আবু বকার সিদ্দীক হিরা।
(খুলনা ব্যুরো প্রধান)
আজ ২৫ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার আধুনিক বাংলা সাহিত্যের রূপকার মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ২০০তম জন্মদিন। ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ি গ্রামে জমিদার পিতা রাজনারায়ণ দত্ত ও মাতা জাহ্নবী দেবীর কোল আলোকিত করে সোনার চামচ মুখে নিয়ে তিনি জন্ম নিয়েছিলেন। প্রাকৃতিক অপূর্ব লীলাভূমি, পাখি ডাকা, ছায়া ঢাকা, শস্য সম্ভারে সমৃদ্ধ সাগরদাঁড়ি গ্রাম আর বাড়ির পাশে বয়ে চলা স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের সাথে মিলেমিশে শিশু মধুসূদন ধীরে ধীরে শৈশব থেকে কৈশোর এবং কৈশোর থেকে পরিণত যুবক হয়ে উঠেন। কপোতাক্ষ নদ আর মধুসূদনের দু’জনার মধ্যে গড়ে উঠে ভালবাসার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধন।
মধুকবি যখন জন্ম গ্রহণ করেন সে সময়ে আজকের এই মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদ কাকের কালো চোখের মত স্বচ্ছ জলের জোঁয়ার ভাটায় ছিল পূর্ণযৌবনা। নদের প্রশস্ত বুক চিরে ভেসে যেত পাল তোলা সারি সারি নৌকার বহর আর মাঝির কণ্ঠে শোনা যেত হরেক রকম প্রাণ উজাড় করা ভাটিয়ালী গান। শিশু মধুসূদন এ সব অপলক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখত আর মুগ্ধ হয়ে যেত। স্রোতস্বিনী কপোতাক্ষের অবিশ্রান্ত ধারায় বয়ে চলা জলকে মায়ের দুধের সাথে তুলনা করে তাই কবি সুদূর ভার্সাই নগরে বসে রচনা করলেন বিখ্যাত সনেট কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ’। তিনি লিখলেন- ‘সতত হে নদ তুমি পড় মোর মনে, সতত তোমারি কথা ভাবি এ বিরলে’।
১৮৩৩ সালে সাগরদাঁড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর যান। সেখানে লালবাজার গ্রামার স্কুলে ইংরেজি, ল্যাটিন ও হিব্রু ভাষা শিক্ষা নেন। কবি ১৮৩৭ সালে হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। ১৮৪২ সালে ইংরেজিতে প্রবন্ধ প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে ‘স্ত্রীশিক্ষা’ বিষয়ে প্রবন্ধ লিখে কলেজ থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন।
১৮৪৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন কবি। একইসাথে পিতৃগৃহ থেকে স্বেচ্ছা নির্বাসন নেন। হিন্দু কলেজে পড়তে না পেরে বিশপস কলেজে ভর্তি হন ও গ্রিক ও সংস্কৃত ভাষায় জ্ঞানার্জন করেন তিনি। ১৮৪৮ সালে সাগরদাঁড়িতে আসেন। তারপর ভাগ্যান্বেষণে মাদ্রাজ চলে যান। পথে বসন্ত রোগে আক্রান্ত হন । সুস্থ হয়ে সেখানে একটি আবাসিক স্কুলে ইংরেজি বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিভিন্ন পত্রিকায় ছদ্মনামে কবিতা লিখতে থাকেন। কয়েকটি পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেন ও সম্পাদকীয় বিভাগেও কাজ করেন। একই বছর বিয়ে করেন রেবেকা ম্যাকটাভিসকে।
১৮৪৯ সালের এপ্রিলে তাঁর ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ ‘দ্য কাপটিভ লেডি’ প্রকাশ হয়। ১৮৫২ সালে মাদ্রাজ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাইস্কুল বিভাগে শিক্ষকতার চাকরি নেন। ১৮৫৪ সালে দৈনিক স্পেকটেটর পত্রিকায় সহ-সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন। ১৮৫৭ সালে আদালতে দোভাষী হিসেবে কাজ শুরু করেন।
১৮৫৮ সালে ‘শর্মিষ্ঠা নাটক’ লিখে বাংলা ভাষায় সাহিত্যচর্চা শুরু করেন ও নাট্যান্দোলনে জড়িয়ে পড়েন।
১৮৬০ সালে ‘পদ্মাবতী নাটক’ প্রকাশ হয়। মে মাসে বাংলা ভাষায় প্রথম অমিত্রাক্ষর ছন্দে লেখা ‘তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য’ প্রকাশ হয়। এবছরই তিনি মহাকাব্য রচনায় মনোনিবেশ করেন।
