মোঃ আসলাম আলী আঙ্গুর-চিরিরবন্দর ( দিনাজপুর ) থেকে :-
চিরিরবন্দরে এবার ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এই উপজেলায় ভুট্টার আবাদ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি মৌসুমে যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই এখন ভুট্টার গাছের সবুজের সমারোহ। মাঠ জুড়ে ঝিলমিল করে বাতাসে দোলছে ভুট্টার সবুজ পাতা। সহজ চাষ পদ্ধতি , পোকার আক্রমণ রোগবালাই কম হওয়া, কম সেচ , বাজারে ভালো চাহিদা থাকায়, কম খরচে বেশী মুনফা অর্জন করায় দিন দিন ভুট্টা চাষের বেশ জনপ্রিয়তা হয়ে উঠছে । বিগত বছর গুলোর চেয়ে এবছর কৃষকরা ভুট্টার চাষ করেছেন বেশি। অনুকুল আবহাওয়া ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিতে কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হওয়ায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের আশা করছেন স্থানীয় কৃষকরা।
এদিকে উপজেলায় অধিকাংশ প্রান্তিক কৃষকরা গত কয়েক বছর ধরে ভুট্টার আবাদ করছেন বলে জানায়। বর্তমানে আটার বিকল্প ও গো খাদ্য হিসেবে ভুট্টা ব্যাপক হারে ব্যবহার হচ্ছে। তাছাড়া পোল্ট্রি শিল্পের জন্যও ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। বিঘা প্রতি ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা খরচ করে কৃষকরা ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকার ভুট্টা বিক্রি করেন। চলতি মৌসুমে জমিতে ফলনের আকৃতি ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে ।
জানা গেছে , চিরিরবন্দর উপজেলায় ১২ টি ইউনিয়নে কম বেশি করে প্রতিটি ইউনিয়নে ভুট্টার চাষ হয়েছে। চারদিকে সাড়ি সাড়ি হয়ে গাছগুলো দাঁড়িয়ে আছে। রয়েছে কিছু সবুজ আবার কিছু বাদামি রঙের। দেখলেই মন জুড়িয়ে যায়। গাছে ঝুলছে ভুট্টার মোচা। ইতিমধ্যে অনেক গাছে ধরছে মোচা । কৃষকেরা কিছু দিন পর মাঠ থেকে ভুট্টা কেটে বাড়িতে নিয়ে আসবেন। সব মিলিয়ে এ উপজেলার কৃষকেরা ভুট্টা নিয়ে এক প্রকার ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষি কর্মকর্তারা ভুট্টার উপকারিতা সম্পর্কে বলেন, ভুট্টায় রয়েছে প্রচুর পরিমান আয়রন। যা রক্তের লোহিত কণার প্রয়োজনীয় খনিজের চাহিদা পূরণ করে, উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি কমায়, রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ রাখে, ভুট্টায় থাকা ফাইটোকেমিক্যাল শরীরে ইন্সুলিনের শোষণ ও নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে।
উপজেলা কৃষি উপ-সহকারী কর্মকর্তা ও কৃষি কর্মকর্তা নিয়মিত মাঠে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে কৃষকেরা জানান। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এই এলাকায় কৃষকরা দিন দিন এখন ভুট্টা চাষে বেশি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। ভুট্টা সাধারণত সেদ্ধ ও পুড়িয়ে খাওয়া যায়। এছাড়া ভুট্টার পাতা গো-খাদ্য হিসেবে, মোচা গাছ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
কৃষি সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত বেলে ও ভারি এটেল মাটি ছাড়া অন্য সব মাটি ভুট্টা চাষের উপযোগী। তবে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাযুক্ত উর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য সর্বোৎকৃষ্ট।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ আবাদ হয়েছে। সরকার এ চাষে আগ্রহ সৃষ্টি করতে কৃষকদেরকে বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করেন। দিন দিন বাড়ছে এ চাষের আবাদ। তাছাড়া রোগ-বালাই এবং উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বাড়ছে ভুট্টা চাষের আবাদ।
উপজেলার পুনটি ইউনিয়ন গোবিন্দ পুর গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল কুদ্দুস বলেন, তিনি গত দুই বছর ধরে কৃষি অফিসের পরামর্শে নদীর পাড়ে ৪ বিঘা জমিতে ভুট্টা আবাদ করেন। এ চাষের জন্যে কিছু বীজ ও সার বিনা মূল্যে সরকার থেকে পেলেও নিজে বীজ কিনে বেশি করে ভুট্টা চাষ করে বলে জানান। ভুট্টা আবাদ করতে পানি, জমি প্রস্তুত, লাগানোসহ তার ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বর্তমানে জমিতে যে অবস্থা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হচ্ছে কোন দুর্যোগ না ঘটলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে।
নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন কৃষক বলেন, সার বীজসহ অন্যান্য উপকরণ সরকার কর্তৃক পাওয়ায় ২০ শতক জায়গায় তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। বোরো ধান চাষে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় ফলে উৎপাদন খরচই উঠে না। কিন্তু ভুট্টার উৎপাদন খরচ যেমন কম দামও তেমন বেশি থাকে। এ জন্য তিনি গত কয়েক বছল ধরে ভুট্টা আবাদ করছেন।তিনি আরো বলেন এই জমিতে যদি ধান চাষ করা হতো তাহলে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার বেশী ধান পাওয়া যেতো না। স্থানীয় বাজারে প্রতিমণ শুকনো ভুট্টা বিক্রি হয় ১৩শ থেকে ১৫শ টাকায় । ভুট্টা আবাদে খরচ বাদে ১৩-১৫ হাজার টাকা তার আয় হবে জানায়।
আর একজন কৃষক বলেন, তাঁর ১ বিঘা জমিতে এ বছর ভুট্টা চাষ করেন। আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ভুট্টার ভালো ফলন হয়েছে। তিনি আশা করছেন যাবতীয় খরচ বাদে এ চাষ থেকে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা আয় হবে। তিনি আরো বলেন ভুট্টার কোন কিছুই ফেলে দেওয়া হয় না। এর পাতা গরুকে খাওয়ানো হয়, তাছাড়া ডাটা, মোচা লাকড়ি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উপজেলার পুনটি ইউনিয়নের গোবিন্দপুর ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ ওবায়দুল্লাহ বলেন, এলাকার কৃষকরা যাতে ভুট্টা যথাযথভাবে উৎপাদন করতে পারে এবং স্বল্প খরচে উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা উৎপাদন করতে পারে এ জন্য আমরা প্রতিনিয়ত কৃষকদের নিকট গিয়ে পরামর্শ দিচ্ছি। বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ভুট্টাকে মুক্ত রাখতেও পরিমিত পরিমাণ ওষুধ প্রয়োগের পরামর্শ দিয়ে থাকি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জোহরা সুলতানা শারমিন বলেন, সব ধরনের ফসল উৎপাদনে আমরা কৃষকদের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করছি। যাতে করে কৃষকরা সহজভাবে কৃষি উপকরণ পেয়ে ফলন বৃদ্ধি করতে পারে। বিশেষ করে ভূট্টা চাষ করতে আগ্রহী কৃষকদের মাঝে উন্নত মানের ভূট্টার বীজ ও সার বিনামূল্যে দেয়া হয়। মাঠে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছি। গত বছরের চেয়ে এবার লাভজনক ভুট্টা চাষাবাদ কিছুটা বেশি হয়েছে। আবহাওয়া অনূকুলে থাকায় এবার ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।