মাসুদ রানা, খানসামা (দিনাজপুর) প্রতিনিধি; দিনাজপুরের খানসামার মাঠে মাঠে হাওয়ায় দুলছে আমন ধানের সবুজপাতা, আর আনন্দে দুলছে কৃষকদের মন। কৃষকের মনে উঁকি দিচ্ছে এক ভিন্ন আমেজ। সবুজ ঘেরা রোপা আমনের মাঠ দেখে বারবার ফিরে তাকায় কৃষক, থমকে দাঁড়ায় পথিক। নতুন সাজে সেজেছে বাংলার প্রকৃতি।
এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বৃষ্টি না হওয়ায় রোপা আমন লাগাতে কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। আষাঢ় মাসের মাঝামাঝিতে আমন ধান চাষ করার নিয়ম থাকলেও বৃষ্টি না হওয়ায় তা পারেননি কৃষকরা। ধান রোপন নিয়ে কৃষক পড়ে বিপাকে। দেরীতে বৃষ্টি হলেও ইতিমধ্যে আমন রোপন লক্ষ্যমাত্রার শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ১৩ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে চাষাবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা থেকে বেশি হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, আমন ধানের ক্ষেত প্রকৃতির খেয়ালে গাঢ় সবুজ রঙ ধারণ করেছে। সবুজে ঘেরা রোপা আমনের মাঠে কৃষক ব্যস্ত সময় পার করছেন। ধানগাছ ভাল রাখতে ও ধানের উৎপাদন বাড়াতে কৃষকরা ক্ষেতের ঘাস পরিষ্কার, সার ও বালাইনাশক ঔষধ প্রয়োগ ও পার্চিংসহ সার্বক্ষণিক পরিচর্যা করছেন। মাঝে মধ্যে হচ্ছে বৃষ্টি, আমন আবাদের জন্য আবহাওয়া রয়েছে অনুকূলে। তাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছে কৃষকরা। আর কিছুদিন পরই কৃষকদের আমন ক্ষেতে বের হবে মৌ মৌ গন্ধ। এর পরই সকলের নজর কাড়বে সোনালি ধান। সোনালী স্বপ্নে সোনালী ধানে ভরে উঠবে কৃষকের শূন্য গোলা। গৃহিণীর মুখে ফুটবে হাঁসি।
উপজেলার আলোকঝাড়ী ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের কৃষক খলিলুর, লিটন আব্দুস সালামসহ কয়েকজন কৃষকের সাথে বললে তারা জানায়, এবার ভরা বর্ষায় বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে জমি চাষাবাদ করতে হয়েছে। জ্বালানি তেল, সার, বীজ ও কীটনাশকের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বিঘা প্রতি আমন আবাদে খরচ হয়েছে আগের তুলনায় প্রায় এক থেকে দেড় হাজার টাকা বেশি। যদি ভাল ফসল হয় তবেই এসব পুষিয়ে নিতে পারবো।
আজহার নামে অপর আরেক কৃষক জানান,পোকামাকড় কিংবা আগাছা জনিত কারণে যাতে ফসল নষ্ট না হয় সে কারণে সব সময় নজরদারি করছি। সময় মতো জমিতে ধান রোপন ও সার সহ বিভিন্ন কীটনাশক প্রয়োগ করতে পেরেছি বলে ধান গাছ দ্রুত বেড়ে উঠেছে। মাঠে এসে জমির দিকে তাকালে মন খুশিতে ভরে উঠে।
জাহাঙ্গীরপুর গ্রামের কৃষক নুরুল বলেন, কয়েকদিনেই হামার ফসলের মাঠ অনেক সুন্দর হইছে। চারদিকে শুধু সবুজ আর সবুজ দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, ইতিমধ্যে উপজেলায় শতভাগ রোপা আমন রোপণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমানে রোপা আমন ধানের ক্ষেত সবুজে ভরে উঠেছে। কৃষি অফিস থেকে আমরা সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নিচ্ছি। মাঠপর্যায়ে উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাগণ কৃষকদের সময়মত পরামর্শ দেওয়ায় আমন ক্ষেতে গত বছরের থেকে এবার রোগবালাই কম। তাই এবারও আমরা ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছি।