স্টাফ রিপোর্টার: নেত্রকোণার হাওরাঞ্চলে আগাম বন্যা থেকে এক ফসলি জমির বোরো ফসল রক্ষায় বাঁধ সংস্কার কাজে ধীরগতি দেখা দিয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে হাওরের বাঁধ নিমার্ণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কিছু কিছু জায়গায় মাত্র ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এতে ফসলহানির শঙ্কায় দিন কাটছে কৃষকদের।
জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরীসহ ৭টি উপজেলার হাওরাঞ্চলের ৪২ হাজার হেক্টর জমির ফসল আগাম বন্যা থেকে রক্ষায় ডুবন্ত বাঁধ রয়েছে ৩৬৫ কিলোমিটার। ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ১৮০টি প্রকল্পের মাধ্যমে ১৫ ডিসেম্বর ১৫৫ কিলোমিটার বাঁধের সংস্কার কাজে হাত দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। ২৮ ফেব্রুয়ারি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও কাজে ধীরগতির অভিযোগ কৃষকদের। কৃষকরা বলছেন— অনেকগুলো প্রকল্পে কিছু স্থান রেখে রেখে মাটি ফেলা হয়েছে। কোথাও ৫০ থেকে ৭০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও কিছু কিছু জায়গায় আবার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। তবে পাওবো বলছে, এরই মাঝে গড়ে ৬০ শতাংশ কাজ এগিয়েছে। স্থানীয় কৃষকরা বলছেন, বাঁধ সংস্কারের বেশিরভাগ স্থানেই ধীর গতিতে কাজ চলছে। এতে করে তারা আগাম বন্যায় একমাত্র বোরো ফসল হানির দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। দ্রুত হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ সম্পন্নের দাবি জানিয়েছেন হাওরপাড়ের কৃষকরা। জৈনক্য কৃষক বাঁধের ছবি সংগ্রহের সময় দূর থেকে এগিয়ে এসে জানান তার দুশ্চিন্তার কথা। তিনি বলেন, ‘মাস খানেকের মধ্যই বন্যা আইব, এহনো বাঁধের অনেক কাজ বাকি। মাটিই ফালাই নাই অনেক জায়গায়। কবে ঘাস লাগাইবো? কবে পিডাইবো? তার পরে সলিং করব। এই কাজের জন্য আরও মাস খানেক সময় দরকার।’ একই গ্রামের আরেক কৃষক বলেন জগন্নাথপুরের রোয়াইল হাওরে তারও জমি আছে। তিনি বলেন, ‘বালা নাই, জমি অলাগো তো ঘুম নাই। যে অবস্থা বান্ধের, কুনসুম যে কি অয়া যায়। চৈত্র মাসের ১৫ তারিখে যদি বন্যা আয়ে তাইলে কি অইব? আমরা ভাত কইত্তে খামু? সমিতি থাইকা লোন নিয়া গিরস্তি করছি। এইডার মধ্যই আমগো আশা—ভরসা’। কৃষক বলছিলেন, ‘খালি রিপোট করুইন, কামের খরব নাই! দুইদিন পর বৃষ্টি অইবো, হেই সময় পাইন্নে ঠেলা দিয়া সব লইয়া যাইবো। মাটি কাডা শেষ দিতাছে না। ঘাস লাগায়া কিতা করবো এইন? আমরার তো ফসলের দুর্গতির শেষ নাই। মাটি কাডে মানুষ ফসল বাঁচাইতে। কিন্তু আমরাতো ফসল বাঁচাইতে পারি না। পাইন্নে সব লইয়া যায়।’
কৃষকদের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে, মেন্দিপুর ইউনিয়নের ৫ ও ৬ নাম্বার পিআইসি কমিটির সেক্রেটারি মোঃ খোকন মিয়া বলেন, আমাদের প্রায় এক হাজার মিটারের মাটি কাটার কাজ শেষ। এখন মাটি পিটিয়ে এবং ঘাস রোপণ করব। আমাদের এলাকায় অন্য সব পিআইসি থেকে আমরা কাজের দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে আছি। আমাদের কাজের সাইট বুঝিয়ে দিতে কিছুটা দেরি হয়েছে, তাই কাজও একটু দেরিতে শেষ হচ্ছে। তবে আমাদের কাজ প্রায় শেষ।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সারওয়ার জাহান বলেন, নেত্রকোণা জেলায় ১৮০ পিআসির মাধ্যমে প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার ডুবন্ত বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে। এজন্য প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৩ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। প্রাথমিকভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। মাঠ পর্যায়ে ৭টি উপজেলায় কাজ পুরোদমে চলমান আছে। কাবিখা নীতিমালা অনুযায়ী ২৮ ফেব্রুয়ারি কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত সব মিলিয়ে প্রায় ৬০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দু—এক জায়গায় পানি একটু দেরিতে নামায় সেসব জায়গায় একটু বিলম্ব হতে পারে। তবে, বেশি ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত করা হয়েছে। আশা করছি নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হবে। তিনি আরও বলেন, আমরা আগাম বন্যার হাত থেকে ফসলকে রক্ষা করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটা করতে পারলে, ৪২ হাজার হেক্টরের ৮০০ কোটি টাকার সম্পদ রক্ষা করা যাবে।
এদিকে হাওরাঞ্চলের ৮০০ কোটি টাকার একমাত্র বোরো ফসল রক্ষায় সঠিক মান বজায় রেখে দ্রুত ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ করার তাগিদ দিয়েছেন কৃষকরা।