স্টাফ রিপোর্টার::
আগে কি সুন্দর দিন কাটাইতাম মিলিয়া বাউলা গান আর মুর্শিদী গাইতাম,মানুষ যদি হইতে চাও”করো মানুষের ভজনা” কেন পিরীতি বাড়াইলেরে বন্ধু ছেড়ে যাইবা যদি,গ্রামের নৌ জোয়ান,হিন্দু মুসলমান,সকলে মিলিয়া আমরা বাউলা গান গাইতাম,কোন মেস্তোরি নাও বানাইল,কেমন দেখা যায়,ঝিলমিল ঝিলমিল করে রে ময়ূর পঙ্খি নাওয়ে, বসন্ত বাতাসে সই গো,বসন্ত বাতাসে,বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে সইগো আমার বাড়ি আসে”এমন অসংখ্য কালজয়ী বাউল গানের রচয়িতা বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম তার জীবনের শেষ সময়টাতে এসে চেয়েছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠিত সঙ্গীতালয়টি পূর্নাঙ্গতা লাভ করেনি,পাশাপাশি বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত বাউল শাহ আব্দুল করিম স্মৃতি যাদুঘরের পাশে একটি গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবী তার ভক্তবৃন্দের। গাইড ওয়াল নির্মাণ করা না হলে বর্ষার মৌসুমে যেকোন সময় বন্যার পানিতে যাদুঘরের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার শংঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেকেই। এখান থেকে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের গান ছড়িয়ে পড়বে দেশ ও দেশের বাহিরে। শিক্ষা নিয়ে শুদ্ধ সুরে বাউল গান গাইবেন শিল্পীরা বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের জন্মস্থান হাওরের জেলা সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের উজান ধল গ্রামের মাঠে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে দু’দিনব্যাপী ২০২৪ শুরু হয়েছে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের ১০৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ১৯তম লোক উৎসব এবং তা চলবে আজ শুক্রবার দিবাগত সারারাত পর্যন্ত।
সন্ধ্যা ৭টায় উজান ধল গ্রামের মাঠে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আহত ভক্তবৃন্দের উপস্থিতিতে দু”দিনব্যাপী এই লোক উৎসবের উদ্বোধন করেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও ধল গ্রামবাসির যৌথ আয়োজনে এবং ব্যন্ড লেটরী কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিকাশ লিমিটেড এর সার্বিক সহযোগিতায় দু”দিনব্যাপী এই লোক উৎসব উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শাহ আব্দুল করিম পরিষদের সভাপতি শাহ আব্দুল করিম পূত্র শাহ নুর জালালের সভাপতিত্বে ও দিরাই উপজেলা তথ্যসেবা কর্মকর্তা পারমিতা দাসের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী।
সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন,সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি শাহ মিজান শফিউর রহমান,সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার(অতিরিক্ত ডি আইজি) মোহাম্মদ এহসান শাহ,অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ হুমায়ূন কবীর,দিরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদুর রহমান খন্দকার, দিরাইয়ের ভূমি কমিশনার (এ্যাসিল্যান্ড) জনি রায়,ব্যন্ড লেটরী কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিকাশ লিমিটেড এর ই ভি পি হেড অব ডিপামেন্টের হুমায়ূন কবির,দিরাই থানার ওসি ইখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী প্রমুখ। দেশের বিভিন্ন প্রান্থ থেকে বাউল সম্রাটের জন্মস্থান উজান ধল গ্রামে তার ভক্তবৃন্দ, বাউল শিল্পী আর শত শত দর্শনার্থীরা ছুটে এসেছেন। বাউল সম্রাটের শেষ ইচ্ছা ছিল তাঁর উজানধল বাড়িতে গানের সঙ্গীতালয় প্রতিষ্ঠা করা এবং রাস্তাঘাট পাকাকরণ করার কিন্তু তা না হওয়াতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন উৎসবে আসা বাউলের ভক্তবৃন্দরা।
