মো: আলামিন সরকার সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি দৈনিক বিকাল বার্তা:
কুয়াশামাখা তীব্র শীত উপেক্ষা করে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার কৃষকরা প্রায় প্রতিটি কৃষি জমি এমনকি শুকিয়ে যাওয়া বিভিন্ন খাল-বিল, নদীর অববাহিকায় বছরের প্রধান বোরো ধানের চারা রোপণ করা শুরু করেছে।
আজ ২/০২/২০২৪ রোজ শুক্রবার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় যে, উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা, কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ থেকে চলছে পানি সেচ, ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার দিয়ে জমি চাষের কাজ, মই দিয়ে করছে জমি সমান। আবার বোরো ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে ধানের চারা। কৃষকদের শরীরে রয়েছে শীতের পোষাক, মাথায় গরম কাপড়। কৃষক-কৃষরীরা রয়েছে ফুরফুরে মেজাজে। কেউবা জমিতে হাল চাষ দিচ্ছে, কেউবা জমির আইলে কোদাল মাড়ছে, কেউ জৈব সার দিতে ব্যস্ত, আবার কেউ সেচের জন্য ড্রেন নির্মাণ কিংবা পাম্পের বা শ্যালো মেশিনের জন্য ঘর তৈরি করছে। অনেকে তৈরি জমিতে পানি সেচ দিয়ে ভিজিয়ে রাখছে, কেউ বীজতলা থেকে নানা জাতের বোরো ধানের চারাগাছ তুলে রোপণ করছে। রবি সরিষা উত্তোলন করার পরেই মূলত তারা ব্যস্ত হবেন প্রধান কৃষিশষ্য ধান চাষে। নিম্নাঞ্চল হওয়ায় উপজেলার সবর্ত্র বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়ে প্রায় ৩-৪ মাস ফসলি মাঠ পানির নিচে থাকে। বন্যার পানি জমি থেকে নেমে যাওয়ার পর দ্বিতীয় প্রধান কৃষিশস্য রবি সরিষা চাষ শুরু হয়। এরপরেই বন্যার পানি প্রবেশের আগ পর্যন্ত চলে বোরো ধান চাষ। শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ বছর উপজেলার ১৩ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভায় বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে হাইব্রিড হিরা-২ জাতের ৩ হেক্টর, হিরা-৬ জাতের ৪ হেক্টর, তেজগোল্ড ১৫ হেক্টর, এসএল. এইট. এইচ ৩০ হেক্টর, শক্তি-২ জাতের ৩ হেক্টর, ছক্কা ২২ হেক্টর, মাহীকো ১ হেক্টর, সিনজেন্টা ১২০৩ জাতের ৩৯ হেক্টর, মহারাজ ২০ হেক্টর, এগ্রো-১৪ জাতের ৬ হেক্টর, ইস্পাহানী ৬ হেক্টর ও মায়া ১০ হেক্টর। উফশী ব্রি ধান ২৮ জাতের ৬০ হেক্টর, ব্রি ধান ২৯ জাতের ৪৫০ হেক্টর, ব্রি ধান ৫০ জাতের ২ হেক্টর, ব্রি ধান ৫৮ জাতের ৭০ হেক্টর, ব্রি ধান ৭৪ জাতের ১০ হেক্টর, ব্রি ধান ৮৮ জাতের ৫ হেক্টর, ব্রি ধান ৮৯ জাতের ২৫৯ হেক্টর, ব্রি ধান ৯২ জাতের ৫৫ হেক্টর, ব্রি ধান ১০০ জাতের ৫ হেক্টর, বিনা ধান-২৫ জাতের ৫ হেক্টর, সুবলতা ২০ হেক্টর ও কাটারীভোগ ১৫ হেক্টর। স্থানীয় জাতের সাদা বোরো ১০ হেক্টর ও কালো বোরো ১০ হেক্টর। মোট ২২ হাজার ৬৮০ হেক্টর। এরই মধ্যে প্রায় ৯ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়েছে।
উপজেলার হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের কৃষক মোঃ আলম, গোলাপ ও মজিদ জানান- আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্ক দূর হয়েছে। তবে শীতের তীব্রতা রয়েছে, এরকম আবহাওয়া বেশিদিন থাকলে বোরো চাষে ব্যাঘাত ঘটবে। আর আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে বিগত বছরের মতো এ বছরেও বোরো চাষাবাদ ভলো হওয়ার আশা করছে কৃষকরা। শাহজাদপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জেরিন আহমেদ বলেন- এ উপজেলার প্রধান কৃষি ফসল ধান হওয়ায় সর্বত্রই চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করছে কৃষকরা। উপজেলার সব এলাকার কৃষকই বোরো আবাদে নিজস্ব বীজতলা করেছে। বীজতলায় চারার মানও ভালো আছে। তিনি আরো জানান- উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের বোরো চাষে বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। প্রায় ২২ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। শীতের তীব্রতা বেশি দিন স্থায়ী হবে না বলে তিনি আশা প্রকাশ করে জানান- আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য মতে শীতের তীব্রতা ২/১ দিন থেকে অনুকুলে আশার সম্ভাবনা রয়েছে।