স্টাফ রিপোর্টার- চিরিরবন্দর থেকে :- ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাঁকড়া নদীর উপর নির্মাণাধিন সেতুর কাজ ৭ বছরেও শেষ হয়নি ঠিকাদার লাপাত্তা । ফলে স্থানীয় বাসিন্দাসহ সর্বমহলে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, চিরিরবন্দর উপজেলার ভিয়াইল ইউনিয়নের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে কাঁকড়া নদী । স্থানীয় এলাকাবাসীর অভিযোগ, পরিবেশ অনুকূলে থাকলেও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নানান অজুহাতে অনেক সময় কাজ বন্ধ রেখেছিল। শুধু তাই নয় শুরু থেকেই কাজে ধীরগতি ছিল। সেতুটি সম্পূর্ণ না হওয়ায় বর্ষায় ও শুষ্ক মৌসুমে নৌকা দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানান বয়সের মানুষজনকে। এতে করে সময় ও টাকা দুটোই নষ্ট হচ্ছে। সেতুটি চালু হলে এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যেত। অন্যদিকে সচেতন মহল বলছেন-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি, কাজের ধীরগতি ও সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারি না রাখায় শেষ হচ্ছে না সেতুটির কাজ।
প্রায় ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণকাজ ২০১৯ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০২৫ সালে এসেও প্রায় ৬০ ভাগ কাজ শেষ করেননি ঠিকাদার। এতে দুই ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তিতে।
নদীর পশ্চিম পাশে ইউনিয়ন পরিষদ, ভূমি অফিস, ইউপি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র ও নদীর পূর্ব-উত্তরে চিরিরবন্দর উপজেলা শহর। নদীর পূর্ব পাশে ইউপি সেবা নিতে গেলে মানুষকে প্রায় আট থেকে দশ কিলোমিটার ঘুরে যেতে হয়। আর বর্ষাকালে নৌকায় পারাপারের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। নদীর পশ্চিম পাশের মানুষ উপজেলা শহর কিংবা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ঘুরে আসতে হয়। এ ভোগান্তি দূর করতে উপজেলার ভিয়াইল গ্রামের ভিয়াইল ঘাটে একটি সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
চিরিরবন্দর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্র জানায়, ২০১৭ সালের অক্টোবরে ১৭৫ মিটার আরসিসি গার্ডার সেতুটির জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয় ১৪ কোটি ৮৩ লাখ ৬৪ হাজার টাকা। সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সেতুর কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসে। কিন্তু ২০২৫ সালে এসে এখনো সেতুর ৪০ ভাগ কাজ বাকি আছে। এর আগে দুই দফা নির্মাণের মেয়াদকাল শেষ হওয়ার আগেই কাজ বন্ধ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এরপর ২০২৩ সালের জুনে আবার কাজ শুরু হয় কিন্তু ১৫ জুলাই সকালে সেতুর চার নম্বর ক্রস গার্ডারটি নদীতে ভেঙ্গে পড়ে। এরপর কাজ বন্ধ রেখে পালিয়ে যান ঠিকাদার। তখন থেকে সেতুটি এভাবেই পড়ে আছে। নতুন করে সেতুটির টেন্ডার দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে এলজিইডি।
স্থানীয় ভিয়াইল গ্রামের ভ্যান চালক সুবল রায় বলেন, ভ্যান নিয়ে খুব কষ্ট করে নদী পার হতে হয়। শীতকালে নদীতে পানি না থাকায় বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হওয়া গেলেও বর্ষাকালে খুব সমস্যা হয়। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটির কাজ বন্ধ। দ্রুত সেতুটির কাজ শেষ হলে আমাদের কষ্ট দূর হবে।
একই গ্রামের আউয়াল হোসেন বলেন, সেতুটি না থাকায় আমরা দীর্ঘদিন থেকে নদীর দুই পাড়ের মানুষ ভোগান্তি নিয়ে বসবাস করছি। সেতুটির নির্মাণকাজ শুরু হলে আমরা গ্রামবাসী খুশি হলাম যে আমাদের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি শেষ হবে। কিন্তু কীসের ভোগান্তি দূর হলো উল্টো বেশি করে ভোগান্তি বাড়ল। সাত থেকে আট বছর ধরে এখানে সেতু হচ্ছে হচ্ছে কিন্তু কাজ আর শেষ হয় না। এখন দেখি ঠিকাদার সবকিছু নিয়ে পালিয়েছে। আমাদের দাবি দ্রুত সেতুর বাকি অংশের কাজ শেষ করে আমার ভোগান্তি দূর করা হোক।
স্থানীয় নদীপাড়ের বাসিন্দা পারভিন আক্তার বলেন, আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। কোনো জরুরি দরকারে নদী পার হতে হলে বর্ষাকালে দীর্ঘসময় নদীর পাড়ে নৌকার জন্য অপেক্ষা করতে হয়। আবার কেউ হঠাৎ করে অসুস্থ হলে দ্রুত উপজেলা হাসপাতালে নেওয়া যায় না। নৌকার জন্য অপেক্ষায় থাকলে রোগীর সমস্যা বেশি হয়ে যায়। এজন্য কয়েক কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে যেতে হয়।
জয়পুর গ্রামের একাধিক ব্যক্তি বলেন, দীর্ঘদিন থেকে সেতুটির নির্মাণকাজ চলছে। কিছুদিন বন্ধ থাকে আবার শুরু হয়, আবার কখনো নদীতে সেতুর গার্ডার ভেঙে পড়ে। ঠিকাদার ও স্থানীয় এলজিইডির গাফিলতিতে আমাদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে।
একই এলাকার রইসুল ইসলাম বলেন, জরুরি কাজে নদী পার হয়ে ইউনিয়ন পরিষদে যেতে কয়েক কিলোমিটার ঘুরতে হয়। আমার চাই বর্তমান সরকার সেতুটির কাজ দ্রুত শেষ করে আমাদের কষ্ট দূর করুক।
এ বিষয়ে চিরিরবন্দর উপজেলা প্রকৌশলী মোঃ মাসুদার রহমান বলেন, ঠিকাদার অসুস্থ থাকায় সেতুটির প্রায় ৪০ ভাগ কাজ শেষ করতে পারেননি। নতুন করে টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। সেই টেন্ডার প্রক্রিয়াটি শেষ হলে দ্রুত সেতুর বাকি অংশের কাজ শেষ হবে।