১৮৬১ সালে জানুয়ারিতে ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয়। ফেব্রুয়ারিতে প্রখ্যাত সাহিত্যিক কালিপ্রসন্ন সিংহের বাসভবনে অমিত্রাক্ষর ছন্দে মহাকাব্য রচনার জন্য বিদ্যোৎসাহিনী সভার পক্ষ থেকে সংবর্ধনা এবং মহাকবি হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন। পরবর্তী সময়ে তিনি ইংল্যান্ডে গিয়ে ব্যারিস্টারিতে ভর্তি হন।
১৮৬৩ সালে অর্থকষ্টে পড়েন। এ অবস্থায় পরিবারসহ প্যারিসের ভার্সাই নগরীতে চলে যান। ১৮৬৪ সালে ২ জুন অর্থসাহায্য চেয়ে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরকে চিঠি লেখেন। আগস্টে বিদ্যাসাগরের পাঠানো টাকা পেয়ে সাময়িকভাবে অভাব মোচন হলে তিনি সনেট রচনায় মনোনিবেশ করেন ও ইংল্যান্ডে ফিরে গিয়ে আবার ব্যারিস্টারি পড়া শুরু করেন।
১৮৬৬ সালের আগস্টে ‘চতুর্দ্দশপদী কবিতাবলী’ পুস্তক আকারে কলকাতা থেকে বের হয়। নভেম্বরে ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৮৬৭ সালে পুত্র-কন্যাকে ফ্রান্সে রেখে কলকাতা চলে আসেন। সেখানে হাইকোর্টে ব্যারিস্টারি ব্যবসা শুরু করার জন্য আবেদন করেন।
১৮৭৩ সালের ২৯ জুন বেলা ২টায় মৃত্যুবরণ করেন মহাকবি মধুসূদন দত্ত।
মহাকবির জন্মদিন উপলক্ষে সাগরদাঁড়িতে উদ্বোধন করা হয়েছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ ৯দিন ব্যাপী মধুমেলা। এ উপলক্ষে সাগরদাঁড়িকে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে। ২৫ জানুয়ারির পরিবর্তে ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে মধুমেলা যা চলবে ২৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় কবির জন্মস্থান সাগরদাঁড়িতে ১৯ জানুয়ারি বিকালে প্রধান অতিথি হিসাবে বেলুন ও শান্তির প্রতীক কবুতর উড়িয়ে ৯দিনব্যাপী মধুমেলার উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস’র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চেয়ার অধ্যাপক প্রফেসর ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০০১ সালে ১১ কোটি টাকা ব্যায়ে বাস্তবায়ন করা হয় মধুপল্লীর নির্মাণ কাজ। সাগরদাঁড়ি মধুসূদন মিউজিয়াম, পিকনিক কর্নার, মধু মঞ্চ, সুদৃশ্য গেট নির্মিত হয়। এ ছাড়া রয়েছে পর্যটন কেন্দ্র । প্রতিবছর শীতের শুরু থেকে বিভিন্ন পর্যটক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা ভ্রমণ ও পিকনিক পার্টিও আগমন ঘটে থাকে সাগরদাঁড়িতে। দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের সর্ববৃহৎ মেলায় রূপ নেয় মধুমেলা।
কেশবুর থানার অফিসার ইনচার্জ জহিরুল আলম জানান, মেলার মাঠ নিরাপত্তা চাদরে মোড়া হয়েছে।
মেলা উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ তুহিন হোসেন জানান, মেলায় মধু ভক্তদের নিরাপত্তা বিধানে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
মধুমেলায় প্রতিদিন চলছে সার্কাস, মৃত্যুকুপ, নাগরদোলা, ভ্যারাইটি শো, কুঠির শিল্প, বিভিন্ন স্টল সহ প্রতিদিন মধু মঞ্চে নাটক, যাত্রাপালা সহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আইন উপদেষ্টা: অ্যাডভোকেট ফাতিমা আক্তার (এ. এ. জি) সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, এবং আইনী সহকারী সদস্য, সুপ্রিম কোর্ট।আইন উপদেষ্টা:
এ্যাড.মো. রুবেল আল মামুন। (পাবলিক প্রসিকিউটর।) বিশেষ ট্রাইব্যুনাল নং-১৯, ঢাকা।উপদেষ্টা: আলহাজ্ব এম.এ বারেক, সম্পাদক: মোঃ সাইফুল ইসলাম, প্রকাশক: ফকির আমির হোসেন,বার্তা সম্পাদক: আব্দুর রহিম । বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ১০৭ মতিঝিল বা/এ (খান ম্যানশন) লিফট ৮ তলা ঢাকা ১০০০। মোবাঃ ০১৬২৫৫৫৫০১২ ই-মেইল bikalbarta@gmail.com
Copyright @ চাঁদনী মিডিয়া গ্রুপ