পাথরঘাটা (বরগুনা)প্রতিনিধি: প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত এবং আর্থিক দৈন্যতা দমাতে পারলেও একটি মিথ্যা মামলায় সব স্বপ্ন ধংসের পথে তরুণ উদ্ভাবক ইঞ্জিনিয়ার জিসান হাওলাদার।
পটুয়াখালী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) সম্বিৎ রায়ের পরিকল্পিতভাবে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট অভিযোগে ‘চাঁদাবাজি’ মামলায় দুই মাস জেলও খেটেছেন তিনি।
ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না-এমন ব্যক্তিদের মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে পটুয়াখালীর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) চার্জশিট দাখিল করেছে। মো. কামাল হোসেন নামক যে ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে, একই ব্যক্তি ভিন্নরকম জবানবন্দী দিয়েছেন এবং উক্ত মামলায় ৫নং সাক্ষী মোঃ আমিরুল ইসলামের জবানবন্দি সঠিক ভাবে উল্লেখ না করে মন গড়া ভাবে মিথ্যা জবানবন্দি কোর্ট দাখিল করেছে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের পরিবর্তে নিজেস্ব সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। অন্য যে দু’জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে তাদের একজন মহসিন বিশ্বাসের ডিজেল ব্যবসার পার্টনার এবং আরেকজন মহসিন বিশ্বাসের মালিকানাধীন ডিজেলের দোকান ‘মা এন্টারপ্রাইজ’র ম্যানেজার।
জিসান হাওলাদার এসএসসি সম্পন্ন করে ভর্তি হন বরিশাল টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজে। পরে তিনি স্কলারশিপ নিয়ে চীনের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় (South petroleum University) তে চলে যান যন্ত্রকৌশলে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। শুরু থেকে তার আগ্রহের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় মোটর ভেহিকেল। ২০১৫ সালে ‘জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)’ বাংলাদেশে আয়োজন করে ‘ইকো রান বাংলাদেশ-২০১৫’ প্রতিযোগিতার। সেখানে স্থান পায় জিসান উদ্ভাবিত জ্বালানি সাশ্রয়ী গাড়ি। এর আগে ২০১৩ সালে ৩৪তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহ এবং বিজ্ঞান মেলায় সিনিয়র গ্রুপে দ্বিতীয় স্থান লাভ করে এবং বরিশাল জেলায় প্রথম স্থান লাভ করে জিসান হাওলাদার এর উদ্ভাবিত পরিবেশ বান্ধব ও জ্বালানী সাশ্রয়ী গাড়ী ।
জানা গেছে, পটুয়াখালির মহিপুরে আলিপুর ‘চঙকিং ইন্টারন্যাশনাল কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিআইসিও)’র চায়না ক্যাম্পে চায়নিজদের দোভাষী হিসেবে কাজ করতেন জিসান হাওলাদার। ওই কোম্পানিতে ডিজেল সরবরাহ করতেন বরিশালের সাব-কন্ট্রাক্টর ‘মা এন্টারপ্রাইজ’র পরিচালক মো. মহসিন বিশ্বাস। তিনি ব্যারেলপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লিটার ডিজেল পরিমাপে কম দিতেন। অথচ বিল নিতেন পুরোটারই।
