুলাবালুতে নাকাল হচ্ছে মানুষ। বাতাসে ধুলা উড়ে সড়কের দুই পাশের গাছের পাতাগুলোর রং লালচে আকার ধারণ করেছে। বাড়িঘরের চালা, সীমানাপ্রাচীর আর বেড়াগুলোতেও বসেছে লালচে ধুলার আস্তরণ। ধুলো থেকে বাঁচতে নাক-মুখ চেপে রাস্তায় চলতে হচ্ছে পথচারীদের। উপজেলার শাকবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ৬ নম্বর কয়রা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়ার সড়কটি সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২২ সালের মে মাসে। ২০২৩ সালের এপ্রিলে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। এখনো সেই কাজ শেষ হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে সড়কে বিছিয়ে রাখা ইটের খোয়াগুলো যানবাহনের চাকার আঘাতে গুঁড়া হয়ে লালচে ধুলায় ভোগান্তি পোহাচ্ছেন পথচারীরা। কয়রা সদর থেকে ৪ নম্বর কয়রার দিকে যেতে সড়কটির কার্যাদেশ দেওয়া হয় ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর। ১০ মাসের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো মাত্র ৩৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়া উপজেলার আরও ২১টি সড়কের সংস্কারকাজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ হয়নি। কাজের জন্য খোঁড়াখুঁড়ি করে রাখায় ধুলাবালুর এসব সড়ক দিয়ে যাতায়াত করতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। এসব কাজের ঠিকাদাররা জানান, নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির কারণে তারা ধীরগতিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছেন তারা।
এলাকাবাসি ও একাধিক ঠিকাদার অভিযোগ করে বলেন ,উপজেলা প্রকৌশলী দারুল হুদা ও সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন
কাজের চুক্তি ও বিল ছাড়ের সময় কমিশন নেওয়া, বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করা ,ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগসাজশ করে রাস্তাঘাট, ড্রেন, ব্রীজ, স্কুলসহ বিভিন্ন সরকারি উন্নয়নমূলক কাজে বিভিন্ন অনিয়মে তাদের সহযোগিতা করে আসছেন।কাজ পেলে চুক্তির সময় প্রাক্কলিত মূল্যের পাঁচ শতাংশ অফিস খরচ বাবদ ,দুই শতাংশ ইউএনও অফিস বাবদ দিতে হয়। এছাড়া নিয়ম মেনে কাজ শতভাগ সঠিকভাবে করা হলেও বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বের করে নানা অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করেন। অফিস খুশি রেখে খারাপ মানের উপকরণ দিয়েও কাজ করা যায়। অফিস খুশি না থাকলে যত ভালো কাজ করা হোক না কেন, খুঁত বের করেই ছাড়বেন। যার ফলে রাস্তাঘাটের আজ করুণ অবস্থা ।ভোগান্তি চরম পর্যায়ে পৌছায়ছে।দেখার যেন কেউ নেই ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সহকারী প্রকৌশলী আফজাল হোসেন দীর্ষদিন কয়রা উপজেলা কর্মরত আছেন ।বিগত দিতে আওয়ামীলীগের স্থানীয় নেতা ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে যোগসাজশে কাজ করছেন ।এখনো তিনি বহল তবিয়তে নানা অনিয়ম অব্যাহত রেখেছেন ।তার বিরুদ্ধে ঠিকাদের সাথে যুক্তি ভিত্তি কাজ করারও অভিযোগ রয়েছে ।
মহারাজপুরের দেড়ায়া গ্রামের আহসান হাবিব বলেন,কয়েকদিন আগে দেয়াড়া গোপালের মোড় থেকে হোগলা অভিমুখী প্রায় ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ সড়কটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে ।নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে কাজ করায় এর মধ্যে সড়কের কয়েক স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। রাস্তার কাজ চলার সময় নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রি নিয়ে প্রতিবাদ কররে উল্টো এলজিইডির লোকজন ঠিকাদারের পক্ষ নিতে নিম্ন মানের নির্মাণ সামগ্রি দিয়ে কাজ অব্যাহত রাখে ।যার ফলে কয়দিন না যেতে আমাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
কয়রা সদরের আলামিন ইসলাম বলেন ,
যে পরিমাণ কাজ হয়েছে, তাও নিম্নমানের হয়েছে। ফলে অনেক স্থানে নির্মাণ করা সড়কে ছোট বড় অনেক গর্তের সৃষ্টি হয়েছে । প্রায় সাড়ে তিন বছরেও সড়কের কাজ শেষ না হওয়ায় ধুলাবালি ও খান খন্দে এলাকাবাসিকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
১ নং কয়রা গ্রামের বাসিন্দা লিটন সরদার বলেন ,কয়রা সদর থেকে সরকারি পুকুরপাড় পর্যন্ত রাস্তাটির কাজ অসমাপ্ত রাখায় যানবাহন ও পথচারিদের যাতায়াতে খুব কষ্ট হচ্ছে।রাস্তাটি মেরামতের জন্য ঠিকাদারের একের পর এক ভায়া ঠিকাদারকে দায়িত্ব দিলেও কাজটি হচ্ছে না। সরকার বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতার কারনে কাজটি হচ্ছে না। আমরা আশা করি রাস্তার কাজটি যেন তাড়াতাড়ি করা হয়।
মহারাজ পুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মামুন গাজি বলেন ,এসব কাজ মাসের পর মাস পড়ে থাকে কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই। ঠিকাদারের নেতৃত্বে একদিন শ্রমিকরা কাজ করে এলাকাবাসীকে দেখায়,কাজ চলমান আছে। তারপর আবার অনেকদিন সেই কাজ শেষ না করা অবস্থায় রয়ে যায়। এভাবে মানুষের যাতায়াতের যে পরিস্থিতি থাকে, তাও নষ্ট হয়। কাজের নামে মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়িয়ে রেখে যায় এরা।তিনি স্থানীয় দায়িত্বশীলদের দায়ি করেন।
সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষায় কর্মরত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের সমন্বয়ক ওবায়দুল কবির সম্রাট বলেন, “সড়ক, বেড়িবাঁধসহ সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে চলমান অবকাঠামো উন্নয়ন নির্মাণ প্রকল্পগুলোর কাজ ঠিক সময়ে শেষ না হওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়ে গেছে।
“ঠিকাদারদের গাফিলতির পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট তদারকি সংস্থাগুলোর দুর্নীতিই এর জন্য দায়ী।”
উপজেলা সহকারি প্রকৌশলী আফজাল হোসেন বলেন ,কাজ ফেলে রাখায় বার বার চিঠি ইস্যু করেও ঠিকাদার কাজ না করায় কয়েকটি কাজ ইতিমধ্যে বাতিল করা হয়েছে ।কমিশন নেওয়ার বিষয়টি অযুক্তিক উল্লেখ করে তিনি কোন ঠিকাদার বলেছেন জানতে চেয়ে ফোন কেটে দেন ।
এ ব্যাপারে জানতে উপজেলা প্রকৌশলী দারুর হুদার কাছে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন ধরেননি ।
এলজিইডি খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ কামরুল ইসলাম সরদার বলেন ,সব বিষয় আমার জানা নেই আমি খোঁজ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্হা গ্রহণ করবো ।কমিশন নেওয়া ও উপজেলা কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন ঠিকাদারদের সুবিধা না দিতে পারতে তো তারা অভিযোগ করবে স্বাভাবিক ।