স্টাফ রিপোর্টার:
ঢাকার কৃতি সন্তান, মরমী কবি ও সাহিত্যিক, সমাজ সেবক, সুফি স্কলার ও সাধক, হাফেজে কুরআন ও মুফাসসিরে কুরআন, উর্দু ফার্সি এবং আরবী ভাষার উপর পাণ্ডিত্য অর্জনকারী সুফি সাধক ❝হযরত শাহ সুফি হাফেজ জহুরুল হক মোবারকী আল কাদরী❞ ১০২ তম মহান পবিত্র আগমন দিবস উপলক্ষে খোশরোজ মেহফিল ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সোমবার রাত ৮ ঘটিকায়, আন্তর্জাতিক সুফি স্কলার হযরত শাহ সুফি সাঈদ আনোয়ার মোবারকী আল কাদরী সাজ্জাদানিশীন, খানকাহ ফকির জহুর আল কাদরী, প্রেসিডেন্ট, মোবারকী গ্রুপ অফ কোম্পানী এর সভাপতিত্বে খানকাহ শরীফে অনুষ্ঠিত হয় মেহফিল শেষে তিনি দোয়া ও মুনাজাত করেন। সুফি সন্ধ্যায় সুফি কালাম ও সুফি সঙ্গীত পরিবেশন করেন পর্তুগাল প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বরেণ্য নজরুল গবেষক, জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী `মোস্তফা আনোয়ার’। তাঁর বিভিন্ন ভাষায় নজরুলের সুফী সংগীতের অসাধারণ গায়কীতে মুগ্ধ হলেন শতশত ভক্তরা। এই ধরনের ঐতিহাসিক নজরলীয় সুফি মজলিস উপমহাদেশে প্রথম আয়োজন বলে বিমুগ্ধ শ্রোতাদের অভিমত।
দেশবিদেশের সুফী, ভক্ত, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বগণের মহামিলন মেলা ঘটেছিল পবিত্র খোশরোজ মেহফিলে। মেহফিল শেষে অত্যন্ত সুস্বাদু ও উন্নতমানের তাবারুক পরিবেশন করা হয়।
খোশরোজ মেহফিলে বিশেষ মেহমান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যতিমান সূফি স্কলার পিএইচপি গ্রুপ এর চেয়ারম্যান সূফি মিজানুর রহমান, খাজা বাবার বংশধর, আজমীর শরীফ এর খাদেম
হযরত সৈয়দ হাসান চিশতি, খাজা বাবার বংশধর ও খাদেম হযরত সৈয়দ ফাকরী হাসান চিশতি
আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান পরমাণু বিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ প্রফেসর ডক্টর শমসের আলী, ঢাকা-৭ এর সাবেক এমপি হাজি মোঃ সেলিম, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাবেক উপদেষ্টা, সাবেক রাষ্ট্রদূত ও রাজনীতিবিদ মমতাজ উদ্দিন আহমেদ,
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পীরজাদা শহিদুল হারুন, সুফি কাজী নজরুল সেন্টার এর প্রতিষ্ঠাতা, বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ ও নজরুল গবেষক মুহাম্মদ আতা উল্লাহ খান, আমির খোঁজে ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট লায়ন ডাঃ মোঃ হারুন অর রশিদ, বিদ্রোহী The Nazrul Centre এর নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর ডক্টর শহীদ মনজু, জাগ্রত ব্যবসায়ী গ্রুপের চেয়ারম্যান শিহাব রিফাত আলম, বরেণ্য গজল শিল্পী ওস্তাদ জামাল হাসান,
শিক্ষাবিদ ও গবেষক ডক্টর নজরুল ইসলাম তমিজী,
মাওলানা রফিকুল ইসলাম, সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট, আমি’র খোঁজে ফাউন্ডেশন,
