এস এম রকিবুল হাসান
নিয়ামতপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি।
নিয়ামতপুরে স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। স্বামীকে মানুষিক নির্যতনের পর গ্রামবাসীর সামনে প্রকাশ্যে মারপিট করে আহত করেছেন স্ত্রী বিউটি। এমন কি স্বামীর জমানো টাকা পয়সা ও মটর সাইকেলের চাবি নিয়েও বাবার বাড়ীর উদ্দেশ্যে রওনা হন তিনি। ঘটনাটি ঘটে সোমবার বেলা ১১ টার দিকে উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের কাচারী দামপুরা গ্রামের ভ্যড়ভেড়ি পাড়ায়। স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতনের এমন ঘটনায় এলাকায় বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। নির্যাতনের শিকার নগদ ও বিকাশ এজেন্ট ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম ওই গ্রামের মিছু মন্ডলের ছেলে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, শহিদুলের ৫ বছর বয়সী আরিয়ান নামের এক ছেলে সন্তান রেখে তার প্রথম স্ত্রী ফরিদা মারা যান প্রায় দেড় বছর আগে। এরপর ছেলেকে লালন পালন ও সেবা যত্নের কথা ভেবে উভয় পরিবারের সম্মতি ক্রমে প্রায় এক বছর আগে তিনি নাচোলের নেজামপুর এলাকার মৃত আব্দুর রাজ্জাকের মেয়ে বিউটি খাতুনকে বিয়ে করে ঘরে আনেন। বিয়ের এক মাস যেতে না যেতেই বিউটির রোষানলে পড়ে শিশু আরিয়ান। আরিয়ানের সেবাযত্নে ও শিশুসুলভ ছোট ছোট বায়নায় বিরক্ত হয়ে মাঝে মধ্যেই নির্যাতন করতে থাকেন সৎ মা বিউটি। বিষয়টি বাবা শহিদুলের নজরে আসলে এ নিয়ে শুরু হয় সংসারে দ্বন্দ।
ঘটনার দিন এ নিয়ে আবার স্বামী-স্ত্রীর মাঝে বাক-বিতন্ডা শুরু হয়। এক পর্যায়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে বিউটি চড়াও হয় শহিদুলের প্রতি। এমন ঘটনায় ছুটে আশে পাড়া প্রতিবেশীরা। সবার সামনেই তার স্ত্রী তাকে বাশের লাঠি দিয়ে বেধড়ক মারপিট করেন ও দাঁত দিয়ে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কামড় দিয়ে ক্ষত বিক্ষত করেন। পরে গ্রামবাসী শহিদুলকে তার স্ত্রীর হাত হতে উদ্ধার করেন।
প্রত্যক্ষ দর্শী প্রতিবেশী সলেমান জানান, শহিদুলের বাড়িতে হৈ চৈ এর শব্দ শুনে তিনি তার বাড়ির দিকে যান। উঠানে পৌঁছতেই তিনি দেখেন, গরুর খামারে লুঙ্গি ছিঁড়ে দিয়ে শহিদুলকে বেকায়দায় মাটিতে ফেলে লাঠি দিয়ে পিটাচ্ছেন তার স্ত্রী। প্রতিবেশী কিছু নারী-পুরুষ এ ঘটনা দেখলেও বিউটির হাতে লাঠি থাকায় কেউ কাছে যাওয়ার সাহস পাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় কোন কিছু না ভেবেই শহিদুললকে উদ্ধার করতে এগিয়ে যান তিনি এবং শহীদুলের পরনের লুঙ্গি ঠিক করে বিউটির হাত থেকে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
নির্যতনের শিকার শহিদুল জানান, তার ছেলে সন্তানকে দেখভাল করার জন্যই দ্বিতীয় বিয়ে (১ম স্ত্রী মারা যাওয়ায়) করে বিউটিকে ঘরে আনেন তিনি। কিন্তু বিয়ের কিছু দিন যেতে না যেতেই তার ছেলেকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করে সে। আর এ নিয়ে প্রতিদিনই ঝগড়া হয় স্ত্রী সাথে। তিনি বলেন, ছেলের অসুখ বিসুখে বাইরের কাজ ফেলে সেবা যত্ন করতে হয় তাকে নিজেই। এমনকি ছেলের জামা কাপড় পরিস্কারের দায়িত্বও পালন করতে হয় তাকে। এরপরও দিনের পর দিন স্ত্রীর মানুষিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি ও তার শিশু সন্তান। শুধু তাই নয় এ নিয়ে শারিরীক নির্যাতনের শিকারও হয়েছেন তিনি একাধীকবার। এ নিয়ে পারিবারিক সালিশ ও হয়েছে কিন্তু প্রতিকার পাননি। বরং স্ত্রীর দেয়া হুমকী ও মামলার ভয়ে কখনও তার গায়ে হাত তুলতে না পারায় আরো সাহসী হয়ে উঠে তার স্ত্রী। ঘটনার দিন প্রকাশ্যে সবার সামনে তাকে মারপিট করে আহত করেন এবং ঘরে রাখা ব্যবসার ২ লক্ষ ৫৫ হাজার টাকা ও মটর সাইকেলের চাবি নিয়ে বাবার বাড়ির উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন তার স্ত্রী। এমন ঘটনায় নিয়ামতপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন ও থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন বলেন তিনি।
এ ঘটনায় নিয়ামতপুর থানার ওসি মোহাম্মদ আল মাহমুদ জানান, স্ত্রী কর্তৃক স্বামী নির্যাতনের এমন একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন। অভিযোগের তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে বলেন তিনি।