*নিজস্ব প্রতিনিধি:*
নেত্রকোনায় জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে মামলায় হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বের হওয়ার পর এক কৃষি কর্মকর্তাকে তুলে নিয়ে বেধরক মারধরের অভিযোগ ওঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে ওই কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।
বুধবার বিকেলে জেলা শহরের বড় বাজারে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে আহত কৃষি কর্মকর্তার বোন বাদী হয়ে নেত্রকোনা থানায় মামলা করেন।
মারধরের শিকার ওই কর্মকর্তার নাম আরিফ চৌধুরী। তিনি সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।তাঁর গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার খালিয়াজুরি উপজেলার মেন্দিপুর গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর গ্রামের আরিফ চৌধুরীর সাথে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী শাকিল চৌধুরীর জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে আদালতে মামলা রয়েছে। আরিফ চৌধুরী প্রায় তিন বছর ধরে তাঁর বাড়ির সামনে পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) কর্তৃক সৌর সেচ পাম্প বসিয়ে প্রায় ৩০ একর জমিতে সেচ দিয়ে আসছেন। কিন্তু গত ৭ জানুয়ারী গভীর রাতে প্রতিপক্ষের লোকজন তার সেচ পাম্পের পাইপে সিমেন্ট, বালু ও সুরকির ঢালাই দিয়ে বন্ধ করে দেয়ার অভিযোগ ওঠে। এতে করে বোরো জমিতে সেচকাজ বন্ধ হয়ে যায়। এ নিয়ে আরিফ চৌধুরী খালিয়াজুরি থানা পুলিশের স্মরণাপন্ন হলেও কাজ হয়নি। পরে গত রোববার তিনি জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং কৃষি কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করে পাইপ মেরামতের নির্দেশ দেন। এতেও কাজ হয়নি। উল্টো প্রতিপক্ষ আরও ক্ষিপ্ত হয়। গত বুধবার আরিফ চৌধুরী অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১০৭ ধারার এক মামলায় হাজিরা দিয়ে আদালত থেকে বের হন। এ সময় শাকিল চৌধুরীর নেতৃত্বে ১০-১২ জন যুবক তাকে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়। পরে শহরের বড়বাজার এলাকায় একটি ব্যক্তিগত কার্যালয়ে দরজা বন্ধ করে বেধরক মারপিট করা হয়।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে উদ্ধার করে নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে সন্ধ্যায় উন্নত চিকিৎসার জন্য ওই কৃষি কর্মকর্তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় আহত কৃষি কর্মকর্তা আরিফ চৌধুরীর বোন চৌধুরী নূর জাহান মনি বাদী হয়ে শাকিল চৌধুরীসহ সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত ১০-১২জনকে আসামি করে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নেত্রকোনা থানায় মামলা করেন। তবে পুলিশ ওইদিন বিকেল পর্যন্ত কোন আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দ্বিতীয় ফটকের সামনে থেকে ১০-১২ জন যুবক মোটরসাইকেলে করে আরিফ চৌধুরীকে তুলে নিয়ে যায়। এসময় কয়েকজন বাধা দিতে এগিয়ে গেলে উচ্ছঙ্খল যুবকরা তাদের গালমন্দ করে।’
হামলার শিকার উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা আরিফ চৌধুরী বলেন, ‘প্রতিপক্ষ শাকিল চৌধুরীর নেতৃত্বে শাওন, বাদল, ছোটনসহ ১০-১২ জন আমাকে ডিসি অফিসের সামনে থেকে তুলে নিয়ে বড়বাজার এলাকায় একটি চেম্বারে বেধরক মারপিট করে। আমার সাথে থাকা ২১ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। পরে তারা আবার পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এলে আমাকে আওয়ামী লীগ আখ্যা দিয়ে পুলিশের সামনেও মাথা দেয়ালে ঠুকিয়ে মারধর করে। একপর্যায়ে আমি অচেতন হয়ে পড়ি।’
খালিয়াজুরীর মেন্দিপুর গ্রামের শাকিল চৌধুরীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
নেত্রকোনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহনেওয়াজ বলেন, ‘বড়বাজার এলাকায় একটি চেম্বার থেকে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তিনি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। আসামিদে গ্রেপ্তারের জন্য চেষ্টা চলছে।