শরফুদ্দিন সেন্টু, সহ-সভাপতি,ঢাকা মহানগর দক্ষিন আওয়ামী, .ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ,
ম্যানেজিং ডিরেক্টর,মধুমিতা গ্রুপ, সাঈদ সিদ্দিকী,ক্যাটস আই ফ্যাশন, সালেহ আহমেদ সিদ্দিকী, সমাজ সেবক ও ব্যবসায়ী, জাহিদ হোসেন শিবলু,তরিকত ফেডারেশন, কাবুল সাহেব,২৮ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর,ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, আলমগীর হোসাইন,২৯ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর,ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন, সানাউল হক নিলু,সাবেক ছাত্রনেতা, লুতফর আজম রানা,চেয়ারম্যান ধানমন্ডি ক্লিনিক, হযরত শাহ সুফি সাঈদুর রহমান,আজিমপুর খানকাহ শরীফ,হযরত শাহ সুফি জাকির হোসেন সুবহানী,হাক্কানী খানকাহ শরীফ,ধানমন্ডি, হযরত শাহ সুফি আতিক হাসান চিশতি,মাদারটেক খানকা শরীফ,এডভোকেট মাহবুব আলম,সভাপতি,আঞ্জুমান আশরাফিয়া,বাংলাদেশ।
এছাড়াও সেগুনবাগিচার পীর সাহেব কেবলা, হাসমতীয়া সাবেরিয়া সম্মানিত পীরজাদা মিরপুর,পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জনাব বাসার সাহেব সহ সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। বিশিষ্ট সাধক মরমী কবি হযরত শাহ সুফি হাফেজ মোহাম্মদ জহরুল হক মোবারাকী আলী ক্বাদেরীর সংক্ষিপ্ত কর্ময় জীবন। “ মহান রাব্বুল আলামীন এরশাদ করেছেন আল্লাহ প্রিয় ওলীদের ভয় এবং ভীতির কোন অবকাশ নেই ” কুআনুল-কারিম
মনীষিদের ধ্যন-ধারনা কর্মময় জীবন চর্চায়ই হল উৎকৃষ্ট চর্চা এইসব মনীষিরা যুগে যুগে ধর্মীয় আধ্যাত্মিকতার গুনাবলিতে বলীয়ান হয়ে সমাজ-মানুষের জন্য পবিত্র কল্যাণ সাধন করেছেন। ওনাদের মধ্যে ঢাকায় অবসস্থিত খানকাহ ফকির জহুর আল ক্বাদেরী এর প্রতিষ্ঠাতা সুফি জহুরুল মোবারকী অন্যতম।
পুরোনো ঢাকার ইতিহাস ঐতিহ্য সৃষ্টির ক্ষেত্রে হেকিম নবী বকশের পুত্র মৌলভী হেকিম মোজাফফর হোসেন এলাহী বকশ ও তার পুত্র হেকিম মোহাম্মদ জাকারিয়ার নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য প্রথমমোক্ত ব্যাক্তি ছিলেন ঢাকার নবাব খাজা আহসান উল্লাহ শাহীনের ব্যাক্তিগত ও নবাব পরিবারে চকিৎসক এবং হেকিম জাকারিয়া ছিলেন নবাব স্যার সলিমুল্লার ব্যক্তিগত এবং নবাব পরিবারের চিকিৎসক। উল্লেখ্য যে, হেকিম নবী বকশ ছিলেন বর্তমান ভারতের উত্তর প্রদেশের অধিবাসী। (মুনশী রহমান আলী তায়েশ রচিত ও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত তাওয়ারিখ-এ-ঢাকা-য় দ্রষ্টব্য)
জহুর মোবারকী’র শৈশব-কৈশোর ও প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সেই সময়কার বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন ইসলামিক স্কলার ও সুফি সাধকের সংস্পর্শে কলকাতায় অতিবাহিত হয়। ছোটবেলা হতে জহুর মোবারকী ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী জ্ঞানী পরিশ্রমী দূরদৃষ্টি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব । শৈশবকালই ওনী উপমহাদেশের বিখ্যাত সুফি ও