বিশেষ প্রতিনিধি: মাদকের হাট’ সিলেটের কাস্টঘর। হাত বাড়ালেই পাওয়া যায় মাদক। চোলাই মদের জন্য বিখ্যাত ওই এলাকা। সুইপার কলোনিকে ঘিরেই সব আয়োজন সেখানে। ওই সুইপার কলোনিই পরিণত হয়েছে ক্রাইম জোনে। সন্ধ্যা নামলেই ভুতুড়ে পরিবেশ তৈরি হয় ওখানে। নেশার রাজ্যে পরিণত হয় কাস্টঘর। পাশেই বাণিজ্যিক এলাকা মহাজনপট্টি। সূর্য ডোবার সঙ্গে সঙ্গে ভয়ে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ করে চলে যান। কাস্টঘরের সুইপার কলোনি নিয়ে ব্যবসায়ীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এ নিয়ে বহু আন্দোলন, দাবি জানিয়েছিলেন তারা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। সংশ্লিষ্টদের ঘুম ভাঙেনি।
গলির মুখ থেকেই শুরু হয়েছে মাদকের রাজ্য। কাস্টঘরের সুইপার কলোনিতে বসবাস করে সুইপাররা। অনেক আগেই নিরিবিলি ওই এলাকায় সুইপারদের বসবাসের জন্য সরকার থেকেই ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছিল। এখন সেখানে কয়েকশ’ সুইপারের বসবাস। নিয়ম হচ্ছে সুইপাররা নিজেরা তৈরি করে চোলাই মদ পান করতে পারবেন। তবে সেটি তারা করবেন নিজেদের বাসায়।
বাইরে মদ বিক্রি করা যাবে না। কিংবা বাইরের কাউকে সুইপার কলোনিতে মদ সেবনের সুযোগ দেয়া যাবে না। কিন্তু ওই নিয়ম কেবল খাতাপত্রেই। চোলাই মদ শুধু নয়, সব মাদকের আস্তানা হচ্ছে এটি। চোলাই মদ আছে সেটি খুব কম। এখানে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের মদ পাওয়া যায়। পাশাপাশি ইয়াবার বড় আড়তে পরিণত হয়েছে সুইপার কলোনি।
আর গাঁজার পাইকারি আস্তানাও। শুধু কলোনিই নয়, বাইরেও কিছু কিছু বাঙালি যুবক মাদক আস্তানা গড়ে তুলেছে। কাস্টঘরের সুইপার কলোনির নামেই তারা এই মাদক আস্তানাগুলো পরিচালনা করেন। সন্ধ্যা নামলেই সুইপার কলোনি সরব হয়ে উঠে। ওই কলোনির প্রতিটি ঘরই যেনো একেকটি মাদক আস্তানা। ছিমছাম পরিপাটি করে সাজানো প্রতিটি ঘরে দামি সোফাসেট, চেয়ার রয়েছে।
পর্দায় আচ্ছাদিত এসব ঘরে ভিড় জমান বাইরে থেকে আসা মাদকসেবীরা। তারা ওইসব ঘরে বসে মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বিঘ্নে মাদক সেবন করেন। আর কয়েকটি বিশেষ ঘর রয়েছে যেগুলোতে কেবল সেবন করা হয় ইয়াবা ও হেরোইন। মাদকের নিরাপদ জোন হওয়ায় ইয়াবার বড় চালান পরিচালিত হয় কাস্টঘর থেকে। ইয়াবার ডিলাররা আস্তানার ভেতরে প্রকাশ্যেই খুচরো বিক্রেতাদের কাছে ১০০ থেকে ২০০ পিস করে ইয়াবা বিক্রি করেন।
সিলেট শহরের বন্দরবাজার সহ আশেপাশের ইয়াবা ব্যবসায়ীরা প্রয়োজন মতো সুইপার কলোনি থেকে ইয়াবা সংগ্রহ করেন। আর এসব ইয়াবায় সয়লাব হয়ে যায় নগরীর অর্ধেক এলাকা। সিলেট নগরীর কয়েকটি মাদক আস্তানায় সন্ধ্যারাতেই ডিলারদের মাধ্যমে মাদক চলে যায় বিভিন্ন আস্তানায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সুইপার কলোনি সন্ধ্যারাতেই সরব হয়ে উঠে।
