মোঃ মোশারফ হোসেন সেলিম রাঙ্গামাটি জেলা প্রতিনিধি
পর্যটন নগরী রাঙামাটি শহর থেকে অজ্ঞাতনামা নারীর মরদেহ উদ্ধারের পরবর্তী ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর ক্লু-লেস ঘটনার অন্যতম মূল হত্যাকারিকে গ্রেফতার করেছে রাঙামাটির কোতয়ালী থানা পুলিশ। তথ্য প্রযুক্তির সহযোগিতায় খুলনা জেলা সদরের লবনছড়া এলাকার নিজ বাড়ি থেকে মূল হত্যাকারি মোঃ জামাল হোসেন মোল্লাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
রাঙামাটি কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, রাঙামাটির পুলিশ সুপার ড. ফরহাদ হোসেনর সার্বক্ষনিক তদারকির মধ্যদিয়ে তার নির্দেশনানুসারে ক্লুলেস এই ঘটনায় রাঙামাটি থেকে পুলিশের একটি টিম খুলনায় গিয়ে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারসহ পিবিআই ও সংশ্লিষ্ট্য থানা পুলিশের সহযোগিতায় ৪৮ ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ।
এদিকে গ্রেফতার পরবর্তীতে আসামীকে নিয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশ হত্যাকান্ডস্থানের পাশ^বর্তী ওয়াই ব্রীজের নিছে অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম নারীর পায়ের রগ কাটায় ব্যবহার করা ছুরি উদ্ধার করে পুলিশ। এসময় স্থানীয় জনসাধারণ হত্যাকারি পাষন্ডের ফাঁসির দাবিও জানিয়েছে।
এরআগে, শুক্রবার মধ্যরাতে রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ বাজারের মহসিন কলোনী এলাকায় স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে তালাবদ্ধ ঘরের দরজার তালা ভেঙ্গে অস্বাভাবিক পেট ফুলা ও পচনধরা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা মধ্যবয়সী নারীর মরদেহ উদ্ধার করেছিলো কোতয়ালী থানা পুলিশ। সেসময় প্রাথমিক সুরতহাল করে উক্ত নারীকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে পুলিশ নিশ্চিত হলেও ঘটনার কোনো ধরনের ক্লু পুলিশ তাৎক্ষনিকভাবে পায়নি।
এদিকে, গ্রেফতারকৃত হত্যাকারি নিজেই পুলিশের কাছে উক্ত নারীকে হত্যার কথা স্বীকার করে জানায়, উক্ত নারী স্বামী পরিত্যক্তা এবং তার দোকানের কর্মচারি ছিলো। তার কাছ থেকে জামাল তিন লাখ টাকা হাওলাত নিয়েছিলো।
এই টাকার অজুহাতে উক্ত নারী জামালের সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হয়। জামালের ২০ বছর বয়সী এক ছেলে ও ছেলের বউ এবং নিজের প্রথম স্ত্রী থাকার পরেও এক পর্যায়ে জামালকে বিয়ের জন্য অব্যাহত চাপ দিতে থাকলে উক্ত নারীকে হত্যার পরিকল্পনা করে সে।
এক পর্যায়ের ঈদের দিন রাতে উক্ত নারীকে রাঙামাটিতে আনা হয়। পরবর্তীতে পহেলা এপ্রিল উক্ত নারীকে নিয়ে রিজার্ভ বাজারের মহসিন কলোনীর জনৈক ব্যক্তির বাসা ভাড়ার সাইনবোর্ড দেখে তাকে নিয়ে কাজী এমরান নূরীর মালিকানাধীন ভাড়া বাসায় উঠে।
এসময় উক্ত নারীকে দইয়ের সাথে প্রথমে ২০টি ঘুমের ট্যাবলেট খাইয়ে দেয় জামাল। পরবর্তীতের দুই তারিখ দুপুরে জুসের সাথে মিশিয়ে আরো ১০টি ট্যাবলেট খাইয়ে দিলে উক্ত নারী অচেতন হয়ে পড়ে।
এসময় গলায় গামছা পেছিয়ে উক্ত নারীকে হত্যার চেষ্ঠা করা হয়। তারপরও তার দেহ থেকে প্রাণ বেরুতে দেরি হওয়ায় পাষন্ড জামাল ভিকটিমের দুই পায়ের রগ কেটে দিলে আধা ঘন্টা পর তার মৃত্যু নিশ্চিত হয়।
এরপর জামাল পাশ^বর্তী ওয়াই ব্রীজের নীচে গিয়ে ধারালো ছুরিটি নদীতে ফেলে দিয়ে আবারো খুলনায় নিজ বাড়িতে চলে যায়।
হত্যার শিকার নারীর নাম খাদিজা আক্তার, সে বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ থানার পুটিখালীস্থ ৫নং ওয়ার্ডের মৃত আকবর হাওলাদারের মেয়ে উল্লেখ করে কোতয়ালী থানা পুলিশ জানায় হত্যার শিকার নারীর পরিবার তথা তার ভাইয়েরা অত্যন্ত দরিদ্র বিধায় তাদের কাছ থেকে লিখিত আবেদনের প্রেক্ষিতে আমরা নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের পর পুলিশের উদ্যোগে রাঙামাটিতেই দাফন করেছি। এই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছে বলেও জানিয়েছেন ওসি মোহাম্মদ সাহেদ উদ্দিন।