বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সোনার বাংলা বানানোর স্লোগান দিয়ে দেশকে শ্মশান বাংলায় পরিণত করেছিল। তারা বলত বাংলাদেশ এখন শান্ত। আসলে তারা দেশকে বানিয়েছিল জীবন্ত কবরস্থান। কবরবাসী যেমন কথা বলতে পারে না, তেমনি করে বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের কণ্ঠকে তারা স্তব্ধ করে দিয়েছিল।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেলে নীলফামারীর জলঢাকা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী জলঢাকা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, আজ মুক্ত পরিবেশে মহান রব আপনাদের সামনে দুটি কথা বলার তাওফীক দান করেছেন। আজ থেকে কিছুদিন আগেও বাংলাদেশের মানুষ এমন মুক্ত স্বাধীন পরিবেশ কল্পনাও করেনি। কারণ পুরো দেশটাকে একটা জীবন্ত জেলে পরিণত করা হয়েছিল। আমাদের প্রিয় ভাই এটিএম আজহারুল ইসলাম এখনো জেলে কেন তার জবাব সরকারকে দিতে হবে। আমরা কোনো ধানাই-পিনাই দেখতে চাই না। আমাদের মজলুম ভাই এটিএম আজহারুল ইসলামকে দ্রুত ফিরিয়ে দিন। তাঁকে জনগণের জন্য কাজ করার সুযোগ করে দিন। ফ্যাসিবাদীরা বহু নিষ্কলুস মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন চালিয়েছে, হাজারো মায়ের বুক খালি করেছে। হাজারো সন্তানকে এতিম বানিয়েছে। হাজার হাজার আয়নাঘর বানিয়ে গোপন বন্দিশালা তৈরি করেছিল। ফ্যাসিবাদের দোসররা তাদের পুরো শাসনামলে মানুষকে সুশাসন দেয়নি। প্রতিবাদী মানুষের ওপর তারা জুলুমের পাহাড় চাপিয়ে দিয়েছিল। তারা বিগত সাড়ে ১৫ বছরে গুম করেছে, খুন করেছে। তারা ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের মহারাজত্ব কায়েম করেছিল। দখলদারিত্ব ও চাঁদাবাজি করে দেশটাকে নাপাক করে দিয়েছিল।
তিনি বলেন, জালিম সরকার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে আঘাত করার জন্য সর্বপ্রথম তারা জামায়াতে ইসলামীকে বেছে নিয়েছিল। তারা বিচারিক হত্যার মাধ্যমে আমাদের ১১ জন্য শীর্ষস্থানীয় নেতাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিয়েছে। আমরা সকল হত্যাকান্ডের বিচার চাই। তারা ক্ষমতায় এসে ৫৪ জন দেশপ্রেমিক চৌকস সেনা অফিসারকে হত্যার মাধ্যমে দেশে হত্যাযজ্ঞ শুরু করেছিল। তারা বলেছিল ‘আমরা পালাই না।’ অথচ শেষ পর্যন্ত আপনাদের পালাতেই হল। জাতি জানতে চায়, কী করেছিলেন যে, আপনাদের পালাতে হল। যাদের দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ আছে, যারা দেশের মাটি ও মানুষকে ভালবাসে, দেশপ্রেম আছে তাদেরকে দেশ ছেড়ে পালাতে হয় না। দুর্নীতিবাজ জালিমদেরকেই দেশ ছেড়ে পালাতে হয়। শত জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও জামায়াতে ইসলামীর কেউ তো দেশ ছেড়ে পালাননি। কারণ তারা কোনো অন্যায় করেননি। তারা দেশ ও দেশের মানুষকে ভালবাসতেন। আমাদের প্রিয় মীর কাসেম আলী ভাই আমেরিকায় থাকাবস্থায় তার আত্মীয়-স্বজন ও শুভাকাক্সক্ষীরা দেশে ফিরে না আসতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি জবাবে বলেছিলেন কেন ফিরব না? আমি বাংলার মাটির সন্তান, আমার আল্লাহ আমাকে এই দেশের মাটিতে পয়দা করেছেন, আমি বাংলাদেশে ফিরে যাব, আমি আদালতে মোকাবেলা করব। কাঠ গড়ায় দাঁড়িয়ে বলব আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা। তাঁর ফাঁসির আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও তিনি দেশে ফিরে এসেছিলেন। কারণ তিনি দোষী ছিলেন না। তিনি দেশকে ভালবাসতেন এবং দেশের যুবকদের হাতে দেশগড়ার দায়িত্ব তুলে দিতে চেয়েছিলেন।
তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে যাদের নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে আমরা সেই সব হত্যাকাণ্ডের বিচার দৃশ্যমান দেখতে চাই। কথা একদম পরিষ্কার; সেই বিচার এবং প্রয়োজনীয় সংস্কারের আগে কোনো ইলেকশন বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না। আগে এইদুটো নিশ্চিত করতে হবে তারপরে ইলেকশন হবে। আমরা যেমন ইলেকশন চাই, তার আগে এই দুটোর নিশ্চয়তা জনগণকে দিতেই হবে।
তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেন, এই দুটোর নিশ্চয়তা ছাড়া বাংলাদেশের জনগণ কোনো ইলেকশন মেনে নিবে না। নিশিরাতের ইলেকশন আর কুকুর বিড়ালের ইলেকশন জাতি আর দেখতে চায় না। পেশিশক্তির ইলেকশন দেখতে চায় না। কালো টাকার প্রভাবযুক্ত কোনো ইলেকশন জনগণ দেখতে চায় না। সেজন্যই আমরা পরিষ্কার বলেছি ইলেকশনের পদ্ধতিও পাল্টাতে হবে। জনগণের প্রতিটি ভোটের মূল্যায়নের জন্য আনুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন করতে হবে। তবেই জনগণের প্রতিটি ভোটের সত্যিকারের মূল্যায়ণ হবে এবং যোগ্য লোকেরা নির্বাচিত হবে। পেশিশক্তির দূরাচাররা ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যাবে। মেধাভিত্তিকে যোগ্যতাসম্পন্ন একটি পার্লামেন্ট গঠিত হবে। সেই পার্লামেন্ট-ই আগামীর বাংলাদেশকে পথ দেখাবে ইনশাআল্লাহ।
তিনি বলেন, আমরা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে সকল ধর্ম-বর্ণের মানুষকে বুকে ধারণ করে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। যারাই এদেশে জন্মগ্রহণ করেছে, যারাই এদেশে বসবাস করছে তারা সকলেই এদেশের গর্বিত নাগরিক। সকলেই তাদের নাগরিক অধিকার সমভাবে ভোগ করবে। আমরা কারোর ধর্মীয় অধিকারে কাউকে হস্তক্ষেপ করতে দিব না।
জনসভায় জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের আমীর মোখলেছুর রহমানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা সেক্রেটারী মোয়াম্মার আল হাসানের সঞ্চালনায় জনসভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী অঞ্চল পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের টীম সদস্য জনাব আব্দুর রশীদ, নীলফামারী জেলা জামায়াতের আমীর অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার ও জেলা জামায়াতের মজলিসে শুরা সদস্য ওবায়দুল্লাহ সালাফী।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর ড. খায়রুল আনাম, জেলা সেক্রেটারি আন্তাজুল ইসলাম, সহকারী সেক্রেটারি এ্যাডভোকেট আল ফারুক আব্দুল লতীফ, জেলা কর্মপরিষদ সদস্য প্রভাষক ছাদের হোসেন, মনিরুজ্জামান মন্টু, জলঢাকা উপজেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর কামারুজ্জামান, জেলা শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশেনের সভাপতি মনিরুজ্জামান জুয়েল, ডোমার উপজেলা আমীর খন্দকার আহমুদুল হক মানিক, ডিমলা আমীর মজিবুর রহমান, জেলা শিবির সভাপতি তাজমুল হাসান। এসময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাহবুবুর রহমান বেলাল, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী প্রভাষক আনোয়ারুল ইসলাম, আব্দুল কাদিম প্রমুখ।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