যশোর থেকে শেখ দিনু আহমেদ যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখায় জ্বালানি তেল চুরির একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরে এই সিন্ডিকেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০টি গাড়ি থেকে ড্রাইভারদের যোগসাজশে জ্বালানি তেল চুরি করে বাইরে বিক্রি করে প্রতি মাসে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বমোট ৩০টি গাড়ি রয়েছে। প্রত্যেকটি গাড়ির ড্রাইভারের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন শাখায় কর্মরত পতিত আ’লীগ সরকারের ক্যাডার ড্রাইভার জুয়েল ও সহকারী ফোরম্যান শুভাঙ্কর রায় জ্বালানি তেল চুরির একটি বড় সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। ৩০টি গাড়ি গ্যারেজে জমা হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট ড্রাইভারের কাছ থেকে কম দামে জ্বালানি তেল খরিদ করে তারা বাইরে বিক্রি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। পরিবহন শাখার ড্রাইভার জুয়েল ও সহকারী ফোরম্যান শুভাঙ্কর রায়ের জ্বালানি তেল চুরির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে প্রতি মাসে তারা লাখ লাখ টাকার অবৈধ বাণিজ্য করে চলেছে। বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, এই তেল চুরির অর্থের একটি বড় অংশ পতিত আ’লীগ সরকারের দালাল খ্যাত পরিবহন প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস ভোগ করে থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ৩০টি গাড়ির জন্য প্রতি মাসে ১২/১৫ লাখ টাকার জ্বালানি তেল লাগে। প্রত্যেক গাড়ির ড্রাইভার প্রতিদিন গাড়ি গ্যারেজে নিয়ে যাওয়ার পর তেল চোর সিন্ডিকেট প্রধান ড্রাইভার জুয়েল ও সহকারী ফোরম্যান শুভাঙ্কর রায় প্রতিটি গাড়ি থেকে জ্বালানি তেল আনলোড করে নেয় এবং সংশ্লিষ্ট গাড়ির ড্রাইভারকে কিছু টাকা ধরিয়ে দেয়। পরবর্তীতে এই চোরাই জ্বালানি তেল পিকাপের ড্রাইভার শাহ আলমের সহযোগিতায় চুড়ামনকাঠি আম বটতলার হালিম শিকদার ও শানতলা পেপসি কোম্পানির পাশে হারুনের দোকানে বিক্রি করে থাকে। সূত্র আরও জানায়, পতিত আ’লীগ সরকারের মদদপুষ্ট ড্রাইভার জুয়েল ও সহকারী ফোরম্যান শুভাঙ্কর রায় জ্বালানি তেল চুরির সিন্ডিকেট থেকে প্রতি মাসে অন্তত ৫/৬ লাখ টাকা উপার্জন করে। এ টাকার বড় ভাগটি পান পতিত আ’লীগ সরকারের দালাল খ্যাত পরিবহন প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস। শুধুমাত্র বছরে এই পরিবহন শাখা থেকে জ্বালানি তেল চুরি হয় কমপক্ষে ৬০ লাখ টাকারও বেশি। যা অতি গোপনে তদন্ত করলে ধরা পড়বে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এই তেল চোর সিন্ডিকেটের নেপথ্য গডফাদার পরিবহন শাখার প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস ও একই শাখায় কর্মরত তার বাল্যবন্ধু সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম হাসান আলী। এই হাসান আলীও আ’লীগের একজন দালাল। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ড. শিমুল বিশ্বাস, এস এম হাসান আলী, ড্রাইভার জুয়েল-শুভাঙ্কর রায় তেল চোর সিন্ডিকেট ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে গোপনে কাজ করে বলে জানা গেছে। এদিকে ইতিপূর্বে সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম হাসান আলী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেটে কর্মরত থাকা অবস্থায় কেনাকাটায় অনিয়মের অভিযোগে তাকে শাস্তিমূলক বদলি করা হলেও আ’লীগ পন্থী কর্মকর্তা হওয়ায় তার বিরুদ্ধে আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। পতিত আ’লীগ সরকারের আমলে পরিবহন প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস নীতিমালা ভঙ্গ করে সরাসরি পরিবহন প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ নেন। নীতিমালায় আছে অধ্যাপকের নীচের কেউ সরাসরি পরিবহন প্রশাসক পদে আসতে পারবে না। অথচ বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজে লাভবান হওয়ার জন্য সুকৌশলে ওই পদে নিয়োগ লুফে নেন। উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৭ জুলাই ড. শিমুল বিশ্বাস প্রভাষক পদে নিয়োগ পান। গুঞ্জন রয়েছে, একজন পিএইচডি ডিগ্রিধারী প্রার্থীকে জামায়াত-শিবির আখ্যা দিয়ে সাবেক আ’লীগ এমপি খালেদুর রহমান টিটোর ডিও লেটার এবং ঢাবির নীল দলের নেতা নিজাম উদ্দিন ভুইয়া তৎকালীন ভিসিকে চাপ প্রয়োগ করে তাকে প্রভাষক পদে চাকরি পাইয়ে দিতে সহায়তা করেন। ড. শিমুল বিশ্বাস ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্রলীগের একজন সক্রিয় ক্যাডার ছিল এবং তিনি কট্টরপন্থী আ’লীগ পরিবারের সন্তান বলে জানা গেছে। তদন্তে বিষয়টি প্রমাণিত হবে। পরিবহন প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস পরিবহন শাখায় নিরাপদে অবৈধ কর্মকাণ্ড অবাধে পরিচালনার জন্য ইতোমধ্যে ২ জনকে অন্যত্র বদলি করে দিয়েছেন। যানবাহন কর্মকর্তা হাসান আশকারী পরিবহন প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাসের ধারাবাহিক নির্যাতনে এবং মানসিক টর্চারে সম্প্রতি চাকরি থেকে রিজাইন দিয়েছেন। শুধু তাই নয়, ইতিপূর্বে পরিবহন শাখার ড্রাইভার আবু বক্কর সিদ্দিকের বিরুদ্ধে জ্বালানি তেল চুরির অভিযোগে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও অদ্যাবধি তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। যবিপ্রবির ভাবমূর্তি রক্ষায় আ’লীগ সরকারের দালাল খ্যাত পরিবহন প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস, সহকারী রেজিস্ট্রার এস এম হাসান আলী, ড্রাইভার জুয়েল ও সহকারী ফোরম্যান শুভাঙ্কর রায়ের চোর সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্র। গত ১ জানুয়ারি ভিসি বরাবর প্রেরিত জাহাঙ্গীর আলম স্বাক্ষরিত এক অভিযোগ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ড্রাইভার জুয়েলের সাথে যোগাযোগ করা হলে সে ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এবারের মতো মাফ করে দেন। এ বিষয়ে পরিবহন শাখার প্রশাসক ড. শিমুল বিশ্বাস কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। যবিপ্রবির ভিসি প্রফেসর ড. আব্দুল মজিদের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।