মোঃ শাহেদুল ইসলাম।
স্টাফ রিপোর্টার
সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন হত্যাকান্ডের মূলহোতা এবং আরসার জোন ও কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হাফেজ কামাল ও তার দুই সহযোগী আটক বিদেশী রাইফেল ও দেশীয় অস্ত্র-গুলিসহ কক্সবাজারের উখিয়ার ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও পালংখালীর রোহিঙ্গা বাজার এলাকা থেকে র্যাব-১৫ কর্তৃক গ্রেফতার
১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সব সময় বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অত্যন্ত অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। সৃষ্টিকাল থেকে এলিট ফোর্স র্যাব জঙ্গি, মাদক ব্যবসায়ী, অপহরণকারী, ছিনতাইকারী, মানবপাচারকারী, প্রতারক, চাঁদাবাজ, বিভিন্ন মামলার আসামী, শীর্ষ সন্ত্রাসী এবং অবৈধ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
২। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মূর্তিমান আতঙ্কের নাম আরসা সন্ত্রাসী গোষ্ঠি। এই সন্ত্রাসী সংগঠন আরসা’সহ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিদ্যমান অন্যান্য সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো আধিপত্য বিস্তার ও রোহিঙ্গা নাগরিক প্রর্ত্যাবাসনে বিঘ্ন ঘটানোর নিমিত্তে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ তৈরী এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মায়ানমার নাগরিকদের শরণার্থী শিবির ও পার্শ্ববর্তী এলাকাসমূহে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, অগ্নি-সংযোগসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। এছাড়াও কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে গিয়ে চোরাগুপ্তা হামলা ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। যার কারণে শরণার্থী শিবির ও স্থানীয় এলাকায় সবসময় আতংক বিরাজ ও জনসাধারণ ভীত সন্ত্রস্ত থাকে।
৩। র্যাব বিভিন্ন সময়ে সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান পরিচালনা এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণের জন্য সার্বক্ষনিক পর্যবেক্ষণ করে আসছে। সন্ত্রাস বিরোধী বিভিন্ন অভিযানের মাধ্যমে আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদ/ অর্থ সম্পাদক মাওলানা মোহাম্মদ ইউনুস/ গান কমান্ডার রহিমুল্লাহ @ মুছা/ অর্থ সমন্বয়ক মোহাম্মদ এরশাদ @ নোমান চৌধুরী ও আবু তৈয়ব/ কিলার গ্রুপের প্রধান নূর কামাল @ সমিউদ্দিন/ ইন্টেলিজেন্স সেল এর কমান্ডার ওসমান গনি র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। এছাড়াও লজিস্টিক শাখার প্রধান, গান গ্রুপের প্রধান, প্রধান সমন্বয়ক, অর্থ শাখার প্রধান, আরসা প্রধান নেতা আতাউল্লাহর দেহরক্ষী আকিজ, মৌলভী অলি আকিজ এবং গান গ্রুপ কমান্ডার জাকারিয়া’সহ সর্বমোট ১১৮ জন আরসা সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। তাদের নিকট থেকে ৫৩.৭১ কেজি বিস্ফোরক, ০৫টি গ্রেনেড, ০৩টি রাইফেল গ্রেনেড, ১০টি দেশীয় তৈরী হ্যান্ড গ্রেনেড, ১৫টি বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, ৫৭টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র, ১৮৩ রাউন্ড গুলি/কার্তুজ, ৬৭ রাউন্ড খালি খোসা, ০৪টি হাত বোমা, ০৪টি আইডি ও ৪৮টি ককটেল উদ্ধার করা হয়।
৪। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন কারণে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী কর্তৃক ২০২৩ সালে ৬৪ জন এবং ২০২৪ সালে অদ্যাবধি পর্যন্ত ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এছাড়াও আপনারা জানেন, গত ০২ জুলাই ২০২৪ তারিখ রাত অনুমান ০২.৩০ ঘটিকার দিকে উখিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীদের মধ্যে সৃষ্ট সংঘর্ষে একজন নৈশ প্রহরী নিহত হয়। এ লক্ষ্যে র্যাবের পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা শাখা ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা শাখা একযোগে কাজ শুরু করে। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি যে, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘঠিত হত্যা, গুম, অপহরণ ও অগ্নিকান্ডের নেপথ্যে আরসার কিলিং গ্রুপ কমান্ডার ও ক্যাম্প-১৭ এর জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল রয়েছে। এ সকল হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রোধে র্যাব-১৫ বিশেষ গোয়েন্দা তৎপরতা ও নজরদারী বৃদ্ধি করে।
৫। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১০ পদাতিক ডিভিশনের গোয়েন্দা শাখা ও রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব হাফেজ কামালের অবস্থান সম্পর্কে তথ্য পায়। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে র্যাব-১৫ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল গতকাল অনুমান ১৫.৩৫ ঘটিকায় উখিয়ার পালংখালীর রোহিঙ্গা বাজারের নিকটস্থ মরাগাছতলায় অভিযান পরিচালনা করে হাফেজ কামালের অন্যতম সহযোগী মোহাম্মদ সাইফুল, পিতা-বলি আমিন, ক্যাম্প-১৮, ব্লক-৮, উখিয়া, কক্সবাজার’কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