সুইপার কলোনীর বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে মাদক ব্যবসায়ী মাদকের ডিলার সেলিম। সেলিমের নেতৃত্বে এই মাদক ব্যবসা সামলান তার বিশ্বস্ত গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাদেপাশা ইউনিয়নের উত্তর আলমপুর গ্রামের মৃত মাহমদ আলীর ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেন ওরফে ইয়াবা আবুল, জাফলংয়ের মেকানিক রাজু, তাহার সমন্ধি শাহিন আহমদ। তারা সুকৌশলে এখানে ইয়াবা, মদ, গাঁজা সহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য দেদারসে বিক্রি করে যাচ্ছেন। তারা কিছু অসাধু পুলিশ ও সাংবাদিককে ম্যানেইজ করে এই মাদক ব্যবসা নির্বিঘ্নে চালিয়ে যাচ্ছে।
এমনকি তারা তাদের নিজস্ব গাড়ী দিয়ে কাস্টঘরের সুইপার কলোনির সেলিমকে ইয়াবা,গাজা, মদ, হেরোইন ও ফেনসিডিল সাপ্লাই দেয় বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানিয়েছে।
সুইপার কলোনি হওয়ায় পুলিশের নজরধারী কম, ফলে এখানে অপরাধীরা বেপরোয়া। নগরীর যুবসমাজ থেকে শুরু করে সকল বয়সী মাদকাসক্ত ব্যক্তির আনাগোনা দেখতে পাওয়া যায়। ভয়াল মরণ নেশা মাদকের ধ্বংসের হাত থকে আধ্যাতিক নগরীর যুবসমাজকে বাঁচাতে এখানে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান জরুরী হয়ে পরেছে বলে অভিমত প্রকাশ করছেন বিজ্ঞমহল।
জানা যায়, সিলেট সিটি কর্পোরেশন (সিসিক) কর্তৃক কাস্টঘরের সুইপারদের পরিচ্ছন্ন কর্মী হিসেবে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। কিন্তু বর্তমানে সুইপার পরিচ্ছন্ন কর্মীরা টাকার বিনিময়ে বাঙ্গালি লোক দিয়ে তাদের কাজ করায়। তারা এখন পরিচ্ছন্নকর্মীর কাজ না করে নানা ধরনের মাদকদ্রব্য বিক্রি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে।
কাষ্টঘর সুইপার কলোনীর এই মাদকদ্রব্যে প্রকাশ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের কারণে সিলেট নগরীর অভিজাত এলাকার শাহজালাল উপশহর এইচ ব্লক দক্ষিণ সুরমা ব্রিজের নিচে কাশবন জিঞ্জুস শাহ মাজার, বাঁশপালা মার্কেট বালুর মাঠ, কাশেমের আস্তানা দক্ষিণ সুরমা নিয়ন্ত্রণ করেন রুমন নাজু হারুন পাখি আলমগীর আবুল কাশেম বাহিনী চাঁদনীঘাট নতুন রেল স্টেশনের টেকনিকেল রোড বাবুল মিয়ার কলোনি্,কুমিল্লা পট্টি পাশে হুমায়ুন চত্বর কদমতলী, গোটা টিকর, একদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন বাস টার্মিনাল পুলিশ ফাঁড়ি দক্ষিণ সুরমা থানা, থাকা স্বত্বেও মাছিমপুর, তের রতন, বউবাজার সুপারিঘাট সবজি বাজার, বেতের বাজার আশপাশ এলাকা সহ পূণ্যভূমি সিলেটের যুবসমাজের বৃহৎ একটি অংশ ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অথচ দেখার কেউ নেই!
মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাকের ডগায় এতোবড় অপকর্ম হলেও তারা দেখেও না দেখার ভান করে বসে আছেন। আর সাংবাদিক সমাজ অদৃশ্য কারণে এসব বিষয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেন।
অবৈধ মাদক ব্যবসার আয়ে বদলে গেছে সুপারদের জীবন। সুইপার পরিচ্ছন্নতা কর্মীর ছেলে মেয়েরা এখন সিলেটের বিখ্যাত কিন্ডারগার্ডেন থেকে শুরু করে নামীদামি প্রাইভেট কলেজে পড়াশুনা করছে এবং আধুনিক মানের মোটর সাইকেল, প্রাইভেট কার ব্যবহার করছে, যা বাঙ্গালীরা পারছেনা।
একদিকে সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের আওতাধীন বন্দরবাজার ও সোবহানীঘাট পুলিশ ফাঁড়ি অন্যদিকে কোতোয়ালি মডেল থানা থাকা স্বত্বেও ছিনতাইকারী থেকে শুরু করে সবধরনের অপরাধীদের বৈধ আস্তানায় এই জায়গাটি পরিণত হয়েছে। যাহার নিয়ন্ত্রণ ইয়াবা সম্রাট সেলিমের ও আবুল হোসেন ওরফে ইয়াবা আবুলের হাতে।
জানতে চাইলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, তারা অসহায় হয়ে পরেছে সুইপার পরিছন্ন কর্মীদের কাছে। টোকাই থেকে শুরু করে হাই প্রোফাইল লেবেলের সন্ত্রাসীদের আনাগোনা এখানে। তাই তারা চরমভাবে নিরাপত্তাহীন।
পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভিতরে সোর্সদ্বারা নির্দিষ্ট ব্যাক্তি নেশা দ্রব্য বস্তু কেনার পরে রাস্তায় আটকিয়ে তল্লাশী করে নেশা দ্রব্য জিনিস হাতেনাতে ধরার পর পুলিশের চাহিদা মিটিয়ে ফেললে আবার ছেড়ে দেন। ছিনতাই, জুয়া, মাদক সবই চলে কাস্টঘরে এ যেন সকল অপরাধের নিরাপদ আস্তানা। সারা সিলেটের সকল অপরাধীর মিলনমেলা কাস্টঘর। পুলিশ, ডিবি, সিআইডি ও র্যাবের সোর্স যারা আছে সবাই সুইপার ও দাগী অপরাধীদের সাথে ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় ইয়াবা সম্রাট সেলিম একজন বাঙ্গালী। তাহার মুলবাড়ী গোয়াইনঘাট উপজেলায়। বেশ কয়েক বছর আগে তাহার আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো থাকায় বিবাহিত স্ত্রী বাড়ীতে রেখে চাকুরীর আশায় থাকতো সিলেট শহরে। পাশাপাশি নিজের আর্থিক কষ্ট নিবারণে কাষ্টঘর কলোনীতে দেশীয় মদ সেবন করতো সেলিম। সেই মদ পানের নেশা করতে গিয়ে সুইপার মেয়ের সাথে পরিচয়, প্রেম ও বিয়ে। বিয়ের পর থেকেই সেলিম কাষ্টঘর সুইপার কলোনিতে বসবাস শুরু করে।
এরপর সুইপারদের সাথে জড়িয়ে পড়ে মাদক ব্যবসায়, বর্তমানে সমগ্র সিলেটের মধ্যে সব থেকে বড় ইয়াবা ব্যবসায়ী। পুলিশ, সাংবাদিক সবই সেলিমের ব্যপারে নীরব দর্শক। এই মাদক ব্যবসা করে সে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সুইপারদের জন্য সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্মিত নতুন বিল্ডিংয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছে। তার বাসায় নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছেন। তার বাসায় দুটি বিদেশি বিড়াল পালন করছেন। এই দুটি বিড়ালের প্রতিদিন ৫ হাজার টাকা লাগে।
স্থানীয়রা বলছেন পুলিশ সাংবাদিক ম্যানেজ করেই চলছে ইয়াবা সেলিম ও আবুল হোসেন ওরফে ইয়াবা আবুলের সকল অপকর্ম। স্বৈরাচার হাসিনার পতন হলেও ইয়াবা আবুল সন্ত্রাসী কার্যকপাল থামেনি। এলাকার মানুষ তার কাছে জিম্মি।
এ ব্যপারে সেলিমের বক্তব্য নিতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে, সে প্রতিবেদককে জানায়ায়, কাষ্টঘরের সবাই ব্যবসা করে। এটা নতুন কি আমিও করি। এটা সবাই জানে।
এ সমাজের যুব সমাজকে মাদক থেকে বাঁচাতে মাদক সম্রাটের আস্তানার কার্যক্রম থামাতে মাদকদ্রব্য অধিদপ্তর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এবং সেনাবাহিনীসহ যৌথবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সচেতন মহল। দক্ষিণ সুরমা মাদক ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিশেষ প্রতিবেদন থাকবে চোখ রাখুন