দয়াল, বিশেষ প্রতিনিধি, খুলনা:
সুন্দরবনের কেওড়া ফল প্রাকৃতিকভাবে জন্মালেও অদূর ভবিষ্যতে দেশীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা করছেন উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর বিজ্ঞ জনেরা।
কেওড়া গাছ সুন্দরবনের অন্যতম প্রধান বৃক্ষ। সুন্দরবনের নদী ও খালের কিনারে বা চরাঞ্চলে এ গাছ বেশি জন্মায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Sonneratia apetala। কেওড়া গাছ লম্বা ও বেড়ে উভয় প্রকারের যথাক্রমে প্রায় ২০ মিটার ও ২.৫ মিটার হয়ে থাকে। নতুন জৈববর্জ্য সমৃদ্ধ, মোটামুটি বা অধিক লবণযুক্ত মাটিতে এ গাছ ভালো জন্মে। কেওড়া গাছ বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারে বিস্তৃত। এর পাতা সরল, বিপরীতমুখী, অখণ্ড ও চামড়ার মতো। এর ফুল উভলিঙ্গ ও ফল প্রায় গোলাকৃতির এবং এর ব্যাস ২-৩ মিলিমিটার। একটি ফলে বীজের সংখ্যা ২৫-১২৫ টি। এই গাছের কাঠ বাংলাদেশে প্যানেল বানানো, প্যাক করার বাক্স তৈরী, আসবাবপত্র ও জ্বালানী হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
কেওড়া ফলের আকৃতি ডুমুরের মতো। সবুজ রঙের ফলের ওপরের মাংসল অংশটুকু অম্ল বা টক স্বাদযুক্ত। ভেতরে বেশ বড় বীচি। এই ফলটি সবচেয়ে বেশি উপাদেয় খাদ্য হরিণ এবং বানরের। তবে বহু বছর আগে থেকে মানুষ ও মাছের খাদ্য এটি। এফল রান্না করে খাওয়া যায়। অনেকে চিংড়ি ও ছোট মাছ দিয়ে এবং ডালের সাথে টকডাল হিসেবে রান্না করে খেয়ে থাকেন। টক স্বাদযুক্ত হওয়ায় টাটকা ফল লবণ দিয়ে খাওয়া যায়। আচার ও চাটনি হিসেবেও এফল খাওয়ার প্রচলন আছে। তাছাড়া টাটকা ফল সিদ্ধ করে মাংসল অংশটুকু আলাদা করে টক বা খাটা রান্না করেও খাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়া টাটকা ফল আধা সিদ্ধ করে ভেতরের বীচি ফেলে দিয়ে চাকা করে রৌদ্রে শুকিয়ে রাখা হয়। যখন এ ফলের সিজন না থাকে তখন শুকনো কেওড়া মানুষ খেয়ে থাকে। এই কেওড়া ফল আমাশয়, পেটের অসুখ সহ উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।