মোঃ মুনছুর হেলাল, স্টাফ রিপোর্টারঃ সিরাজগঞ্জ এক সময় ঢেঁকি ছিলো রায়গঞ্জ উপজেলার গ্রাম অঞ্চলের জনপদ মানুষের চাঁল ও চাঁলের গুঁড়া তৈরির একমাত্র মাধ্যম। গভীর রাত থেকে সকাল পর্যন্ত গ্রামের বধূরা ঢেঁকিতে চাল ভাঙতো । বর্তমানে আধুনিকতার ছোঁয়ায় আবহমান বাংলার ঢেঁকি হারিয়ে গেছে, এখন ঢেঁকির সেই ধুমধাম শব্দ আর শোনা যায় না । প্রবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ উপজেলা থেকে এখন বিলুপ্তের পথে প্রায়। কালের বিবর্তনে ঢেঁকি এখন যেন শুধু ঐতিহ্যের স্মৃতি । আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি এখন আগের মত আর চোখে পড়ে না । আগে অগ্রহায়ণ-পৌষ মাসে কৃষক ধাঁন কাটার সঙ্গে সঙ্গে গৃহস্থ ও কৃষাণিদের ঘরে ঘরে ধাঁনের নতুন চাল ভাঙা বা চাল গুঁড়া করা, আর সে চাল দিয়ে পিঠা, পুলি, ফিরনি, পায়েস তৈরি করার ধুম পড়ে যেত বাড়ি বাড়ি । বাতাসে ভেসে বেড়াতো পিঠার সুঘ্রাণ । এখন ঢেঁকির সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠা পুলির নবান্নের উৎসবও। আধুনিকতার উৎকর্ষের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রাম বাংলার এক সময়ের কৃষাণ কৃষাণিদের ভালো মানের চাল তৈরির প্রধান মাধ্যম ঢেঁকি। এখন পুরোপুরি যান্ত্রিক ঢেউ লেগেছে গ্রামেগঞ্জে । কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢেঁকির ছন্দময় শব্দ । গ্রামগঞ্জের পাড়ায় পাড়ায় এক সময় ঢেঁকি দিয়ে চাল, চিড়া ভাঙা, আটা, পায়েসের চালের গুঁড়ো, খির, ইত্যাদি তৈরির চাল বানানো হতো ঢেঁকির গুড়ো চাল দিয়ে – সেই ঢেঁকি আজ অসহায় হয়ে পড়েছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনের কাছে। ধাঁন ভানা, চাল গুঁড়ো করা, বড়ি তৈরি করা, আটা তৈরি চালের গুঁড়াসহ ঢেঁকির যাবতীয় কাজ এখন করছে ইঞ্জিনচালিত মেশিনে। ঢেঁকি নিয়ে এক সময় জনপ্রিয় গান ও প্রবাদ রচিত হয়েছিল। যেমন গ্রাম বাংলার তরুণী-নববধূ ও কৃষাণীদের কণ্ঠে’ ও বউ চাল ভাঙেরে, ঢেঁকিতে পাড় দিয়া, নতুন চাল ভাঙে হেলিয়া দুলিয়া, ও বউ চাল ভাঙেরে ঢেঁকিতে পাড় দিয়া’ এ রকম গান আর শোনা যায় না। ঢেঁকি শিল্প কি ছিল তা এ যুগের ছেলে মেয়েদের ছবি দেখিয়ে বুঝিয়ে দিতে হবে ও পরিচয় করিয়ে দিতে হবে। সভ্যতার প্রয়োজনে ঢেঁকির আবির্ভাব হয়েছিলো, আবার গতিময় সভ্যতার সারাপথে প্রযুক্তি গত উৎকর্ষই ঢেঁকি বিলুপ্তি করে দিয়েছে। ঢেঁকি কাঠের তৈরি বিভিন্ন রকমের কাঠ দিয়ে তৈরি করা হতো। সাড়ে ৩ থেকে ৪ হাত দৈর্ঘ্য হতো ঢেঁকি । আর পৌনে ১ হাত চওড়া। মাথার দিকে একটু সরু এবং অগ্রভাগে সরু। এর মাথায় এক হাত কাঠের ওচা বা দস্তা থাকে। এর মাথায় লাগানো থাকে লোহার গুলা। গুলার মুখ যে নির্দিষ্ট স্থানে পড়ে সে স্থানকে গড় বলে। ধান ভানতে ন্যূনতম ২ জন লোকের প্রয়োজন। সে সময়ে ঢেঁকিকে নিয়ে অনেক কবিতা ও গান লিখেছেন কবি সাহিত্যিকরা । আর ঢেঁকি ছাঁটা আউশ চালের পান্তা ভাত পুষ্টিমান ও খেতে খুব স্বাদ লাগতো । বর্তমান প্রজন্ম সে স্বাদ থেকে বঞ্চিত। প্রাচীনকালে ঢেঁকির ব্যবহার বেশি হলেও বর্তমানে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের ফলে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আজ বিলুপ্তির পথে। ৮ নং পাঙ্গাঁসী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড চকআনারডুমুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ আব্দুল্লাহ সুমন বলেন, ঢেঁকি কে নিয়ে বহু গান আমাদের এলাকার প্রবীণদের মুখে শুনেছি । এছাড়া শীতকালে গ্রামে বাড়ী বাড়ী জামাই মেয়েসহ আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে বিভিন্ন পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যেতো । আর সে পিঠা খাওয়ার জন্য আটা তৈরীর মাধ্যম ছিল ঢেঁকি । সে সময় আমাদের মা-চাচিদের ঢেঁকিতে ধাঁন ভাংতে ও আটা তৈরী করতে দেখেছি । এখন আর আগের মত ঢেঁকি তেমন চোখে পড়েনা । আগে প্রায় বাড়িতেই পাওয়া যেত ঢেঁকি। এখনো হয়তো অনেক বাড়িতে পাওয়া যেতে পারে, তবে গ্রামগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি আমি এখনো ধরে রেখেছি আমার বাড়িতে। অনেকেই আসে ঢেঁকিতে চাল গুড়ো করতে। অনেকেই গুড়ো করে নিয়ে যান পিঠাপুলি বানানোর জন্য । ০৮ নং পাঙ্গাঁসী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের জনপ্রতিনিধি মেম্বার মোঃ জহুরুল ইসলাম খাঁন জানান, আগে আমাদের দাদী, নানীরা সারাদিন অনেক কষ্টে ধাঁন ঢেঁকিতে পাড় দিতো এবং সেই চালের গুঁড়ায় পিটা-পুলি ও পায়েস তৈরি করে আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়াইতো । তবে ঢেঁকি আমাদের একটি প্রাচীন ঐতিহ্য । ঢেঁকি একটি শিল্প হলেও এ শিল্পকে সংরক্ষণের কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছে না । ঐতিহ্যবাহী ঢেঁকি শিল্প রক্ষায় সকলকে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন রায়গঞ্জ উপজেলার প্রবীণরা।