ইসলামী চিন্তাবিদদের সাথে যাতায়াত ও গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। কলকাতায় স্কুল জীবনেই ওনী তৎকালীন প্রশিদ্ধ আলেমের নিকট কুরআন শরীফ হেফজ সম্পন্ন করেন। এছাড়াও ওনী বিভিন্ন পন্ডিতের নিকট হইতে আরবী ফার্সি ও উর্দু ভাষার উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। জহুর মোবারকী পারিবারিক ঘরানাই ছিল সেই সময়ের মোশায়ারা ও কাব্য চর্চার কেন্দ্রবিন্দু, ওস্তাদের পাশাপাশি উনি ঘরানা পরিবেশে হাতে কলমে বিভিন্ন ভাষার উপর পারদর্শীতা আর্জন, ইসলামিক মূল্যবোধ, সেই সাথে কুরআন ও হাদিসের প্রতিটি শাখার দক্ষতা অর্জন করেন। ওনার আব্বা হুজুর কেবলা মৌলভী হেকিম জাকারিয়া ও দাদা হজুর কেবলা মৌলভী হেকিম মোজাফফর সাহেব ছিলেন সেই সময়ের খ্যাতনামা সুফি মৌলভী যাহাদের স্পর্শে, সহবতে, নেজবতে ওনী বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে তৎকালীন পাকিস্তান ও ভারতের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, ফোকারা ও সুফি সাধকের সঙ্গে ওনার সখ্যতা ও রুহানী নেজবত ছিল। উনি সারা জীবনই আল্লাহ ও তার রাসূল (সাঃ), আহলে বাইয়াত, পাক-পাঞ্জাতন, আউলিয়া কেরাম ও মানবতার খেদমতে নিজেকে নিয়োজিত করেন।
পরিশেষে পাকিস্তানের পেশোয়ারে বিখ্যাত আহলে রাসূল সুফি সাধক ইসলামিক চিন্তাবীদ আলেমে দ্বীন সুফি স্কলার সাইয়িদি মুর্শিদি মাওলায়ে সৈয়দ মোবারক শাহ ক্বাদেরি নকশবন্দি (রহঃ) এর হাতে দরস্ত বায়াত নেন। বহু বছর তিনি ওনার পীর মুর্শিদের গোলামিতে পেশোয়ারে অবস্থান করেন। পীর মুর্শিদের নেজবতে ও গোলামিতে রুহানী ফায়েজ প্রাপ্ত হয়ে ওনার জ্ঞানে মাকাম, আধ্যাত্মিকতায়, এলমে তাসাউফ, এলমে মারেফত, এলমে হাকিকত ও এলমে শরিয়তের একজন সৈনিক হিসাবে অত্মপ্রকাশ করেন। পীরও মুর্শেদের গোলামীর সাদকায় ওনার তৃতীয় নয়ন উন্মোচিত হয়ে যায়, যার দরুন তিনি সিলসিলার খেদমতে, পাঞ্জাতনের পাক ও আহলে বায়াতের খেদমতে নিজেকে বিলিন করে দেন। বহুমুখী প্রতিভার অধিকারি জহুর মোবারকী নিজেই ছিলেন একটি প্রতিষ্ঠান। একজন ব্যাক্তির মাঝে এত গুনাবলী বর্তমান সময়ে প্ররিলক্ষিত হয় না। ওনী একাধারে ছিলেন হাফেজে কুরআন, বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন সুফি স্কলার কবি সাহিত্য অনুরাগী বিশিষ্ট আলেম, আবৃত্তিকার, ক্বারী, উর্দু ফার্সি ও আরবী ভাষায় পারদর্শী, সুফি সাধক, পরী, মাশায়েক, সমাজ সেবক ও বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী। ওনার বিখ্যাত দিওয়ান “গাযলানে হারাম” স্বাধীনতা উত্তর উর্দু, ফার্সি ও আরবী ভাষা সংমিশ্রিণে প্রথম কোন বাঙ্গালী ও বাংলাদেশীর কবিতা গ্রন্থ প্রকাশিত হয়, উক্ত গ্রন্থ অধ্যায়ন করিলে বুজা যাবে ওনী কত বড় মাপের ও বিভিন্ন ভাষার পন্ডিত ছিলেন। এ কাব্য গ্রন্থ উপমহাদেশের বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ১২ বছর বয়সে জহুর মোবারকী (রহঃ)-এর রচিত প্রথম মরমী কবিতা সেই