মোঃ মুনছুর হেলাল জেলা প্রতিনিধি সিরাজগঞ্জ
এক সময় গ্রামবাংলায় যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম ছিল গরুর গাড়ি। ধাঁন বোঝাই করা অথবা দূর গ্রামে যেতে এই গাড়ির বিকল্প ছিলো অতুলনীয় । বর্তমানে ইঞ্জিন চালিত যানবাহন উদ্ভাবনের পর মানুষের জীবনযাত্রায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে, সেই সঙ্গে কমতে শুরু করে বহুল প্রচলিত গরুর গাড়ি। দুই চাকা বিশিষ্ট এই যানবাহন গরু বা বলদ টেনে নিয়ে যায়। আদিকালে খাজনা প্রেরণ কিংবা উপহার প্রেরণের জনপ্রিয় বাহন ছিলো এই গরুর গাড়ি। মালপত্র পরিবহনেও রয়েছে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। গরুর গাড়ির জনপ্রিয়তায় রচিত হয়েছে অসংখ্য সিনেমা ও গান। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’ অথবা আস্তে চালাও গাড়ি/ আরেক নজর দেখিয়া ন্যাং মুই দয়ার বাপের বাড়িরে এরকম জনপ্রিয় আরও অনেক গান। নব্যপ্রস্তর যুগ থেকেই যানবাহনটির ব্যবহার করে আসছে মানুষ। সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন শুরু হয় খ্রিস্টের জন্মের ১৬০০ থেকে ১৫০০ বছর আগে। ধীরে ধীরে এই গাড়ির প্রচলন ছড়িয়ে পড়ে উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে। এরই ধারাবাহিকতায় সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার ৭ নং নলকা ইউনিয়নের এরান্দহ গ্রামের অর্থাৎ এরান্দহ বোয়ালিয়ারচরের মাঠে দেখা মিলতো প্রাচীন যুগের অনেক গরুর গাড়ী, কৃষকরা তাদের জমি থেকে গরুর গাড়িতে তাদের ফলানো সোনালী ফসল ধাঁন,গম,সরিষা নিয়ে আসতো কৃষকের বাড়িতে । বর্তমানে রাস্তাঘাট ও সড়কপথ উন্নত হওয়ার কারণে এখন আর দেখা মিলছে না সেই প্রাচীন যুগের গরুর গাড়ি। শোনাও যাচ্ছে না গরুর গাড়ীর চাক্কার কেঁচোর মেচর শব্দ। তেমনি একজন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন গরুর গাড়িয়াল তিনি বলেন, আগে গরুর গাড়ি করে দিয়ে অনেক বিয়েশাদী হতো,আমরা আনন্দ করে সকলে মিলে বিয়ে বাড়িতে যেতাম। আমি অনেক গরুর গাড়ি দিয়ে বিয়ে-শাদী করিয়েছি। এখন ধরতে গেলে আমাদের এলাকায় একটাও গরুর গাড়ি পাওয়া যাবে না। এভাবেই বিলুপ্তের পথে যাচ্ছে গরুর গাড়ি।
প্রত্যন্ত কাদামাটির অঞ্চলে মাঝেমধ্যে গরুর গাড়ীর দেখা গেলেও শহরাঞ্চলে একেবারেই দেখা যায় না। শহরের ছেলেমেয়েরা দূরের কথা, বর্তমানে গ্রাম অঞ্চলের ছেলেমেয়েরাও অনেকে গরুর গাড়ীর সঙ্গে পরিচিত নয়। জাদুঘর এবং নব্বই দশকের চলচ্চিত্রে গরুর গাড়ী স্মৃতি হয়ে রবে যুগ যুগ ধরে।
কয়েক বছর আগেও গ্রামাঞ্চলে বিয়ে উপলক্ষে গরুর গাড়ীর চাহিদা ছিলো। সে সময় যেসব পরিবারে গরুর গাড়ী ছিলো, তাদের ছিলো আলাদা একটা সম্মান। বর্তমানে মোটরযানের কারণে অপেক্ষাকৃত ধীর গতির এই যানবাহনটির ব্যবহার অনেক কমে এসেছে। তাই তেমন চোখে পড়ে না বলিলেই চলে। মানুষ মালামাল বহনে এখন ব্যবহার করছে ট্রাক, পাওয়ার টিলার, লরি, নসিমনসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন । সেই সঙ্গে মানুষের যাতায়াতের জন্য আছে মোটরগাড়ী, রেলগাড়ী, অটোরিকশা সহ আরো অনেক যানবাহন । গরুর গাড়ী কমলেও এটি ছিল পরিবেশবান্ধব। ছিল না জ্বালানি তেলের প্রয়োজন। কালো ধোঁয়ায় হতো না মানবদেহের ক্ষতি। ধীরগতির হওয়ায় দুর্ঘটনার ঝুঁকিও ছিল কম। অনেকে নিজস্ব গরু দিয়ে চালাতেন এই গাড়ি। ফলে যাতায়াতের খরচও ছিল না তেমন।গরুর গাড়ির চালককে বলা হতো গাড়োয়ান। যেসব গরুর গাড়ি যাতায়াতের জন্য ব্যবহার হতো তার উপরে থাকত চাল। যাকে বলা হতো ছই।
যুগের পরিবর্তনে এই গাড়ির প্রচলন কমে গেলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এখনো দেখা যায় গরুর গাড়ি। অনেকে মাঠ থেকে ফসল বাড়িতে আনার জন্য এই গাড়ি ব্যবহার করেন। তাতে কৃষকের বাড়তি খরচ বাঁচে অনেকখানি।