এস এম রনি সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার ঠিকাদার সফিউর রহমান শফির অত্যাচারে অতিষ্ট সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তারা। চাঁদা আদায়ে ব্যবহার করা হতো একজন পুলিশ ধর্ম কর্মকর্তা ও সংসদ সচিবালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে।
সূত্র জানায়, গত ১৫ বছর নিজেকে আওয়ামী সরকারের লোক, পৌর আ’লীগ নেতা ও পতিত সরকারের একজন পুলিশ কর্মকর্তা ও একজন সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তার নাম ভাঙ্গিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে দু’টি বিভাগে (পওর—১ ও ২) নিয়ন্ত্রণ নিতে কর্মকর্তাদের জিম্মি করে রাখতো। ঠিকাদারি কাজের চেয়ে তার আগ্রহ বেশি ছিলো চাঁদাবাজিতে। ইচ্ছামত চাঁদা দাবি করতো, না দিলেই হয়রানি। ফোন ধরিয়ে দেওয়া হতো কথিত সেই দুই কর্মকর্তাকে। নতুন কাজ টেন্ডার হলে তাকে একটা কাজ দেওয়াই লাগবে লাইসেন্স না থাকার পরেও এমন ভাবেও মানসিক নির্যাতন করতো অফিসারদের। সে সময়ে শফির চাঁদাবাজির বিষয়টি প্রকাশ্যে না আসলেও বর্তমানে কর্মকর্তারা মুখ খুলতে শুরু করেছেন।
এদিকে, গত ৫ আগষ্ট আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর নতুন রুপ ধারন করেছেন বহু অপকর্মের হোতা শফিউর রহমান শফি। জানা গেছে, বর্তমানে নিজেকে বিএনপির স্থানীয় নেতা পরিচয় দিয়ে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী (১) এর কাছ থেকে সম্প্রতি ২ লাখ টাকা চাঁদা নিয়েছে শফি একই ভাবে নির্বাহী প্রকৌশলী ২ এর কাছ থেকে শহরের ইটাগাছাস্থ ওয়ার্ড বিএনপি’র অফিসের চেয়ার ও টেবিল কেনার জন্য ২৫ হাজার টাকা চাঁদা নিয়েছেন কথিত বিএনপি নেতা ও একসময়ের ঠিকাদার সফি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের শীর্ষ দুই কর্মকর্তাই চাঁদা আদায়ের ব্যাপারে কথা বলতে রাজি না হলেও, বলেন আমরা খুবই যন্ত্রনায় আছি। লেখালিখি না করারও অনুরোধ করেন নির্বাহী প্রকৌশলীদ্বয়।
এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব চেয়ারম্যান মো: আব্দুল আলিম বলেন, শফিউর রহমান শফি নামের কোন ব্যবসায়ী বা ব্যক্তি আমাদের সংগঠনে নেই। যদি চাঁদা দাবী করে তাহলে তাকে আটক করে প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে বলেন তিনি।
ইটাগাছা এলাকার শাহীন জানান, শফি আমাদের এলাকায় থাকলেও তার বাড়ি মূলত সীমান্তে। সাতক্ষীরা শহরে সে ফটকা শফি নামে সর্বাধিক পরিচিত। তিনি কয়েক বছর আগে ঠিকাদারী করতেন এখন সে বিভিন্ন সরকারি অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারি ও শহরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের বিরুদ্ধে ভূয়া অভিযোগ দিয়ে হয়রানি করে। দু’এক জায়গা থেকে টাকা খেয়ে চেপে যায়। বর্তমানে তার এই পেশা ছাড়া আর কোন কাজ নেই।
সফির কালো থাবা থেকে রেহাই পাননি সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক প্রকৌশলী মো: আবুল খায়ের, তিনি জানান, দু’জন সরকারি কর্মকর্তার ফোন ধরিয়ে দিয়ে শফি তার কাছ থেকে দায়িত্বে থাকা কালিন সময়ে জোর পূর্বক চাঁদা নিয়েছে। যার মধ্যে একজন সংসদ সচিবালয়ের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা ও আরেকজন পুলিশ কর্মকর্তা দাবী করতেন তারা। তিনি পরবর্তীতে টাকা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে নানান চক্রান্ত করে চলেছে শফি। তিনি আরো বলেন, সে সময় তাকে টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। সময় পরিবর্তন হয়েছে আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবো।
তিনি কি কি অভিযোগে আপনাকে ঘায়েল করতেন এমন প্রশ্নে মো: আবুল খায়ের আরো বলেন, টাকার লোভ তার পিছু ছাড়েনি। বিভিন্ন ভূয়া ও ভিত্তিহীন অভিযোগ দিয়ে সে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। তিনি বলেন, কোন ভুয়া প্রকল্প বানানোর সুযোগ নেই। প্রকল্প অনুমোদন হয় পরিকল্পনা কমিশনে একনেক কিংবা মাননীয় পরিকল্পনা উপদেষ্টার অনুমোদনে। উক্ত প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার পরে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে যথাক্রমে জিও ও এও জারী করার পরে এডিপিতে বরাদ্দ প্রদান করা হয়। কাজেই ভুয়া প্রকল্প হলে কখনোই বরাদ্দ পাওয়া যাবে না। বেড়ীবাঁধে টেন্ডারবিহীন কোন কাজ বাস্তবায়ন করা হয়নি। ডিপিএম কাজ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ও রুলস অনুযায়ী একটি অনুমোদিত পদ্ধতি। এ পদ্ধতি কখন