ভাঙ্গা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি: যানবাহনের দ্রুতগতি ও ওভারটেকিং প্রবণতা,ফিটনেস বিহীন গাড়ী চলাচল ,সংকীর্ণ সড়ক এবং হেলমেট বিহীন মোটরসাইকেল চালানোর কারণেই ভাঙ্গায় অহরহ সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে । ভাঙ্গা- ঢাকা এক্সপ্রেসওয়ে, ভাঙ্গা- বরিশাল , ভাঙ্গা -খুলনা কিংবা ভাঙ্গা- ফরিদপুর সড়কে ঘটছে এসব সড়ক দুর্ঘটনা। গত এক বছরে ঢাকা -ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েসহ হাইওয়ে সড়কে ৯৯ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১১৮ জন পুরুষ ও শিশু বাচ্চা,ও নারীসহ প্রাণ হারিয়েছে। আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। প্রতিটি সড়কেই যানবাহন চলাচলের আধিক্য এবং বেপরোয়া গতির কারণেই এসব দুর্ঘটনাগুলো বেশি ঘটছে বলে মনে করে সচেতন মহল।
সম্প্রতি ঢাকা -ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ধলেশ্বরী টোল প্লাজায় একটি যাত্রীবাহী পরিবহনের ধাক্কায় ৬ জনের মৃত্যু কিংবা ফরিদপুরের ভাঙ্গা টোল প্লাজায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাঁচটি গাড়ির দুর্ঘটনায় ফিটনেসহীন গাড়ি , চালকের অদক্ষতা কারনে এবং শৃঙ্খলা বোধের অভাবের প্রমাণ পাওয়া গেছে। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এসব সড়কে যানবাহন চলাচল সর্বোচ্চ গাড়ি বেড়েছে। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, ড্রাম ট্রাক , প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, মটর সাইকেল সহ অবৈধ থ্রী হুইলার, ইজিবাইক, ব্যাটারি চালিত রিকশা ও মটরবাইক চলাচলে অধিকাংশ চালকেরা মানছেনা সড়ক নীতিমালা। হাইওয়ে থানা পুলিশের তদারকি সত্ত্বেও বেপরোয়া গতির যানবাহনে ঘটছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনায় প্রাণহানির পাশাপাশি আহত হচ্ছে প্রচুর পরিমান যাত্রী। সড়কগুলোতে অবৈধ থ্রী হুইলার, রেজিস্ট্রেশন বিহীন মটরসাইকেল, ফিটনেস বিহীন যানবাহনের বেপরোয়া গতির চলাচলের কারণে এসব সড়ক দুর্ঘটনা বেড়েই চলেছে।
হাইওয়ে থানা পুলিশের হিসাব অনুসারে গত ১ বছরে ভাঙ্গা ও শিবচর হাইওয়ে থানার অন্তর্ভুক্ত সড়কে মোট দুর্ঘটনা ঘটে ১০২ টি। এরমধ্যে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানা এলাকার এক্সপ্রেসওয়ে ও হাইওয়ে সড়কে ৮০ টি এবং শিবচর এক্সপ্রেসওয়েতে ২২টি দুর্ঘটনা ঘটে।এতে প্রাণ হারায় ১১৮ জন এবং আহত হয় ১১১ জন। এর মধ্যে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার অন্তর্ভুক্ত এলাকায় ৯৩ জন এবং শিবচর এক্সপ্রেসওয়েতে ২৬ জন নিহত হন।এছাড়াও লোকাল থানার অন্তর্গত বিভিন্ন ফিডার সড়কেও দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত ডিসেম্বর মাসে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় একের পর এক সড়কে ঝড়েছে প্রাণ। মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ৫টি দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৮ জনের এবং আহত হয়েছে আরো ৫ জন। নিহতদের মধ্যে ৬ জনই কিশোর ও তরুণ রয়েছে। এসব দুর্ঘটনার পেছনে বেরিয়ে এসেছে বেশ কয়েকটি কারণ। সেগুলোর মধ্যে রয়েছে উঠতি বয়সি তরুণদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল ড্রাইভিং, ট্রাফিক আইন অমান্য, হেলমেট ব্যবহার না করা এবং বাস, মাইক্রোবাস , প্রাইভেট কার ও ট্রাকের বেপরোয়া এবং ওভার টেকিং প্রবণতা অন্যতম। এরমধ্যে তিনটি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রতিটি মোটরসাইকেলে তিনজন করে আরোহী ছিলেন। এসব দুর্ঘটনার পরও মহাসড়কে হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকেরা একাধিক আরোহী নিয়ে বেপরোয়া গতিতে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। তাদের অনেকেরই নেই লাইসেন্স ও গাড়ির বৈধ কাগজপত্র ।
ভাঙ্গা ও শিবচর হাইওয়ে থানা সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার(১ জানুয়ারি) ঢাকা -ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের পুলিয়া নামক স্থানে ভোর সাড়ে চারটার দিকে চাকা পাংচার হওয়া একটি ট্রাককে পিছন দিক থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ধাক্কা দিলে দুইজন নিহত হয়। এদের মধ্যে নিহত ট্রাক ড্রাইভার নুর আলম এর বাড়ী মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় এবং অন্য নিহত কাদের মিয়ার বাড়ি ঝিনাইদহ উপজেলা সদরে।
এছাড়া গত ৭ ডিসেম্বর বিকেলে ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের সলিলদিয়া এলাকায় ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ের সার্ভিস সড়কে
ডাম্প ট্রাকের বেপরোয়া গতিতে প্রাণ হারায় মোটরসাইকেল আরোহী ইমন খালাসী (২২) ও রমজান ওরফে তৌকির (২০) নামক দুই বন্ধু।
এর দুদিন পরেই ৯ ডিসেম্বর রাতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের নাগারদিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেপরোয়া ট্রাকের ধাক্কায় মারা যায় মোটরসাইকেলের চালকসহ দুই বন্ধু। তারা হলেন নগরকান্দা উপজেলার চরযশোরদি ইউনিয়নের আশফরদি গ্রামের হাবিব সরদারের ছেলে তাজিম সরদার (২২) ও ভাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম আলগী গ্রামের সেন্টু মাতুব্বরের ছেলে শাওন মাতুব্বর (২৫)।
১৬ই ডিসেম্বর বিকালে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা পৌরসভার নওয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অজ্ঞাত বেপরোয়া গতির বাস চাপায় মারা যায় দুই ব্যক্তি। তারা হলেন ফরিদপুর জেলা সদরের পশ্চিম আলীপুর এলাকার খন্দকার বজলুর রহমানের ছেলে খন্দকার মামুনুর রহমান (৪২) এবং অপরজন চরভদ্রাসন উপজেলার খালাসীডাঙ্গা গ্রামের পরশ কাপাসিয়ার ছেলে দীপক কাপাসিয়া গোপি (৪৫)।
এছাড়া ফরিদপুর -বরিশাল মহাসড়কটি সংকীর্ণ এবং বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও বাঁক থাকায় প্রতিনিয়তই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এছাড়া এ সড়কে পথচারী চলার মত কোন ফুটপাত না থাকায় প্রতিনিয়ত পথচারীরা রাস্তা পারাপার করা ও চলাচলে সময় এরা আতঙ্কে থাকেন।
এ ব্যাপারে ফরিদপুর -টেকেরহাট রুটের একটি লোকাল বাসের চালক শাহিন শিকদার(৩৫) বলেন, ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত রাস্তাটি এমনিতেই সংকীর্ণ। রাস্তায় বাস ট্রাকের পাশাপাশি ধীরগতি যানবাহন চলছে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে ।
ভাঙ্গা বাস স্ট্যান্ডে অপেক্ষমান একটি পরিবহনের বাস যাত্রী বরিশালের বাসিন্দা মোহাম্মদ হেমায়েত হোসেন জানান, ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত এক্সপ্রেসওয়ে প্রশস্ত। উক্ত এক্সপ্রেসওয়েতে বাসের ড্রাইভারেরা দ্রুত গতিতে গাড়ি চালায়। অন্যদিকে ভাঙ্গা থেকে বরিশাল পর্যন্ত সড়কটি সংকীর্ণ। এ সড়কে গাড়ির অত্যাধিক চাপ থাকে । এছাড়া এ সড়কে ধীর গতির ভ্যান ,অটো রিক্সা চলাচল করে। অনেক সময় চালকেরা।বিপরীত গাড়ি ভারটেক করতে গেলে প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে।
অপরদিকে ভাঙ্গা- খুলনা মহাসড়কটিতে বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা ক্রমশই বরিশাল ঢাকা ফরিদপুর ভাঙ্গা মহাসড়কে দুর্ঘটনা বেড়ে চলেছে।
ঢাকা থেকে বাগেরহাটগামী একটি পরিবহনের যাত্রী শাহ আলম তালুকদার জানান, ভাঙ্গা থেকে বাগেরহাটের নোয়াপাড়া পর্যন্ত রাস্তাটি আরো প্রশস্ত করা দরকার।দ্রুতগতি এবং ওভার টেকিং প্রবণতা মূলত সড়ক দুর্ঘটনার কারণ। এছাড়া অনেক সময় চালকেরা মোবাইল ফোনে কথা বলায় ব্যস্ত থাকে। বাসগুলোর গতি নির্ধারণের জন্য পুলিশকে আরো শক্ত ভূমিকা পালন করতে হবে। এছাড়া বাসগুলোর ফিটনেস পরীক্ষা করা জরুরি। গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি আরো প্রশস্ত করা দরকার।
এ বিষয়ে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার উপ পরিদর্শক মোঃ আব্দুল্লাহেল বাকী জানান, আমরা নিয়মিত সড়কে টহল দিচ্ছি। দক্ষিণ অঞ্চলের প্রবেশদ্বার ভাঙ্গায় সড়কে যানবাহন চলাচলে দিনরাত সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিয়ে যাচ্ছি। তারপরও চালকদের অসচেতনতার অভাবে এবং সড়কে ট্রাফিক আইন মেনে না চলার কারণে মাঝে মাঝেই দুর্ঘটনা হয়।আমরা সর্বদা চেষ্টা করছি সড়ক দুর্ঘটনা যাতে কমিয়ে আনা যায়। গাড়ি চালকদের সতর্ক করছি। বিভিন্ন অপরাধে শাস্তি দিচ্ছি। তবুও সবাইকে আরো সচেতন হতে হবে।
শিবচর হাইওয়ে থানার ওসি জহিরুল ইসলাম জানান, হাইওয়ে এক্সপ্রেসওয়ের প্রতিটি লেন অনেক প্রশস্ত। মাঝে মাঝে চালকেরা ওভারটেকিং করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়। আমরা নিয়মিত স্পিড গান ব্যবহার করে মামলা দিচ্ছি। তারপরেও প্রায়শই দুর্ঘটনা ঘটছে। সড়কের সিসি ক্যামেরার কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হলে হয়তো দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে। তাছাড়া চালক , পথচারী এবং পরিবহন মালিকপক্ষের আরো বেশি সতর্ক ও যত্নবান হতে হবে।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