নুরুল কবির, বিশেষ প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী গ্রামে ১২৮ তম ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (১৮ ফেব্রুয়ার) বিকালে অনুষ্ঠিত ঘোড়দৌড় প্রতিযোগীতায় ৫ টি ঘোড়া অংশগ্রহণ করে। পরে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার তুলে দেন লোহাগাড়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম খান। উদ্ধোধন করেন আমিরাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম ইউনুচ। এসময় উপস্থিত ছিলেন লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির যুগ্ন আহবায়ক আবদুল মালেক, ইউপি এরশাদুজ্জমান মামুন উদ্দিন প্রমুখ। প্রতিযোগিতা উপলক্ষে আমন ধানের ফাঁকা বিস্তীর্ণ মাঠে বসে গ্রামীণ মেলা। মূল মেলা একদিন হলেও মেলার আগে ও পরের দিনও চলে মেলার বেচা-কেনা। মেলার মূল আকর্ষণ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা বিধায় এটি ঘৌড়দৌড় মেলা হিসেবে এতদঅঞ্চলে ব্যাপক পরিচিত।
গ্রামীণ এ মেলা কেন্দ্র করে উপজেলা ও আশপাশের এলাকার মেয়েরা স্বামী-সন্তানসহ বাপের বাড়ি বেড়াতে আসেন। ঐতিহ্যবাহী মুখরোচক খাবার মুড়ি-মুড়কি, মোয়া, নিমকি, গজা, খোরমা, কলাই, চানাচুর, বাদাম , মিঠাই, বাতাসা, লাল গুড়ের জিলাপিসহ সবই পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। এছাড়াও প্লাস্টিক ও মাটির তৈরি শিশুদের বিভিন্ন খেলনা ও নারীদের বিভিন্ন প্রসাধনী সামগ্রীর পাশাপাশি গৃহস্থালির বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। তবে ছোট্ট শিশুদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে নাগরদোলা। মেলায় প্রায় তিন দশক ধরে মিঠা মলাই বিক্রি করেন মিয়া হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকেই এই মেলা দেখে আসতেছি। আমার বাপ দাদারাও দেখে আসছেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামলে প্রতিজনের হাতে মিষ্টি – মিঠাই ভর্তি পাতিল নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায় । কথিত আছে মিষ্টা – মিঠাই ভর্তি এই পাতিল মেয়েদের শুশুর বাড়িসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার আত্মীয়-স্বজনদের নিকট পাঠানো হয়।’ শৈশবের স্মৃতি তুলে ধরে আমিরাবাদ ইউনিয়নের শিহাব উদ্দিন বলেন, ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে আসতাম। মেলা উপলক্ষে এই এলাকায় ঘরে ঘরে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আত্মীয়-স্বজনরা মেলা উপলক্ষে গ্রামে এসেছে।তিনি আরো বলেন, ‘ছোট বেলায় মাটির ব্যাংকে টাকা-পয়সা জমা করে রাখতাম। যাতে ওই টাকা নিয়ে মেলায় আসতে পারি। সে টাকা দিয়ে মাটির ও প্লাস্টিকের তৈরি খেলনা সামগ্রী কিনতাম আর নাগরদোলায় চড়তাম। মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সৈয়দুল আবরার বলেন, শত বছরের এই মেলা দেখতে আশপাশের উপজেলার নানা শ্রেণিপেশার হাজারো মানুষের আগমন ঘটে। গ্রামে বাড়ি বাড়ি চলছে উৎসব। প্রশাসনসহ এলাকার সকালের সহযোগিতায় প্রতি বছর শান্তিপূর্ণভাবেই মেলা শেষ হয়।
জানা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের সুনামধন্য আলেম হযরত মাওলানা ছৈয়দ মোফাজ্জলুর রহমান (রহঃ) লোহাগাড়ায় এ ঘৌড়দৌড় প্রতিযোগিতা ও গ্রামীণ মেলার প্রবর্তন করেছিলেন। শতবর্ষী ও প্রাচীনতম ঘোড়দৌড় মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছর এই ঘোড় দৌড় মেলা অনুষ্ঠিত হয়।