কোথায় ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে সুষ্পষ্টভাবে ক্রয় আইন ও ক্রয় বিধিমালায় বলা আছে। উক্ত বিধিমালা অনুসরন করে ডিপিএম পদ্ধতি ব্যবহার করে ফনী, আম্ফান, বুলবুল, ইয়াস বিভিন্ন ঘূর্ণিঝড়ের পরে সাতক্ষীরা এলাকার বেড়ীবাঁধ মেরামত করা হয়। আম্ফানের সময় ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা এতো বেশী হয়েছিল যে সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত মোতায়েন করতে হয়েছিল। বাপাউবো এর পক্ষে বেড়ীবাঁধে ডিপিএম কাজের ঘোষনা করা হয় তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী এর মাধ্যমে। তিনি নিজে এসে বাঁধ পরিদর্শন সাপেক্ষে বিবেচনা করেন যে বাঁধে এ মুহুর্তে ডিপিএম পদ্ধতিতে কার্যক্রম গ্রহণ না করা হলে বাঁধের ক্ষতি হবে কিনা এবং বাঁধ ভাঙ্গলে মানুষের জানমালের ক্ষতি হবে কিনা। এ সকল বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে আলোচনার সিদ্ধান্তের আলোকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী জরুরি ঘোষণা করেন। কাজেই নির্বাহী প্রকৌশলী এর নিজের মনগড়াভাবে ডিপিএম পদ্ধতিতে কাজ বাস্তবায়ন করার কোন সুযোগ নেই।
ঘূর্ণিঝড়ের পরে যদি জরুরী মেরামতের জন্য দরপত্র আহবানের অপেক্ষা করতে হয় তাহলেতো বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করতে কমপক্ষে দুই মাস সময় প্রয়োজন হবে। সে সময়তো জনগনের দুর্ভোগ আরো বৃদ্ধি পাবে। সবাই দরপত্র আহবানের জন্য অপেক্ষা করবে আর সাধারণ মানুষ জোয়ার ভাটায় প্রতিদিন ডুববে।
টেন্ডার ছাড়া বাপেউবো’তে কোন কাজ করার সুযোগ নেই। টেন্ডার ছাড়া যদি ঠিকাদার আবুল কালাম আজাদ কাজ করেন তাহলে ইজিপি এর টেন্ডার আইডি ৫১০৭১৭ কিভাবে আসলো। একটি প্রকল্পের অধীনে আহবানকৃত প্যাকেজের ইজিপি আইডি পাওয়া কখনো প্রকল্প অনুমোদনের আগে সম্ভব নয়।
সাতক্ষীরার ব্যবসায়ী সফিউর রহমান এর নামে দীর্ঘদিন যাবত কোন কার্যাদেশ হয়নি। ঠিকাদারি কাজের প্রকৃত নিয়ম কানুন না জেনে মানুষকে হয়রানী করার উদ্দেশ্যে এ ধরনের অভিযোগ করেন। ইতোপূর্বে তিনি সাতক্ষীরা পওর বিভাগের পূর্বের নির্বাহী প্রকৌশলী এর বিরুদ্ধে জরুরী কাজ নিয়ে দুদকে আবেদন করেন। কিন্ত তদন্তে তার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। এ দরপত্র যখন অনুমোদন করা হয় তখন এ অভিযোগকারী তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এর নিকট কাজ চেয়েছিলেন। কিন্তুু আইন ও বিধি অনুযায়ী তাকে কোন কাজ দেয়া সম্ভব হয়নি। এ কারণে তিনি তৎকালীন নির্বাহী প্রকৌশলী এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। সেই সময়ে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন যে কিভাবে কাজ বাস্তবায়ন করে সে বিষয়টি তিনি দেখে নিবে।
এদিকে অফিস সূত্রে জানা গেছে, সফিউর রহমানের নিজস্ব কোন লাইসেন্স নেই। কেবলমাত্র এলটিএম এর একটি লাইসেন্স আছে। বর্তমান নির্বাহী প্রকৌশলীকে গত অর্থ বছরে তাকে অন্যের নামে কাজ দিতে বাধ্য করেছেন।
সফির ব্যবহৃত পুলিশের স্টিকার লাগানো গাড়িটি অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে পান্নি উন্নয়ন বোর্ডের অফিস চত্তরে রেখেছে। এব্যাপারে কারো টু’শব্দ করার ক্ষমতা নেই। কারন হিসাবে দেখা গেছে, তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে দুদকের ভয় দেখায়। দুদকে অভিযোগ করবে বলে হুমকি দিয়ে অফিসের যে কোন ধরনের কাজ করেন লাইসেন্স বাতিল হওয়া ঠিকাদার শফি। তার কাজে বাঁধা দেওয়ার মত কেউ নেই।
অফিস চত্তরে পুলিশের ষ্টিকারযুক্ত গাড়ি কিভাবে থাকে ও গাড়ির মালিক কে এমন প্রশ্নের জবাবে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান জানান, আমি এব্যাপারে কোন তথ্য দিতে পারবোনা। পরে জানানো হবে।
এদিকে, সাতক্ষীরায় খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, সফির গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বাঁশদহ গ্রামে। গ্রামে বসবাসকালীন সময়ে স্বর্ণ, অবৈধভাবে গরু চোরাকারবারসহ নানা অভিযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয়রা। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান সাতক্ষীরার সর্বস্তরের জনসাধারন।
এব্যাপারে সফিউর রহমান সফি সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি ঠিকাদার তাই পানি উন্নয়ন বোর্ডে আমার যাতায়াত আছে। আমি ফকির না যে বিএনপি অফিসের জন্য টাকা নেব। আমি কখনো খারাপ কাজ করিনি।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