৬। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত সাইফুল বর্তমানে আরসার কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হাফেজ কামালের অন্যতম সহযোগী ও দেহরক্ষী হিসেবে নিয়োজিত রয়েছে। পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত সাইফুল হতে প্রাপ্ত তথ্যের সূত্র ধরে র্যাবের চৌকস আভিযানিক দল গতকাল অনুমান ১৮.০৫ ঘটিকায় উখিয়ার ৪নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পুনরায় অভিযান পরিচালনা করে। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি বুঝতে পেরে পলায়নের চেষ্টাকালে জোন-১৭ (ক্যাম্প-৪, ক্যাম্প-৪ এক্সটেনশন এবং ক্যাম্প-১৭ নিয়ে জোন-১৭) এর জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল (৩৫), পিতা-নজির আহম্মদ, মাতা-মমতাজ বেগম, ক্যাম্প-৪, ব্লক-ডি/৯ এবং তার অন্যতম দেহরক্ষী আনসার উল্লাহ (২০), পিতা-মোহাম্মদ ইসলাম, মাতা-গুলবাহার, ক্যাম্প-৪, ব্লক-ডি/৩ উভয়ের মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প, উখিয়া, কক্সবাজার’দ্বয়কে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। উক্ত অভিযানে একটি বিদেশী জি-৩ রাইফেল, ০১টি দেশীয় তৈরী এলজি এবং ০৭ রাউন্ড গুলি ও ০১টি খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সাথে সংশ্লিষ্ট থেকে খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে।
৭। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃতরা জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত পার্শ্ববর্তী দেশের নাগরিক। গ্রেফতারকৃত হাফেজ কামাল ২০১৭ সালে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-৪, কুতুপালং এ সপরিবারে বসবাস শুরু করে। সে ২০১৮ সালের প্রথমে আরসার কমান্ডার হাফেজ আইয়াজ এর মাধ্যমে আরসায় যোগদান করে এবং ক্যাম্প-৪, ব্লক-ডি/৯ এর আরসার সাব জিম্মাদার হিসেবে নিয়োগ পায়। অতঃপর হাফেজ আইয়াজ এর মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী দেশে প্রশিক্ষণের জন্য গমন করে। দীর্ঘ ০৬ মাস প্রশিক্ষণ শেষে সে অবৈধভাবে বাংলাদেশে ফিরে আসে এবং ক্যাম্প-৪, ব্লক-ডি এর আরসার জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পায়। সে পুনরায় ২০১৯ সালের মাঝামঝি সময়ে আরসা নেতা আবদুস সালামের মাধ্যমে ০৪ মাসের প্রশিক্ষণে পার্শ্ববর্তী দেশে গমন এবং প্রশিক্ষণ শেষে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসে। সে ২০২০ সালের প্রথম থেকে ক্যাম্প-৪ এর আরসার জিম্মাদার হিসেবে দায়িত্ব পায়। সে ২০২২ সালে এপিবিএন পুলিশ কর্তৃক মাদকসহ গ্রেফতার হয় এবং ০৪ মাস কারাভোগ শেষে পুনরায় ক্যাম্পে প্রবেশ করে আরসার জোন-১৭ এর তৎকালীন কমান্ডারের গান গ্রুপের সদস্য হিসেবে যোগ দেয়। তারপর সে বিভিন্ন হত্যাকান্ডে অংশগ্রহণ করে। আরসার মগবাগি ওসমান র্যাবের হাতে আটক হওয়ার পর আরসার সেকেন্ড-ইন-কমান্ড খালেদের নির্দেশে গ্রেফতারকৃত হাফেজ কামাল’কে আরসার জোন-১৭ এর গান গ্রপের সেকেন্ড ইন্ড কমান্ড হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়। পরবর্তীতে মাষ্টার আবুল হাশিমও র্যাবের হাতে আটকের পর আরসা প্রধান আতাউল্লাহর নির্দেশে হাফেজ কামাল আরসার জোন-১৭ এর প্রধান এবং কিলিং গ্রুপের প্রধান কমান্ডার হিসেবে দায়িত্বে নিয়োগ পায়। সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ঘটে যাওয়া হত্যাকান্ডের দিক-নির্দেশনা প্রদানসহ সে কিলিং গ্রুপ কমান্ডার হিসেবে প্রত্যক্ষভাবে বিভিন্ন কিলিং মিশন ও অপরাধমূলক কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করতো। এছাড়াও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিভিন্ন নাশকতা, মারামারি, হত্যা, অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, চাঁদাবাজি ও আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে থাকে। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ০৭টি হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধে মোট ১১টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
৮। গ্রেফতারকৃত আনসার উল্লাহ ২০১৭ সালে পরিবারের সাথে সীমান্ত পার হয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ হতে বাংলাদেশে প্রবেশ এবং ক্যাম্প-১৮ এ বসবাস শুরু করে। সে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর আরসার সক্রিয় সদস্য এবং গ্রেফতারকৃত জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল এর অন্যতম সহযোগী ও দেহরক্ষী। সে জোন কমান্ডার হাফেজ কামাল নেতৃত্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নাশকতাসহ নিজেদের আধিপত্য বিস্তারসহ হত্যা, গুম, অপহরণ, অস্ত্র, মাদক, নাশকতা সৃষ্টি ইত্যাদি অপরাধে সরাসরি অংশগ্রহণ করতো।
৯। গ্রেফতারকৃত মোহাম্মদ সাইফুল আরসার নেট গ্রুপের সক্রিয় সদস্য ও গ্রেফতারকৃত হাফেজ কামাল এর সহযোগী হওয়ার সুবাদে তাকে কাজে লাগিয়ে তার মাধ্যমে ক্যাম্পের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ, প্রশাসনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ এবং সর্বোপরি মাদক ও অস্ত্র এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনের কাজে তাকে ব্যবহার করতো। সে হাফেজ কামালের নেতৃত্বে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্রিক নানাবিধ সন্ত্রাসী কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত ছিল। তার বিরুদ্ধে কক্সবাজারের উখিয়া থানায় ০১টি মাদক মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।
১০। গ্রেফতারকৃত আরসা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