লাকী আক্তার : সিলেট জেলা প্রতিনিধি.
নগরীতে বেশ সক্রিয় চিনি চোরাকারবারিরা। যতই দিন যাচ্ছে তাদের দৌরাত্ম্য ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শীতের রাতে ফাঁকা রাস্তায় চোরাচালান বেড়ে গেছে। চোরাকারবারিরা সাধারণত গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সক্রিয় থাকে।
রাত যত গভীর হয়, সিলেটের সড়কে কমতে থাকে যানবাহন। এই সুযোগে বেপরোয়া হয়ে ওঠে চোরাকারবারিরা। তারা মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকার নিয়ে দাপিয়ে বেড়ায় শহরের বিভিন্ন সড়কে। বিভিন্ন হোটেলে আড্ডা চলে ভোর অবধি। তারপর আলো ফোটার সঙ্গে সঙ্গে আড়ালে চলে যায় তারা।
রাতের টহল-চেকপোস্টে গা-ছাড়া ভাব:- সিলেট নগরীর বিভিন্ন সড়কে সরেজমিনে দেখা গেছে, বেশির ভাগ এলাকাতেই পুলিশের টহলদল গা-ছাড়া মনোভাব নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। টহল গাড়িতে দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ সদস্যরা এক জায়গায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকেন। চেকপোস্টে দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা দূরে বসে থাকেন।
তারা রিকশাযাত্রীদের তল্লাশি করতে দেখা গেলেও, ছিনতাইকারী ও চোরাকারবারীদের মোটরসাইকেল বা প্রাইভেট কারকে তল্লাশি করতে দেখা যায়না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখনো পুরোপুরি সক্রিয় না হওয়ার সুযোগ নিচ্ছে অপরাধীরা। পাশাপাশি কারাগারে থাকা অপরাধীরা জামিনে এসে ছিনতাই চোরাচালানসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে।
সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট- জাফলং, জৈন্তাপুর, ও কানাঘাট উপজেলা ভারতীয় সীমান্ত লাগোয়া হওয়ায় প্রতিদিন এসব সীমান্ত দিয়ে সিলেট নগরীতে অবাধে ঢুকছে ভারতীয় চোরাইপণ্য। এর মধ্যে সব থেকে বেশী আসছে ভারতীয় চিনি। রাতের বেলা চিনি পাচারের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে এসব সীমান্ত।
ঘড়ির কাটা যখন রাত ১২টা পার হয়, তখনই শুরু হয় ট্রাক ভর্তি করে বিভিন্ন স্থানে চিনি পাচার। প্রতিদিন রাত ১২ টার পর প্রায় ৫০ কেজির কয়েক হাজার বস্তা চিনি সিলেট নগরী হয়ে চলে যায় অন্যান্য জায়গায়। একযোগে সারি সারি ত্রিপলে মোড়ানো ছোট-বড় ট্রাক দিয়ে পাচার হয় চিনি।
সরকারের কোটি কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে সিলেটের এই তিন উপজেলার সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন আসছে কোটি কোটি টাকার অবৈধ ভারতীয় চিনিসহ নানা পণ্য। এর কারণে যেমন সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি এই সব এলাকায় দিন দিন বাড়ছে চোরাচালানিদের দৌরাত্ম।
রাতজাগা চোরাকারবারি:- হরিপুর গভীর রাত অবধি খোলা থাকে কয়েকটি হোটেল। সুত্র থেকে জানা যায়, প্রতিদিন বিকাল থেকে রাত ৪ টা পর্যন্ত বেচা কেনা হয় ভাল। রাত ১২ টার পরে বেচাকেনা জমে উঠে হোটেলগুলোতে। রাতের ক্রেতা মূলত চোরাকারবারিদের সহযোগীরা। ৭/৮ টি মোটর সাইকেল নিয়ে এরা প্রতিদিন মহড়া দেয় এবং গভীর রাতে হরিপুর গিয়ে বেড়ানোর কথা বলে চিনি চোরাচালানিদের সহযোগিতা করে সিলেট নগীরতে প্রবেশে সাহায্য করে। এদের বেশীরভাগই সাংবাদিক পরিচয় দেয়া চোরাকারবারি। আর এই চক্রের সাথে কতিপয় প্রভাবশালী চক্রও রয়েছে।
বাজারে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কোটি কোটি টাকার চিনি, মসলাসহ বিভিন্ন ভারতীয় অবৈধ পণ্য সিলেট জেলার বিভিন্ন স্হানে যাচ্ছে তবে চিনিটাই বেশি।