কিন্তু চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে গেলে ও তার শেষ ইচ্ছা এখনও পূরণ হয়নি। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে গানের সঙ্গীতালয়টি পূর্নাঙ্গতা পাচ্ছে না। উৎসবে আসা ভক্তরা তাঁর শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য সরকারের নিকট জোর দাবি জানান।
শাহ আব্দুল করিম পরিষদ ও উজান ধল গ্রামবাসীর আয়োজনে গ্রামের মাঠে অনুষ্ঠিত দুই দিনব্যাপী এ লোক উৎসবে আসা দেশ বিদেশের প্রথিত যশা সাহিত্যিক,রাজনীতিবিদ ও স্বনামধন্য শিল্পীরা অংশ নেন। উৎসবে আসা সকলেই মনে করেন, সরকার এগিয়ে আসলে বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের শেষ ইচ্ছা পূরণ হবে। শাহ আব্দুল করিম ১৯১৬ সালের ১৫ই ফ্রেব্রæয়ারী দিরাইয়ের তাড়ল ইউনিয়নের উজান ধর গ্রামে পিতা ইব্রাহিম আলী ও মাতা নাইরজান বিবির ঘরে জন্মগ্রহন করেন এবং ২০০৯ সালের ১২ সেপ্টেম্বর তিনি মৃতুবরণ করেন। তিনি তার জীবদ্দশায় একহাজারের উপরে বাউল গান রচনা করে গেছেন এবং ২০০১ সালে তিনি লোক সঙ্গীতের উপরে একুশে পদকপ্রাপ্ত হয়ে সরকার তাকে পুরস্কারে ভূষিত করেন।
এ ব্যাপারে বাউল সম্রাটের পুত্র শাহ নূর জালাল জানান,তার পিতা একটি গরীব পরিবারে জন্মগ্রহন করলে তিনি সব সময়ই লোভ লালসার উধের্ব ছিলেন। তিনি তার জীবদ্দশায় অসাম্প্রদায়িকতার চেতনা বুকে লালন করে মানুষকে নিয়ে,মানুষের মাঝে বিভেদ দূর করে হিন্দু.মুসলিম,বৌদ্ধ আর খ্রিস্টান সবাই আমরা এক মায়েরই সন্তান এমন নীতি ছিল তার পিতা শাহ আব্দুল করিমের। তিনি তার পিতার আশা একটি সঙ্গীতালয় হবে এখানে সকল ভক্তরা এবং আগামী প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বাউল গান শিখে দেশকে আরো সমৃদ্ধ করবে এজন্য সরকারের উদ্যোগের প্রতি আহবান জানান তিনি।
এ ব্যাপারে ব্যন্ড লেটরী কর্পোরেট এ্যাফেয়ার্স বিকাশ লিমিটেড এর ই ভি পি হেড হুমায়ূন কবির বলেন শাহ আব্দুল করিম একজন গুনী মানুষ ছিলেন তাই বিকাশ কোম্পানী গত কয়েকবছর ধরে লোক উৎসবে সহযোগিতা করে আসছে।
এ ব্যাপারে সিলেট রেঞ্জের পুলিশের ডিআইজি শাহ মিজান শফিউর রহমান বলেন,তিনি চাকুরীর সুবাদে এই সিলেট বিভাগে অবস্থান করায় বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের একজন গানভক্ত মানুষ। তাই তিনি বাউল প্রেমে উদ্ভোদ্ধ হয়ে ছুটে এসেছেন এই লোক উৎসবে। তিনি শাহ আব্দুল করিমকে একজন আধ্যাতিক সাধক ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার গুনী মানুষ বলে আখ্যায়িত করেন এবং উজানধল গ্রামে বাউলের বাড়িতে আসা যাওয়ার যে রাস্তাটি তা আরো প্রশস্থ করতে সরকার ও জেলা প্রশাসনের প্রতি আহবান জানান।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোঃ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী, বাউল স¤্রাট শাহ আব্দুল করিম একজন ক্ষনজন্মা গুনী মানুষ ছিলেন। তার বাড়িতে একটি সঙ্গীতালয় প্রতিষ্ঠার জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রনালয়ে ইতিমধ্যে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে এবং রাস্তাঘাটসহ এখানে ভক্তদের আসা যাওয়া এবং থাকার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনা করবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।