সময়ের কলকাতার বিখ্যাত মাসিক পাঁচ-বান পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে (বর্তমানে শেখ বোরহানউদ্দিন কলেজ) রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা কেন্দ্রের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে হাফেজ জহুর সাহেব কবি আল্লামা ইকবালের একটি নাত আবৃত্তি করেন । তাঁর সুললিত কণ্ঠে শুনে সবাই মুগ্ধ হয়ে যায়। ১৯৪৮ সালে যখন কায়েদ-এ-আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ ঢাকায় আসেন, তখন ঢাকার ‘রেসকোর্স (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) মাঠে তার বক্তৃতার আগে হাফেজ জহুর সাহেব একটি নাত আবৃত্তি করেছিলেন। হাজার হাজার মানুষ তাঁর সুমধুর কণ্ঠে নাত শুনে অভিভূত হয়েছিল। তাঁর সুমধুর কণ্ঠস্বরের জন্য তাঁকে “বুলবুল-এ-বাঙ্গাল” উপাধিতে ভূষিত করা হয়। হাফেজ জহুর মোবারকী তৎকালীন রেডিও পাকিস্তানের ঢাকা, করাচী ও লাহোর বেতার কেন্দ্র থেকে স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করতেন। ১৯৫৮ সালে চট্টগ্রামে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান এক মোশায়রা অনুষ্ঠানে হাফেজ জহুর সাহেবের সুললিত কণ্ঠে তাঁর স্বরচিত কবিতা শুনে এতই অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন যে, সবার সামনেই হাফেজ জহুর সাহেবকে বুকে জড়িয়ে ধরেন। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য কাব্য চর্চায় ওনার ওস্তাদ ছিলেন, তৎকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উর্দু ও ফার্সি বিভাগের প্রধান বিশিষ্ট কবি ও সাহিত্যক ড. আন্দালিব শাদানী এছাড়াও সরকারি মাদ্রসা-ই-আলিয়া, ঢাকা আরবী সাহিত্যের প্রধান বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন আল্লামা আবদুর রহমান কাশগরী এর সাথেও ওনার সুগভীর আধ্যাত্বিক, জ্ঞানী, দ্বীন ও রুহানী সম্পর্ক ছিল। পুরাতন ঢাকার বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন মুফতি দ্বীন মোহাম্মদ সাহেবের সাথে ওনার গভীর আধ্যাত্মিক ও পারিবারিক সম্পর্কে বিদ্যমান ছিল। বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকারমের প্রথম খতিব ও সরকারি মাদ্রসা-ই-আলিয়া, ঢাকা এর অধ্যক্ষ মুফতি আজম হযরত আল্লামা আমিনুল এহসান বরকতি, লক্ষীবাজারের পীর সাহেব হযরত শহীদ আব্দুর রহমান (যিনি হযরত আমানাত শাহ এর পীরও মুর্শিদ ছিলেন) ওনার বংশের উজ্জল নক্ষত্র হাফেজ মুফতি সাহেবে গদ্দী সৈয়দ আহমদ উল্লাহ ও শান্তিনগরের পীর সাহেব কেবলা হযরত শাহ আব্দুর গফুর জহুর মোবারকীর অত্যন্ত স্নেহভাজন ছিলেন।
এছাড়াও পাকিস্তান ভারত ও বাংলাদেশের বিশিষ্ট ওলামায়ে কেরাম সুফি, ইসলামিক চিন্তাবিদ এবং জগৎ বিখ্যাত ঐতিহাসিক খানকাহ শরিফের সাথে সুগভীর সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল যা এখনো ওনার ছোট সাহেবজাদা ও সাহেবে গদ্দীর উক্ত সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।