অনুসন্ধনে আরও জানা যায়, বিভিন্ন চেক পোস্ট পার হয় ট্রাক গুলো নির্দিষ্ট চাঁদা দিয়ে চোরাকারবারিদের একটি চক্র মোটরসাইকেল মহড়ায় এই সব অবৈধ ভারতীয় চিনির ট্রাক নির্দিষ্ট স্হানে পৌছে দিচ্ছে টাকার বিনিময়ে। এরা নিজেকে নামে-বেনামে বিভিন্ন কথিত টিভির সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে রাতভর নগরীতে মটর সাইকেল মহড়া দিয়ে অবৈধ চিনি চোরাচালানিদের টাকার বিনিময়ে সাহায্য করে যাচ্ছে।
মুখোশ ও হেলমেট পরে রাতভর মোটরসাইকেল মহড়া প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে। যেখানে দিনের বেলা মোটরসাইকেল শোডাউন করা নিষেধ সেখানে গভীর রাতে ৭/৮ টা মোটর সাইকেল নিয়ে চক্কর দেয়া নিয়ে জনমনে চিন্তার কারন হয়ে দাড়িয়েছে অনেকে রাতে ডাকাতির আশংকাও করছেন।
মেজরটিলার স্হানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সাংবাদিকদের কাজ অফিসে, এবং নির্দিষ্ট একটা সময় ও আছে তাদের। কিন্তু এরা কিসের সাংবাদিক? গভীর রাত পর্যন্ত মোটরসাইকেল দিয়ে মহড়া দেয়? তিনি বলেন, আমি গত ২/৩ দিন আগে জরুরী একটা কাজে বের হয়ে দেখি প্রায় ১৫/২০ জন মোটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দিচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের কাধে রয়েছে ঝোলানো ব্যাগ। একজনের মটর সাইকেলের সামনে লেখা দেখলাম "আধুনিক টিভি"!
কয়েকটি সুত্র থেকে জানা যায়, কথিত ইউটিউবার আধুনিক টিভির মামুন গভীর রাত পর্যন্ত যুবলীগের ক্যাডার ও কর্মীদের সাংবাদিক বানিয়ে সাথে নিয়ে ঘুরাফেরা করেন। সেই সাথে চিনি চোরাচালানের চাঁদার অংশ তাদের দেন। ইতিমধ্যে চিনি কান্ডে যুবদলের নাম আসায় কেন্দ্রীয়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহন করায় যুবদলের নেতাকর্মীদের রাতে দেখা যায়না। আর সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে যুবলীগ কর্মী মামুন তার দলবল নিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত চোরাচালানিদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছেন বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে মামুনের ঘনিষ্ট কয়েকজন জানান।
এদিকে ইদানিং কয়েকটি গনমাধ্যমে চোরাকারবারিদের সহযোগিতা করার অভিযোগ কথিত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উঠেছে। অথচ চোরাকারবারিরা মোটর সাইকেল মহড়া দিলেও এদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে না কোন আইনী ব্যবস্হা।
এ ব্যাপারে সিলেট শাহপরান থানার ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন জানান, কিছু কিছু হলুদ সাংবাদিকরা গভীর রাতে বিভিন্ন স্হানে লাটি সোটা হাতে নিয়ে চিনির ট্রাক আটকিয়ে চাদা আদায় করার খবর তিনি পেয়েছেন তাদেরকে হাতে নাতে ধরার চেষ্টা চলছে।
তিনি আরো বলেন, গভীর রাতে কেন রাস্তায় এমন প্রশ্ন করলে উল্টো এসব কথিত সাংবাদিকরা হুমকি দিয়ে বলে আপনার বিরুদ্ধে নিউজ হবে!
মনির হেসেন আক্ষেপ করে বলেন, আমি এ ব্যাপারে পুলিশ কমিশনারের সাথে আলাপ করেছি। তিনি রায়হান নামের এক কথিত সাংবাদিকের বিষয়ে বলেন, উনাকে রাতে মটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দিতে বাধা দেওয়ায় মনির হেসেনের নামে সংবাদ প্রকাশ করেছেন।
ইউটিউবাররা রাতে মহড়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ইউটিউবার মামুন ও তার সহযোগীরা রাতে মটর সাইকেল নিয়ে মহড়ার সময় প্রশ্ন করলে উনারা বলেন, আমরা সাংবাদিক!! আমরা আমাদের ডিউটি করতেছি। ভারাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, সাংবাদিকদের রাতের বেলা মটর সাইকেল নিয়ে মহড়া দেওয়া কোন আইনে পড়ে সেটা আমার জানা নেই।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