পরে ডিজেল সংগ্রহকারী সিআইসিও এর সাব- ঠিকাদারগন তার ডিজেল চুরির বিয়ষটি হাতেনাতে ধরে ফেলে পরবর্তিতে সকল সাব ঠিকাদারগন প্রাথমিক ভাবে মৌখিকভাবে ও লিখিত অভিযোগ পোল্ডার ম্যানেজার মিঃ লী সিয়াং বরাবর দাখিল করেন । অভিযোগ পেয়ে পোল্ডার ম্যনেজার মোঃ জিসান কে গোপনে তদন্ত করে তথ্য সংগ্রহ করতে বলেন চায়না কোম্পানিকে প্রতারণামূলকভাবে ডিজেল কম দেয়ার ঘটনায় প্রায়ই জিসান হাওলাদারের সঙ্গে বিতণ্ডা হতো মহসিন বিশ্বাসের। একপর্যায়ে চায়না কোম্পানি মা এন্টারপ্রাইজ থেকে ডিজেল কেনা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখে। কৌশলী মহসিন বিশ্বাস তৎকালীন আওয়ামিলীগ এর তেনা স্থানীয় চেয়াম্যনের যোগসাজশে ও পরমর্শে গত বছর ৮ মে ২০২৩ ‘সিআইসিও’র আরেক সাব-কন্ট্রাক্টর খান কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং’র এ মালিক আইয়ুব আলী খানের মধ্যমে মহসিন বিশ্বাস জিসানকে দুপুরের খাবারের আমন্ত্রণ জানান।
কুয়াকাটায় অবস্থিত পাঁচতারকা হোটেলের তৃতীয় তলায় রেষ্টুরেন্টে খাবারের অপেক্ষায় ছিল কিছুক্ষন পরে
সেখানে ডিবি পরিচয়ে সাব-ইন্সপেক্টর সম্বিত রায় জিসানের আইফোন ১৩ প্রো-ম্যাক্সসহ তিনটি ফোন হাতিয়ে নেয়। যদিও আইফোনটি জব্দ তালিকায় দেখানো হয়নি। এএসআই সাইদুল সবুজ রঙের একটি মোড়ানো শপিং ব্যাগ জিসানের প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দেন। মুহুর্তের মধ্যেই সেটি আবার বের করে সাইদুল বলতে থাকেন, ‘চাঁদার টাকা পেয়েছি!’ কিছু বুঝে ওঠার আগেই সম্বিত রায় জিসানকে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে নিয়ে যায় হোটেলের নিচতলায় পুরনো রিসিপশনে। সেখান জোড় জবরদস্তি করে টাকা সামনে রেখে ছবি তুলতে বাধ্য করে সেখান থেকে একটি মাইক্রোবাসে তাকে নিয়ে যাওয়া হয় পটুয়াখালী জেলা ডিবি কার্যালয়ে ডিবি সদস্য হৃদয় পায়ে আঘাত করে ভয় দেখিয়ে মোবাইলের পাসওয়ার্ড নিয়ে যায় । পরে মহসিন বিশ্বাস বাদী হয়ে দায়ের করা ‘চাঁদাবাজি’র মামলায় (নং-৭) গ্রেপ্তার দেখিয়ে জিসান হাওলাদারকে চালান করে দেয়া হয় কোর্টে। রিমান্ডে মারধরের ভয় দেখিয়ে জিসানের বড় ভাই ও শ্বশুরের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় ৪০ হাজার টাকা। কলাপাড়া উপজেলার চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশীষ রায় জামিন নামঞ্জুর করে জিসানকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন। বিনা অপরাধে ২ মাস ৮ দিন কারাভোগ করে হাইকোর্টের আদেশে গতবছর ১০ জুলাই জামিনে মুক্ত হন জিসান।
ভুক্তভোগী জিসান হাওলাদার বলেন,জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে আমার বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা ও সাজানো চাঁদাবাজি মামলার হয়রানি করায় পটুয়াখালী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) এসআই সঞ্জিৎ রায়, এএসআই সাইদুল ও পিবিআই পটুয়াখালিতে কর্মরত এসআই এইচ এম আব্দুর রউফের পক্ষপাতমূলক আচরণের তদন্ত গ্রহণ করার আবেদন দেই। এরআগে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে পুলিশ সদরদপ্তর ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা শাখায় আবেদন করি। তদন্ত কিছুদূর আগানোর পর কলাপাড়া সার্কেল এসপি বিমল কৃষ্ণ মল্লিকের টেবিলে গিয়ে রহস্যজনক কারণে ঘটনাকে ভিন্নখাতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিমল কৃষ্ণ মিত্র সার্কেল এস পি ( নন ক্যডার) এবং সম্বিত রায় আগে একই সাথে চাকরির সুবাদে সঠিক তদন্ত না করে বাদী এবং সম্বিত রায় এর সাজান ও নিজেস্ব সাক্ষীদ্বারা দায় সারা প্রিতিবেদন দাখিল করেন প্রতিবেদনে বলা হয় বাদী মহসিন বিশ্বাস এর ব্যক্তিগত নম্বর দিয়ে (জিসান হাওলাদার ) আমাকে কল করে এবং জিসান মহসিনের কাছে টাকা দাবী করেন উক্ত বিষয়টি এস আই সম্বিত রায় কে লাউড স্পিকারে শুনেন ফোন কল নিশ্চিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করতে যান কিন্তু প্রতিবেদন উল্লেখিত নম্বরটি আমার না কখনই এই নম্বর ব্যবহার করিনি নিরেপক্ষ তদন্ত করলে খুব সহজেই সত্য উদ্বঘটন করতে পারত ।
