এ এ রানা::
সিলেটের উত্তর পূর্ব সীমান্তবর্তী উপজেলা কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, কানাইঘাট, জকিগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার। এসব উপজেলায় বেপরোয়া চোরাকারবারিরা, তাদের অদৃশ্য শক্তির সহযোগিতায় প্রশাসনের নাকের ডগায় প্রতিদিন শতাধিক স্থান দিয়ে সীমান্ত পার হয়ে নদীর স্রোতের মতো সিলেটে প্রবেশ করছে ভারতীয় চোরাই পণ্য। এসব পণ্যের মধ্যে রয়েছে গরু-মহিষ, চিনি, মসলা, পিয়াজ, মোবাইল, কসমেটিকস, শাড়ী-জামা, টায়ার, মোটরসাইকেল, যানবাহনের পার্টস, জুতা, ঔষধ ও বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য ।
খোঁজ নিয়ে জানাযায় সীমান্তবর্তী উপজেলার চিহ্নিত চোরাকারবারিরা ভারত থেকে অবৈধভাবে বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে নিয়ে আসে। তাদের এই অবৈধ চোরাই ব্যবসায় সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে সীমান্তবর্তী উপজেলার প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, সীমান্ত এলাকায় চোরাচালানিদের যেন উৎসব চলছে। ঈদ সামনে রেখে প্রশাসনের নাকের ডগায় দিন-রাত বাংলাদেশে প্রবেশ করছে গরু-মহিষ, চিনি,পিয়াজসহ ভারতীয় বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
সরেজমিন ঘুরে বিভিন্ন স্পটে গিয়ে দেখা গেছে, গরু ও মহিষের চালান সীমান্ত পার করে এনে নির্দিষ্ট স্থানে মজুত করার পর সময় বুঝে ট্রাক কিংবা অন্য যানবাহনে পৌঁছে দেওয়া হয় গন্তব্যে। চিনি, পেঁয়াজ, মাদক, প্রসাধনীসামগ্রী ও কাপড়ের বস্তা বা কার্টন শ্রমিকরা হাতে-পিঠে-মাথায় করে নিয়ে আসছেন। সীমান্ত পার করে নির্দিষ্ট জায়গায় জড়ো করার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, বিএনপি নেতাসহ জনপ্রতিনিধিরা। তাদের মাধ্যমেই পুলিশ, গোয়েন্দা পুলিশ, বিজিবির নাম করে টাকা নিয়মিত নেওয়া হয়। অনেক পয়েন্টে আবার বাহিনীর সদস্যরা টাকা নেন। প্রতিদিন চোরাচালান পণ্য থেকে ৪০-৫০ লাখ টাকা আদায় করা হয় বলে জানিয়েছে বিশ্বস্থ একটি সূত্র । এগুলো বিভিন্ন জনের পকেটে যায় বলে জানা গেছে।
অদৃশ্য শক্তির কাছে জিম্মি প্রশাসন। বখরার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ব্যস্ত পুলিশ, সাংবাদিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব।
গোয়াইনঘাট
সবচেয়ে বেশি সীমান্ত এলাকা গোয়াইনঘাট উপজেলায়। উপজেলার অন্তত ৩০টি স্থান দিয়ে প্রতিদিন কমপক্ষে দেড়শ ট্রাক বিভিন্ন পণ্যের সাথে গরু-মহিষও আসছে।
জাফলং জিরো পয়েন্টে গত ২৭ মার্চ দেখা গেছে, কয়েকজন তরুণ মাথায় চিনির বস্তা নিয়ে প্রবেশ করছেন। পাশেই সংগ্রামপুঞ্জি বিজিবি ক্যাম্প থাকলেও৷, কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি সদস্যদের। পণ্য বহন করে স্থানীয় বিভিন্ন গুদামে মজুত করে রাখা হয়। এ উপজেলার চোরাচালান পয়েন্টগুলোর মধ্যে আছে নলজুরি আমস্বপ্ন, তালতলা, তামাবিল স্থলবন্দর, সোনাটিলা, লালমাটি, জিরো পয়েন্ট, পুরাতন সংগ্রাম পুঞ্জি, নকশিয়া পুঞ্জি, নামাপুঞ্জি, পাদুয়া, সোনারহাট, বিছনাকান্দি ও দমদমা। পুলিশের গরুর লাইন নিয়ন্ত্রণ করেন বিছনাকান্দি এলাকার কামাল মেম্বার, আবজল, পশ্চিম জাফলংয়ের যুবলীগের দেলোয়ার হোসেন লুনি, রাধানগরের উজ্জ্বল, মানিক, জাফলংয়ের সুমন, মান্নান ও ফারুক মেম্বার, বিএনপি নেতা জয়নাল, জিয়াউল হক, যুবলীগ নেতা সোহেলসহ উপজেলা ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। এ বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা কামাল মেম্বারকে একাধিকবার ফোন করলেও রিসিভ করেননি। বিএনপি নেতা জিয়াউল হক নিজের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে জানান, মাঝেমধ্যে সমতলো এলাকা দিয়ে গরু ও মহিষোো আসে। গোয়াইনঘাট থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর এলাকায় চোরাচালান বন্ধ রয়েছে।