এ এ রানা::সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চাকরির ভুয়া বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। সোমরার (০৫ ফেব্রুয়ারি) সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় এ ডায়েরি করেন সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সচিব (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মামুনুর রশিদ। প্রতারকরা সিলেটে বার বার এমন ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে দিলেও এখন পর্যন্ত কেউ আটক হয় নি।
এর আগে গত বছরেও এ হাসপাতাল এবং ডা. শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভুয়া চাকরির বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করা হয়েছিল। আগের দুই ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও এখন পর্যন্ত ধরা পড়েনি কেউ। ফলে আরও প্রতারণার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতারক চক্র।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, অধ্যক্ষের কার্যালয়, সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞাপন ভার্চুয়াল বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রথম আলো পত্রিকার লগো দেওয়া। এ বিজ্ঞপ্তিতে ৬টি পদের নাম উল্লেখ করে বিভিন্ন শর্ত ও নিয়মাবলী দিযে ৪ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আবেদন করার জন্য বলা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তির নিচে ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাক্তার শিশির রঞ্জন চক্রবর্তীর নাম দেওয়া।
এ বিষয়ে তিনি বলেন- বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়া। এরকম কোনো বিজ্ঞপ্তি সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ দেননি। প্রতারণার ফাঁদে যাতে কেউ পা না দেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
এর আগে গত বছরের ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ওসমানী হাসপাতালের আরেকটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনলাইনে ছড়িয়ে পড়ে। যেখানে হাসপাতালের বেশ কয়েকটি পদের নাম উল্লেখ করা হয়। বিজ্ঞপ্তিতে প্রাক্তন একজন পরিচালকের নামও উল্লেখ করা হয়, তবে সেখানে তার স্বাক্ষর ছিল না।
এ ঘটনায় কর্তৃপক্ষ কোতোয়ালি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে। ছড়িয়ে পড়া ওই বিজ্ঞপ্তিতেও প্রথম আলো পত্রিকার লোগোওযুক্ত করে দিয়েছিলো প্রতারকরা।
এ ঘটনায় ৫ ডিসেম্বর বিকেলে সিলেট মহানগরের কোতোয়ালি থানায় জিডিটি করেন হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ হানিফ। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘প্রথম আলো’ পত্রিকার লোগো ব্যবহার করে কে বা কারা অনলাইনে হাসপাতালের নাম এবং প্রাক্তন একজন পরিচালকের নাম উল্লেখ করে স্বাক্ষরবিহীন একটি ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে দিয়েছে। এই ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে যেসব পদ উল্লেখ আছে, সেসব পদ এ হাসপাতালে বর্তমানে নেই। তাই ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশকারীদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অনুরোধ জানাচ্ছে।
এর আগের মাসে (নভেম্বরে) সিলেটের করোনা ডেডিকেটেড হসপিটাল শহিদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে (পুরাতন সিলেট সদর হাসপাতাল) চাকরির ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে প্রতারণার চেষ্টা করে প্রতারক চক্র। এ বিষয়ে হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান ১৫ নভেম্বর সিলেট কোতোয়ালি থানায় একটি জিডি করেন।
জিডি সূত্রে জানা যায়, ‘সিলেট জবস’ নামক একটি সাইটে (ফেসবুক পেইজ) ‘সিলেট সদর হাসপাতালের টিকেট কাউন্টারে দুজন নারী নিয়োগ দেওয়া হবে। বেতন ১৭ হাজার টাকা’ এমন একটি বিজ্ঞাপন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচর হয়। বিজ্ঞাপনের সঙ্গে একটি মোবাইল ফোন নাম্বারও দেওয়া হয় এবং বেলাল খান রাজ নামের একজন এ পোস্ট করেন। কিন্তু এ বিজ্ঞাপনের সঙ্গে শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
এ বিষয়ে শামসুদ্দিন হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মোহাম্মদ মিজানুর রহমান সেসময় বলেন- এমন প্রক্রিয়ায় নিয়োগ-ই হয় না। এ হাসপাতালে নিয়োগের প্রয়োজন হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে সরকারি নীতিমালা মেনে নিয়োগ দেওয়া হবে। এমন বিজ্ঞাপন নিশ্চয় কোনো প্রতারক চক্র প্রকাশ করেছে। এ চক্রের সদস্যদের দ্রুত খুঁজে বের করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি জোর দাবি জানাচ্ছি। তা না হলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে এবং হাসপাতালের সুনাম ক্ষুণ্ন হবে।
এদিকে, অনলাইনে প্রকাশ করা বিজ্ঞাপনের সঙ্গে দেওয়া প্রতারকের মোবাইল ফোন নাম্বারটি অনেক দিন সচল ছিলো। কিন্তু তারপরও তাকে বা তাদের কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।’
এ বিষয়ে সিলেট কোতোয়ালি মডেল থানায় পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সুমন কুমার চৌধুরী জানান, ভুয়া বিজ্ঞাপন দেওয়ার ঘটনায় আজ কোতোয়ালি মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি। ঘটনার সাথে জরিতদের শনাক্তের চেষ্টা করা হচ্ছে। পূর্বেও এমন বেশ কয়েটি ভূয়া বিজ্ঞাপন ছড়িয়ে পড়েছিলো। সেগুলোর তদন্ত একই সাথে চালানো হচ্ছে। খুব শীঘ্রই এর সাথে জড়িতদের আটক করতে পারবো।