বিমল কৃষ্ণ তার প্রতিবেদনে আর উল্লেখ করেন স্থানীয় চেয়ারম্যনে আনসার উদ্দীন মোল্লার পরমর্শে মহসিন মামলা করেছে । জিসান আক্ষেপ করে বলেন আমি সঠিক বিচার জন্য আইজিপি বরাবর দরখস্ত করি সঠিক ও ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষআয়িত ইউনিট পিবিআই তে চেয়ে আবেদন করি কিন্তু পিবিআই এস আই প্রভাবিত হয় ৮ মাষ আগে দাখিল কৃত বিমল কৃষ্ণ মিত্র এর প্রতিবেদন কপি করে পেষ্ট করে দেন । তদন্ত চলাকালীন সময়ে পিবিআই অফিসে ডেকে ঘটনাস্থল উপস্থিত সাক্ষীদের সাক্ষ গ্রহন করেন এবং মামলায় ১ নং সাক্ষী মোঃ রেজাউল করিম আমার কাছ থেকে ভিবিন্ন সময়ে টাকা হাওলাদ নেওয়ার প্রমান এবং সকল বিলের রেকর্ড দাখিল করি কোন প্রকার বিল বকেয়া ছিল না ।
তৎকালীন পিবিআই কর্মরত আব্দুর রউফ , মহসিনের মানিত সাক্ষী মোঃ কামাল হোসেন এবং মোঃ আমিরুলের সাক্ষী মনগড়া ভাবে দাখিল করেছে ।
মহসিন বিশ্বাস নিজেদের বিপুল পরিমান ডিজেল চুরির টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার ভয়ে নিজেরা বাঁচতে আমাকে মিথ্যা ভাবে ফাসিয়েছে ।
আমি অহেতুক হয়রানি হচ্ছি, জেল খেটেছি। মিথ্যা মামলা দিয়ে আমার প্রতিভাকে বন্ধ করেছে, আমি সরকারের কাছে বিচার চাই।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় , পটুয়াখালী জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে (ডিবি) কর্মরত এসআই সম্বিত রায়ের বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি চাকরিতে যোগদান করেন ২০০৪ সালের ৬ সেপ্টেম্বর। তার বাবার নাম চৈতন্য রায় ও মায়ের নাম স্মিতা বিশ্বাস। এসআই সম্বিত রায় বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে। প্রায় ৭ বছর যাবত পটুয়াখালী কর্মরত থাকায় অপরাধের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে। কলাপাড়া থানায় কর্মরত থাকাকালীন সময় অপরাধ মূলক কাজের জন্য সাসপেন্ড করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশে সংযুক্ত ছিলেন তদবির করে ৬ মাষ পরে যোগদান করেন পটুয়াখালী গোয়েন্দা শাখায় সেখান থেকে বিভিন্ন অপরাধের সাথে জড়িত থাকা সত্যেও অজ্ঞাত কারণে এই জেলা থেকে অন্যত্র বদলী হয় না। ভিবিন্ন অভিযোগে সর্বশেষ বদলি করা হয় রাঙ্গাবালী থানায় আদেশের দুই মাষ পরে যোগদান করেন কর্মস্থলে পরবর্তি ভোলায় বদলি করা হলেও অঙ্ঘত কারনে বদলি তলব করছেন না।
মামলার তদন্তের বিষয়ে জানতে চাইলে সাব-ইন্সপেক্টর আব্দুর রউফ জানান, ইতোমধ্যেই মামলাটির চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। এজহারে আসামি ছিলেন একজন। এজাহারের সত্যতা মেলায় একজনের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেয়া হয়েছে।
তবে পুলিশ সদরদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সম্বিৎ রায়ের গুরুদণ্ড হিসেবে ২০২১ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটি ইনক্রিমেন্ট স্থায়ীভাবে স্থগিত ছিল।
অভিযুক্ত সঞ্জিত
রায়ের মুঠোফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়।